এমনই অবস্থা হাসপাতাল চত্বরের। —নিজস্ব চিত্র।
এক দিকে বৃহত্তর স্বার্থরক্ষার যুক্তি। অন্য দিকে দৈনন্দিন দুর্ভোগ। এই দুইয়ের জাঁতাকলেই প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অসংখ্য রোগী। ঘটনাস্থল রাজ্যের স্নায়ু চিকিৎসার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র, বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি।
চারপাশে দুমদাম শব্দে কান পাতা দায়। এ দিক ও দিক ছিটকে পড়ছে ইট-পাথরের টুকরো। ধুলোয় ঢাকছে চারপাশ। তারই মধ্যে সার সার স্ট্রেচারে শুয়ে রোগীরা। ওয়ার্ডের ভিতরে, এমনকী অপারেশন থিয়েটরেও ধুলোর পুরু আস্তরণ। নাক-মুখ ঢেকে যাতায়াত করছেন সকলেই। নতুন ভবন তৈরির কাজের জেরেই প্রতিদিন কয়েকশো রোগীর এই ভাবেই হয়রানি চলছে।
বিআইএন কর্তৃপক্ষের যুক্তি, কাজ শেষ হলে শয্যাসংখ্যা বাড়বে। আরও বেশি রোগীকে ঠাঁই দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু সে তো ভবিষ্যতের কথা। যত দিন তা না হচ্ছে, তত দিন রোগীদের এ ভাবেই নরকযন্ত্রণা চলবে? কর্তৃপক্ষের যুক্তি, গোটা একটা হাসপাতালকে তো আর অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলা যাবে না। তা ছাড়া মূল ভবনে ঢোকার মুখের ঠিক পাশেই কাজ চলছে। তাই কিছুটা উপদ্রব চলছে। ভবিষ্যতের ভালর কথা ভেবে এটুকু কষ্ট সহ্য করতেই হবে।
কিন্তু এর জেরে যাঁদের প্রাণান্ত দশা, তাঁরা কি এই যুক্তি মানার মতো অবস্থায় থাকবেন? তার অবশ্য উত্তর মেলেনি।
ভাঙাভাঙির কাজ যেখানে চলছে, তার এক পাশে এমআরআই ইউনিট। উপরের তলায় অপারেশন থিয়েটার। অস্ত্রোপচারের পরে রোগীদের স্ট্রেচারে শুইয়ে এই পথ দিয়েই নিয়ে যাওয়া হয়। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা কিংবা পুরোপুরি সংজ্ঞা হারানো রোগীদের এমআরআইয়ের জন্য অপেক্ষার জায়গাও এটাই। তাই প্রতিদিনই কেউ না কেউ অল্পবিস্তর আহত হচ্ছেন।
নতুন বাড়িটি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে মাস ছয়েক হল। পাঁচতলা বাড়ির কাজ শেষ হতে আরও বছরখানেক লাগার কথা। এরই মধ্যে পরিস্থিতি এমন চরমে উঠেছে যে, ডাক্তারদের একাংশ হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, এ ভাবে চলতে থাকলে যে কোনও দিন বড় ধরনের বিপদ ঘটে যেতে পারে। এমনিতেই আশপাশে জোরালো শব্দ স্নায়ুরোগীদের নানা ধরনের ক্ষতি করে। সেই সঙ্গেই এ ভাবে ভাঙাভাঙি হচ্ছে। তাতে যাতায়াতের পথে রোগীদের আহত হওয়ার ঝুঁকিও ষোলো আনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে বৃদ্ধ বাবার এমআরআই করাতে যাওয়ার সময়ে চাঙর খসে গুরুতর জখম হয়েছেন এক তরুণ। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে উত্তেজনাও ছড়ায়। নিরাপত্তারক্ষীরা এসে কোনও মতে পরিস্থিতি সামাল দেন।
তবে বিআইএন কর্তৃপক্ষের নির্বিকার হাবভাবে তিতিবিরক্ত ডাক্তারদের বড় অংশ। বিআইএন-এর প্রাক্তন অধিকর্তা তথা প্রখ্যাত স্নায়ু চিকিৎসক তৃষিত রায় বলেন, ‘‘নতুন বাড়ি তৈরি করাটা জরুরি, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। কিন্তু টানা এমন জোরালো শব্দ চলতে থাকলে রোগীদের পক্ষে তা খুবই বিপজ্জনক। এখন এমন অনেক আধুনিক প্রক্রিয়া তৈরি হয়েছে যাতে এই ধরনের কাজ শব্দ ছাড়াই করা সম্ভব। সরকার হয়তো টাকার কথা ভেবে সে সব করছে না। কিন্তু যেখানে অজস্র রোগীর স্বার্থ জড়িত, সেখানে অবশ্যই এটা অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ছিল।’’ বিআইএন-এর ডাক্তাররাও জানিয়েছেন, বহু মুমূর্ষু রোগীর রক্তচাপ অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনে এ নিয়ে অভিযোগও জানিয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy