মালদহ মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে ঘুরছে শুয়োর। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
শুয়োরেই নিহিত সমস্যা।
খোদ মুখ্যমন্ত্রী, রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ‘শুয়োর সমস্যা’র কথা স্পষ্ট করে দিয়ে জানিয়ে ছিলেন--রাজ্য জুড়ে শুয়োর হটাও অভিযান হবে।
শিলিগুড়ি-সহ ডুয়ার্স জুড়ে সেই ‘অভিযান’-এর তৎপরতা শুরু হলেও উত্তরের মালদহ এবং বালুরঘাটে অবশ্য শনিবার ধরা পড়েছে উল্টো ছবি।
মালদহ মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে এ দিন সকালেও দেখা গিয়েছে শুয়োরের ‘চাষ’।
অভিযোগ, মালদহ মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত কয়েকজন সাফাই কর্মীরা কলেজ চত্বরেই শুয়োর পালন করছেন। কলেজ ও হাসপাতালের মূল ভবনের পেছনে সাফাই কর্মীদের আবাসন। সেখানেই বহাল তবিয়তে চলছে শুয়োর প্রতিপালন। ফলে ওই হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণের আশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে বলে চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ দানা বেধেছে রোগীর আত্মীয়দের মধ্যেও। হাসপাতাল চত্বরে শুয়োর পালনের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। মেডিক্যাল কলেজ চত্বর থেকে সব শুয়োরকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরেও যদি শুয়োরের মালিকরা নির্দেশ নাম মানেন তবে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীও তা ক্ষোভ আড়াল করেননি। বলছেন, “দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মাটিগাড়া থেকে রামসাই আনার পথে মারা
যায় এই চারটি শুয়োর। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
জলপাইগুড়ি হাসপাতাল
চত্বর। ছবি:সন্দীপ পাল
শুধু মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চত্বরেই নয়, লাগোয়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকায় শুয়োর ধরতে অভিযান চালানোর জন্য স্থানীয় কাউন্সিলর ইংরেজবাজার থানার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। ওই ওয়ার্ডের আরএসপি কাউন্সিলর শিপ্রা রায় বলেন, “আমার ওয়ার্ড থেকে শুয়োর সরানোর জন্য পুলিশকে বলেছি। গোলমালের আশঙ্কাতেই পুলিশের সাহায্য চাওয়া হয়েছে।”
সাফাইকর্মীরা অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। শুয়োর ধরতে অভিযান নিয়ে গড়িমসির অভিযোগ তুলেছেন জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী তথা কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূরের কটাক্ষ, “যখন জেলায় এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ ঘটবে, তখন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কতৃপর্ক্ষের ঘুম ভাঙবে।”
শুয়োর ঘুরছে বালুরঘাটের
খাদিমপুরে। ছবি: অমিত মোহান্ত
মশা তাড়াতে সাফাই কোচবিহারে। ছবি:হিমাংশুরঞ্জন দেব
ছবিটা প্রায় একইরকম দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে। সেখানে শহরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের খাদিমপুর বটতলা এলাকায় পুরসভার সাফাইকর্মীদের আবাসনেই দিব্যি শুয়োরের খামার চলছে বলে অভিযোগ। এ দিকে, শনিবার দুপুরে স্থানীয় যুব মোর্চার কর্মীরা এনসেফ্যালাইটিস নিয়ন্ত্রণে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের সুপারের অফিসে বিক্ষোভ দেখান। যুব মোর্চার সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী অভিযোগ করেন, “একে এই অবস্থা। তায় জেলা হাসপাতালে একাধিক বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় সমস্যা আরও বেড়েছে।”
তবে এ দিন, শিলিগুড়ি ও ডুয়ার্সের অন্য বেশ কয়েকটি এলাকায় শুয়োর হটাও অভিযান শুরু হয়েছে। মাটিগাড়া থেকে পিকআপ ভ্যানে চাপিয়ে ৪টি শুয়োরকে ময়নাগুড়ির রামসাইয়ের কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। তবে, তারা যখন ওই কৃশি খামারে পৌঁছয়, ততক্ষণে চারটি শুয়োরই মারা গিয়েছে। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মত, যেমন তেমন করে সুয়োর অভিযান করলেই চলবে না। শুয়োর নিয়ে আসার সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়িতে শুয়োর নিয়ে আসার সময়ে জল রাখতে হবে বলে তাঁরা জানান। কৃষি খামারে নিয়োগ করতে হবে পশু চিকিৎসকও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy