শরণার্থী-সঙ্কট ঠেকাতে ভেঙে পড়েছে ইউরোপের সীমান্ত-বিধি! মন্তব্য স্লোভাকিয়ার বিদেশমন্ত্রীর। আর জার্মানির এক নেতার দাবি, উদ্বাস্তু-সমস্যার সমাধান না বেরোলে মানুষের চাপে ইউরোপীয় ইউনিয়নই ভেঙে পড়বে। আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়া থেকে ইউরোপে আশ্রয়ের খোঁজে আসা শরণার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রায় প্রতিটি দেশ। এত মানুষকে কী ভাবে জায়গা দেওয়া সম্ভব— সেই প্রশ্নে উত্তাল গোটা ইউরোপ।
একটি মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জানা গিয়েছে, হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে লাগাতার বিক্ষোভ, জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার মতো দেশে সীমান্ত-বিধি জারি, তুরস্কের সৈকতে এক শিশুর নিথর দেহ মুখ থুবড়ে পড়ে থাকার ছবি নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরুর পর শরণার্থী সমস্যা সমাধানে জরুরিকালীন পরিকল্পনা ঘোষণা করল ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
স্থির হয়েছে, অর্থনৈতিক অবস্থা ও জনসংখ্যা বিচার করে প্রায় এক লক্ষ ৬০ হাজার শরণার্থীকে অশ্রয় দিতে রাজি হয়েছে ইউরোপেরই বিভিন্ন দেশ। যেমন, ৩৫ হাজার মানুষকে দেশে জায়গা দিতে রাজি জার্মানি। ২৬ হাজার শরণার্থীকে নিতে সম্মত ফ্রান্স। হাজার ষোলো শরণার্থীকে পাঠানো হবে স্পেনে। বুলগেরিয়া ও রোমানিয়ার মতো দরিদ্র দেশ শরণার্থীদের জায়গা দিতে সম্মত হলেও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই প্রকল্পে সামিল হতে অস্বীকার করেছে ব্রিটেন। যদিও ব্রিটেনই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে ধনী দেশ।
গত তিন দিন হাঙ্গেরিতে লাগাতার বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন শরণার্থীরা। বুদাপেস্ট হয়ে জার্মানি যাওয়ার ট্রেনের টিকিট কাটলেও তাদের স্টেশনে ঢুকতেই দিচ্ছে না পুলিশ। পাসপোর্ট এবং শেঙ্গেন ভিসা দেখে তবেই ভিনদেশের ট্রেনে যাত্রীদের তোলা হচ্ছে। আর শরণার্থীদের ক্ষেত্রে প্রথমে তাঁদের আশ্রয় শিবিরে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যা তৈরি হতে অন্তত কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। যদিও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর শরণার্থী ইতিমধ্যেই জার্মানি এবং অস্ট্রিয়ায় পৌঁছেছেন। কাতারে কাতারে শরণার্থীকে এ ভাবে দেশে ঢুকতে দেখে উদ্বিগ্ন জার্মানির প্রশাসন। সমস্যা চরমে পৌঁছেছে কাল রাতে। তথ্য বলছে, প্রতি ঘণ্টায় গড়ে দেড়শো জন শরণার্থী জার্মানি পৌঁছেছেন কাল রাতে। এই পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি সীমান্ত বিধি কার্যকর করার আর্জি জানায় জার্মানি। প্রসঙ্গত, ইউরোপের ২৬টি দেশে কোনও সীমান্ত-বিধি ছাড়াই ট্রেনে ভ্রমণ করা যায়। তবে কাল রাতে জার্মানি যাওয়ার ট্রেনের ক্ষেত্রে সাময়িক ভাবে সীমান্ত বিধি কার্যকর করা হয়। অর্থাৎ, বৈধ পাসপোর্ট এবং শেঙ্গেন ভিসা ছাড়া আন্তঃদেশীয় ট্রেনে যাতায়াত বন্ধ
করে দেওয়া হয়। শরণার্থীদের আশ্রয় না দেওয়ার অভিযোগ তুলে ব্রিটেন-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে ভর্ৎসনা করতেও ছাড়েনি জার্মান সরকারের প্রতিনিধিরা।
সিরিয়া থেকে আসা মানুষদের দেশে ফেরানো সম্ভব নয় বলে জানালেও শরণার্থী-সঙ্কট মোকাবিলা প্রশ্নে এক মত হতে পারেননি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। তথ্য বলছে, এখনও ৫৪ হাজার শরণার্থী রয়েছেন হাঙ্গেরিতে। গ্রিসে ৬৭ হাজার এবং ৪০ হাজার মানুষ এখনও রয়েছেন ইতালিতে।
বুদাপেস্টের পরিস্থিতি অবশ্য আজও স্বাভাবিক হয়নি। ভিনদেশের ট্রেন থেকে ভিসা ও পাসপোর্ট না দেখে নামতে দেওয়া হচ্ছে না কাউকে। এমনকী, খাবার বা পানীয় জল ছাড়াই ট্রেনের কামরায় শরণার্থীদের থাকতে বাধ্য করছে পুলিশ। হাঙ্গেরি থেকে স্লোভাকিয়া, বার্লিন, মিউনিখ, ভিয়েনা যাওয়ার রাতের ট্রেনগুলি ইতিমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে। যদিও হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান বলছেন, তাঁর পুলিশ নিয়ম পালন করছে শুধু।
পুলিশ পার্মানেন্ট মার্কার দিয়ে তাঁদের গায়ে নম্বর লিখে জোর করে আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন শরণার্থীরা।
তবে সিরিয়া থেকে আসা আলি আল-তাই বলেন, ‘‘স্টেশন থেকে চলে যাওয়াই ভাল। অন্তত আশাটুকু থাকে। আমি ছ’দিন ধরে খাবার, জল ছাড়াই স্টেশনের সামনে রয়েছি। আর পারছি না। আমাদের মরে যাওয়াই বোধহয় ভাল।’’
দ্বীপ কিনে বসতি
শরণার্থী সঙ্কট মোকাবিলায় অভিনব প্রস্তাব দিয়েছেন মিশরের ধনকুবের নজিব সাওয়িরিস। তিনি গ্রিস কিংবা ইতালির থেকে একটি দ্বীপ কিনতে চাইছেন। সিরিয়া থেকে আসা উদ্বাস্তুদের বসতি স্থাপনের জন্য সেখানেই যাবতীয় ব্যবস্থা করতে চান তিনি। আরব দুনিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ও মোবাইল ফোনের পরিষেবা দিতে কাজ করে থাকে নজিবের সংস্থা। তিনি জানান, দ্বীপ কিনতে চেয়ে দু’দেশের সরকারকে প্রস্তাব দেবেন। তা পাওয়া গেলে শরণার্থীদের জন্য বসতি ও পরিকাঠামো গড়ে তুলবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy