কাজ হয়নি কিছু। ডাবগ্রামে পড়েই আছে জমি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
দুই উন্নয়ন পর্ষদের থেকে জমি কিনে রাজ্যে একশো শয্যার দু’টি হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা ছিল কেন্দ্রের ইএসআই কর্পোরেশনের। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের (এসজেডিএ) কাছ থেকে জলপাইগুড়ির ডাবগ্রামে এবং হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের কাছ থেকে রায়রার চকে সেই জমি কেনার পরে আড়াই বছর কেটেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই দুই জায়গায় হাসপাতালের একটি ইটও গাঁথা হয়নি। কেন কাজ এগোয়নি, তা নিয়ে রাজ্য বনাম কেন্দ্রে চলছে চাপান-উতোর। প্রত্যাশিত চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে স্থানীয় ইএসআই ডিসপেন্সারিগুলিতে শ্রমিকেরা ভাঙচুর চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
ডাবগ্রামে ২০১২ সালে এসজেডিএ-র কাছ থেকে হাসপাতালের জন্য পাঁচ একর জমি কেনে ইএসআই কর্পোরেশন। একর প্রতি দাম ধরা হয় ৬৩ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা। প্রশাসন সূত্রের খবর, ইএসআই কর্পোরেশন টাকা মেটায় ২০১৩ সালের অগস্টে। তার পরেও হাসপাতাল হল না কেন? ইএসআই কর্পোরেশনের অভিযোগ, জমির দখল নিতে গিয়ে তারা দেখে, ওই পাঁচ একরের মধ্যে ১২ কাঠা জমি বিতর্কিত। ২০০৮ থেকে ওই ১২ কাঠা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলছে। অথচ, বিষয়টি এসজেডিএ প্রথম থেকেই চেপে গিয়েছে।
কর্পোরেশনের পূর্বাঞ্চলের সিনিয়ার স্টেট মেডিক্যাল কমিশনার সমীর চৌধুরী জানান, সেই পরিস্থিতিতে তাঁদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। সমীরবাবুর বক্তব্য, “এসজেডিএ কখনও বলছে, নতুন জমি দেবে, কখনও বলছে, ওই ১২ কাঠা বাদ দিয়ে হাসপাতাল করতে। সেটা রাতারাতি সম্ভব নয়। সরকারি কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে। আবার নতুন করে সব পরিকল্পনা করতে হবে।”
কেন ওই ১২ কাঠা জমি নিয়ে মামলার কথা প্রথমে জানায়নি এসজেডিএ? প্রশ্ন শুনে উত্তেজিত গলায় সংস্থার চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “চেপে যাওয়ার কিছু নেই। ওই জমি নিয়ে কোর্টের কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। কোথাও বলা নেই যে, জমি বিক্রি করা যাবে না। তাই জানানোর দরকার মনে করিনি।” তাঁর সেংযাজন, “ইএসআই ওই ১২ কাঠা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে কেন? ওটা তো এককোণে থাকা অল্প জমি। বাকি যে জমি রয়েছে সেখানে কেন হাসপাতাল গড়া হচ্ছে না?”
কেন্দ্র-রাজ্যের এই টানাপোড়েনে শিলিগুড়ি এলাকার প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিকদের দুর্ভোগ কমছে না। চিকিৎসা পরিষেবার জন্য তাঁদের বেতন থেকে মাসে-মাসে টাকা কাটা হচ্ছে, কিন্তু দরকারে শ্রমিকেরা কাছাকাছি ইএসআই হাসপাতাল পাচ্ছেন না। স্থানীয় সূত্রের খবর, যে দু’টি ইএসআই ডিসপেন্সারি এলাকায় রয়েছে তাতে উন্নতমানের পরিষেবা মেলে না। ফলে, শ্রমিকদের আসতে হচ্ছে কলকাতায়।
চা-শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা অলক চক্রবর্তী বলেন, “কলকাতায় যাওয়ার ব্যবস্থা করতে না পারলে বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকাটাই রীতি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ, সরকারি হাসপাতালে বেড মেলে না আর বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা চিকিৎসা চালানোর ক্ষমতা শ্রমিকদের নেই।”
একই সমস্যায় পড়েছেন হলদিয়া অঞ্চলের প্রায় ৩৮ হাজার শ্রমিকও। দুর্গাচকে ইএসআই পরিচালিত একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও সেখানে কোনও পরিষেবা পান না শ্রমিকরা। ২০১২ সালের অগস্টে এইচডিএ-র কাছ থেকে রায়রার চকে ৫.৮১ একর জমি কেনে ইএসআই। সেখানে এখনও হাসপাতাল না গড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দিল্লির ইএসআইয়ের এক শীর্ষ-কর্তা দাবি করেন, এইচডিএ প্রথমে তাদের যে সব জমি দেখিয়েছিল, সেগুলি জলা জায়গা। তাতে রাস্তা তৈরি করার সমস্যা হতো। অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকত না। ওই কর্তার কথায়, “ভাল জমি দেখাতে ওরা অনেক সময় নেয়।”
ইএসআইয়ের অভিযোগ মানতে নারাজ এইচডিএ-র চেয়ারম্যান সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, “ভাল জমি দেখানোয় দেরি করিনি। ওরা নিজেরা হাসপাতাল বানাতে পারছে না বলে আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।” এই জমি দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর আমলে। পূর্ণেন্দুবাবুরও অভিযোগ, “রাজ্যে আসলে হাসপাতাল বানানোর ইচ্ছাই নেই কেন্দ্রের।”
অভিযোগ মানেননি ইএসআইয়ের দিল্লির ওই কর্তা। তিনি দাবি করেন, “হলদিয়ার জমি রেজিস্ট্রেশনের সময় টাকা নিয়ে একটা সমস্যা হয়। তবে কিছু দিন আগে টাকা অনুমোদন হয়েছে। আশা করছি, এ বার হাসপাতালের কাজ শুরু করা যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy