Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পরিকাঠামোর অভাবটাই আসল অসুখ উত্তরবঙ্গে

এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর চাপ রোজ বাড়ছে। কিন্তু সবাইকে উপযুক্ত পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও উত্তরবঙ্গের অন্য নানা হাসপাতালে পরিকাঠামোর গলদেই এই অবস্থা বলে চিকিৎসক ও রোগীর বাড়ির লোকেদের দাবি। বুধবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা অর্জুন রবিদাসকে (৩৭) স্থানাভাবে ভেন্টিলেটরে বা আইসিইউ-তে রাখা সম্ভব হয়নি বলে তাঁর বাড়ির লোকজন দাবি করেছেন।

জ্বরে আক্রান্ত শিশুটির চিকিৎসা চলছে শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

জ্বরে আক্রান্ত শিশুটির চিকিৎসা চলছে শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৯
Share: Save:

এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর চাপ রোজ বাড়ছে। কিন্তু সবাইকে উপযুক্ত পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও উত্তরবঙ্গের অন্য নানা হাসপাতালে পরিকাঠামোর গলদেই এই অবস্থা বলে চিকিৎসক ও রোগীর বাড়ির লোকেদের দাবি। বুধবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা অর্জুন রবিদাসকে (৩৭) স্থানাভাবে ভেন্টিলেটরে বা আইসিইউ-তে রাখা সম্ভব হয়নি বলে তাঁর বাড়ির লোকজন দাবি করেছেন। গত ৭ জুলাই থেকে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮০।

উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতালেও জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ভিড় উপচে পড়ছে। ধূপগুড়ির গ্রামীণ হাসপাতালে এক একটি শয্যায় বেশ কয়েকজন করে জ্বরে আক্রান্ত শিশু ও তাদের মায়েদের রাখতে হয়েছে। কাছাকাছি ফালাকাটা ও ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল ও বীরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালেরও এক অবস্থা। কোনও রোগীর দেহে এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু পাওয়া গেলে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পাঠানো হচ্ছে। পরিকাঠামোর অভাব সেখানেও।

মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, আইসিইউ-তে ১০টি শয্যা রয়েছে, ভেন্টিলেটর রয়েছে ৬টি। শিশু বিভাগে রয়েছে আরও ৩টি। কিন্তু সেই সব ক’টিতেই রোগী রয়েছেন। শয্যা ফাঁকা না হলে সেখানে অন্য রোগীদের নেওয়া যাচ্ছে না। যেমন, উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার বাসিন্দা হাসান ইমামকে আইসিইউ-তে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু হাসানকে মেঝেতেই শুয়ে থাকতে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, “আমরা নিরুপায়।” এই হাসপাতালে ৫৯৯টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু রোগীর সংখ্যা এখন প্রায় বারোশো। মেডিসিন ও শিশু বিভাগে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন অন্তত ৫০ জন। শয্যা না মেলায় তাঁদের অনেককে বারান্দার মেঝেতেও থাকতে হচ্ছে। সেখানে পাখা নেই, বৃষ্টির জলের ছাট আসে। অক্সিজেনের জন্যও আলাদা করে ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।

মায়ের শুশ্রূষা। জলপাইগুড়ির মন্ডলঘাটের রানিরকামাত গ্রামে। ছবি: সন্দীপ পাল।

রোগীর পরিজনের অভিযোগ, ওষুধও নিয়মিত মিলছে না। বাইরে থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। পেশায় কৃষক নলিনীমোহন রায়কে এক সপ্তাহ আগে ভর্তি করানো হয়েছিল। তাঁর ছেলে নিরঞ্জনবাবু বলেন, “ওষুধ কিনতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।” এক্স রে, প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবরেটরি, এমআরআই, সিটি স্ক্যান পরিষেবাও ২৪ ঘণ্টা না মেলায় পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে সময় নষ্ট হচ্ছে।

অনেক জায়গায় আবার জ্বরে অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালেই নিয়ে যেতে পারেননি পরিজনেরা। জলপাইগুড়ির মণ্ডলঘাট এলাকার রানিরকামাত গ্রামে এনসেফ্যালাইটিস উপসর্গ নিয়ে জ্বরে আক্রান্ত মালতী বর্মণ বাড়িতেই রয়েছেন। ছোট ছেলে আর বৃদ্ধা শাশুড়ি ছাড়া বাড়িতে কেউ নেই। মালতীর স্বামী ত্রিপুরা পুলিশে চাকরি করেন। এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ রুখতে দার্জিলিঙের জেলাশাসক পুনীত যাদব সেনাবাহিনীর কাছে মশা মারার জন্য ওষুধ ছড়ানোর যন্ত্র ধার দিতে অনুরোধ করেছেন।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE