Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আল্লাকে বলি, এ ভাবে যেন কেউ না মরে

২০১৩-র ২৪ এপ্রিল। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল রানা প্লাজা। ঢাকা শহরে সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এই বহুতলটিতে একটি কাপড়ের কারখানা ছিল। আট তলা কংক্রিটে চাপা পড়ে মারা যান সেখানকার প্রায় ১২০০ কর্মী। আহত হন আড়াই হাজারেরও বেশি। সেই দুর্ঘটনার এক বছর পরে কেমন আছেন রেবেকা, শরমিন, রেশমারা? দু’দিন ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়েছিলেন মোসাম্মত রেবেকা খাতুন। বিম পড়ে দু’টো পা-ই থেঁতলে গিয়েছিল। সে দিন মা-সহ পরিবারের পাঁচ জনকে হারিয়েছিলেন রেবেকা। রেবেকার কথায়, “সে দিনের কথা মনে পড়লে এখনও শিউরে উঠি। সকালে কাজে যাওয়ার আগে কিছু খাইনি।

রেশমা বেগম।  ছবি: এএফপি।

রেশমা বেগম। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
ঢাকা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৪৫
Share: Save:

২০১৩-র ২৪ এপ্রিল। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল রানা প্লাজা। ঢাকা শহরে সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এই বহুতলটিতে একটি কাপড়ের কারখানা ছিল। আট তলা কংক্রিটে চাপা পড়ে মারা যান সেখানকার প্রায় ১২০০ কর্মী। আহত হন আড়াই হাজারেরও বেশি। সেই দুর্ঘটনার এক বছর পরে কেমন আছেন রেবেকা, শরমিন, রেশমারা?

দু’দিন ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়েছিলেন মোসাম্মত রেবেকা খাতুন। বিম পড়ে দু’টো পা-ই থেঁতলে গিয়েছিল। সে দিন মা-সহ পরিবারের পাঁচ জনকে হারিয়েছিলেন রেবেকা।

রেবেকার কথায়, “সে দিনের কথা মনে পড়লে এখনও শিউরে উঠি। সকালে কাজে যাওয়ার আগে কিছু খাইনি। তাই মা বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে এসেছিল। মাকেও হারালাম। নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারব না।” তিনি নিজে কেমন আছেন? বললেন, “শরীরের নীচের দিকটা খুব ভারী লাগে। উঠতে পারি না।” রেবেকার একটা পা গোড়ালি থেকে আর একটা পুরোটাই বাদ গিয়েছে। সব কিছুর জন্যই এখন স্বামীর উপর নির্ভর করতে হয় তাঁকে। বাথরুমেও নিজে যেতে পারেন না। ব্যথায় ছটফট করতে করতে বললেন, “সারা দিন কুঁড়ে ঘরে একা থাকি। হঠাৎ যদি ঘরে আগুন লাগে, পালাতেও তো পারব না!”

কয়েক ঘণ্টা কংক্রিটের তলায় চাপা পড়েছিলেন কারখানার আর এক কর্মী শ্রাবণ আহমেদ জাহাঙ্গির। আর কাপড়ের কারখানায় কখনও কাজ করতে চান না তিনি। কারখানার মেশিনের শব্দেই ভয় লাগে তাঁর। একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে কুড়ি হাজার টাকা সাহায্য পেয়েছিলেন। তাই দিয়ে বাড়িতেই ছোট্ট একটা চায়ের দোকান খুলেছেন। কিন্তু খদ্দের বিশেষ জোটে না।

নিজে সে দিন বেঁচে গেলেও দুর্ঘটনায় মাকে হারিয়েছেন শরমিন আখতার। দশ মাস ধরে মাকে খুঁজেছেন। হাসপাতাল, সরকারি দফতর কিছুই বাদ দেননি। দু’মাস আগে জানতে পারেন, মা আর বেঁচে নেই। অন্য চাকরির খোঁজে কিছু দিন ঘুরেছেন। কিছু না-জোটায় শেষ পর্যন্ত কাজ নিতে হয় একটি কাপড়ের কারখানাতেই। শরমিন বললেন, “মেশিনের শব্দে এখনও আতঙ্ক লাগে। ইচ্ছে করে, কারখানা ছেড়ে চলে যাই। কিন্তু খাব কী?” মাঝেমধ্যেই স্বপ্ন দেখেন, বহুতল ভেঙে পড়ছে। তাঁর প্রশ্ন, “ঈশ্বর এক বার আমাকে বাঁচিয়েছেন। আর কত বার বাঁচাবেন তিনি?”

দুঃস্বপ্নের কালো মেঘের মধ্যে এক চিলতে রোদের মতো উজ্জ্বল রেশমার কাহিনি। উনিশ বছরের রেশমা বেগম। টানা ১৭ দিন ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে ছিলেন তিনি। বেঁচে ফেরার পরে উঠে আসেন সংবাদপত্রের শিরোনামে। হাসপাতালের বিছানা থেকেই সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন “স্বপ্নেও ভাবিনি, আবার পৃথিবীর আলো দেখতে পাবো।” অনিদ্রা আর আতঙ্ক এখনও তাড়া করে বেড়ায় তাঁকে। তবু নতুন করে জীবন শুরু করতে পেরেছেন রেশমা। গত ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে করেছেন। নতুন চাকরিও পেয়েছেন একটা। আগে নাস্তিক ছিলেন। মৃত্যুর গ্রাস থেকে ফিরে এসে এখন নিয়মিত প্রার্থনায় বসেন। “আল্লার কাছে একটাই দোয়া চাই। আমাদের দেশের কারখানাগুলোর যেন একটু উন্নতি হয়। এ ভাবে যেন মানুষকে আর না মরতে হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rana plaza bangladesh collapses
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE