Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতালে ভর্তি রবিউলের পাশেই দিন কাটছে ওজিয়ার

হাসপাতালের শিশুবিভাগে শয্যায় শুয়ে থাকা ৩ বছরের রবিউল আলমের শরীরের হাড়পাঁজরা গোনা যায়। তার পাশে বসে খোদাকে ডাকছেন মা ওজিয়া বিবি। আট দিন আইসিইউ-তে থাকার পরে সোমবার তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে শিশু বিভাগে সাধারণ শয্যায়। অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত ওই শিশুকে সুস্থ করতে তার পরিবারের ঘটিবাটি বিক্রির জোগাড়।

অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত রবিউলের সঙ্গে মা ওজিয়া বিবি। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে তোলা নিজস্ব চিত্র।

অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত রবিউলের সঙ্গে মা ওজিয়া বিবি। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে তোলা নিজস্ব চিত্র।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৪ ০৩:০৬
Share: Save:

হাসপাতালের শিশুবিভাগে শয্যায় শুয়ে থাকা ৩ বছরের রবিউল আলমের শরীরের হাড়পাঁজরা গোনা যায়। তার পাশে বসে খোদাকে ডাকছেন মা ওজিয়া বিবি। আট দিন আইসিইউ-তে থাকার পরে সোমবার তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে শিশু বিভাগে সাধারণ শয্যায়। অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত ওই শিশুকে সুস্থ করতে তার পরিবারের ঘটিবাটি বিক্রির জোগাড়। তাও ছেলে সুস্থ হবে কি না, তা নিয়েই মায়ের মনে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। শয্যার পাশে বসে তাই তিনি কখনও কাঁদছেন। কখনও মাথায় হাত বোলাচ্ছেন।

রায়গঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা ওজিয়া বিবি। স্বামী নুরুল ইসলাম দিনমজুর। ছোট ৩ মেয়ে এবং এই এক ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতে মাঠেঘাটে খেত মজুরের কাজ করতে হয় ওজিয়াকেও। ১ জুলাই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রবিউল অচৈতন্য হয়ে যায়। তখন বাড়িতে ছিলেন না নুরুলবাবু। প্রতিবেশী এক বাসিন্দার বাইকে করে রবিউলকে নিয়ে যান ইটাহার হাসপাতালে। সেখানে দু’দিন ভর্তি থাকার পর তাকে রেফার করে দেওয়া হয় রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে। ৩ দিন ধরে চিকিৎসা চলে সেখানে। বাইরে থেকে অন্তত হাজার তিনেক টাকার ওষুধ কিনে দিতে হয়েছে পরিবাারের লোককে। তবে চিকিৎসকেরা কিছু করতে পারেননি। তাঁরা পরামর্শ দেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে। তাতেই বিপাকে পড়ে ওই দিনমজুর পরিবারটি। ছেলে রবিউলের হুঁশ নেই। খেতে পারছে না। কী করে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাবে, তা নিয়েও দুশ্চিন্তা শুরু হয়। বাড়িতে আরও ৩ মেয়ে রয়েছে। শেষে নুরুলবাবু টাকা ধার নেন। বাড়িতে মা বৃদ্ধা টুলু দেবীর কাছে তিন মেয়েকে রেখে ছেলেকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩২০০ টাকা দিয়ে ম্যাটাডর ভাড়া করে এর পর ছেলেকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা। সেই থেকে ওজিয়াবিবির ঠিকানা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সেখানে চিকিৎসকরা রবিউলকে আইসিইউ-তে ভর্তি করেন। ওষুধ পথ্য সবই কিনে দিতে হচ্ছে বাইরে থেকে। এমআরআই-সহ বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে খরচ হয়েছে ৬ হাজার টাকা। তার উপর ওজিয়া এবং তাঁর স্বামীর খাবার খরচ। ওজিয়াবিবি জানান, এখনও পর্যন্ত অন্তত ২৫ হাজার টাকা ধার করে খরচ করেছেন তাঁরা।

শিশু বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মৃদুলা চট্টোপাধ্যায় জানান, অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ রয়েছে রবিউলের। যখন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছিল তখন পরিস্থিতি গুরুতর ছিল। আইসিইউ-তে চিকিৎসার পরে কিছুটা সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, “আশা করছি ধীরে হলেও সে সুস্থ হয়ে উঠবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

encephalitis siliguri soumitra kundu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE