Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

‘গুগল কার’-এর সামনে বিপত্তি ‘বিশৃঙ্খল’ মানুষ

রাস্তায় চালক-বিহীন গাড়ি নামানোর স্বপ্নটা গুগল-এর আর কিছুতেই পূর্ণ হচ্ছে না! একের পর এক দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েই চলেছে গুগল-এর এই স্বয়ংক্রিয় সাধের গাড়ি। বিক্ষুব্ধ গুগল-এর তাই দাবি, দোষটা অন্য চালকদের, চালক-বিহীন গাড়ির নয়!

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৩:১৪
Share: Save:

রাস্তায় চালক-বিহীন গাড়ি নামানোর স্বপ্নটা গুগল-এর আর কিছুতেই পূর্ণ হচ্ছে না! একের পর এক দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েই চলেছে গুগল-এর এই স্বয়ংক্রিয় সাধের গাড়ি। বিক্ষুব্ধ গুগল-এর তাই দাবি, দোষটা অন্য চালকদের, চালক-বিহীন গাড়ির নয়!

গত মাসেই যেমন এক পথচারীকে রাস্তা ছেড়ে দিতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে ‘গুগল কার’। স্বয়ংক্রিয় যান দিব্যি যাচ্ছিল তার গতিতে, এমন সময়ে সামনে এলেন এক পথচারী। তিনি রাস্তা পেরিয়ে যেতে চান উল্টো দিকে। এই পর্যন্ত ঠিকঠাক ছিল সব কিছুই। স্বয়ংক্রিয় গাড়ি ব্রেক কষে পথ ছেড়ে দিল ভদ্রলোককে, তিনিও নির্ঝঞ্ঝাটে পেরিয়ে গেলেন পথ। বিপত্তিটা ঘটল ঠিক তার পরেই। এগিয়ে যাওয়ারও সময় পেল না ‘গুগল কার’। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পিছন দিক থেকে আসা এক সেডান গাড়ির চালক ঠুকে দিলেন গুগলের সাধের গাড়িকে। কারণ, গুগলের গাড়ি ট্র্যাফিকের রুল বুক মেনে চলে, মানুষ-চালক তো আর নয়!

গুগল তাই জোর গলায় বার বার বলছে, দোষ তাদের নয়। তাদের গাড়ি ট্র্যাফিকের সব নিয়ম-কানুন মেনেই চলে। এখন সমস্যা হল, এই নিয়ম-কানুনে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে গিয়েই দুর্ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছে ‘গুগল কার’। ঠিক যেমনটা ঘটেছিল ২০০৯ সালের টেস্ট ড্রাইভের সময়ে। লাল আলো জ্বলার পর অন্য সব গাড়ির সঙ্গে ‘গুগল কার’-ও দাঁড়িয়ে ছিল জেব্রা লাইনের মুখে। যে-ই না জ্বলে উঠল সবুজ আলো, সমস্যায় পড়ল স্বয়ংক্রিয় গাড়ি। পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য গাড়িরা আগে যাবে বলে ঠেলাঠেলি করে, ধাক্কা দিয়ে প্রায় পঙ্গু করে দিল গুগল রোবটকে!

স্বয়ংক্রিয় গাড়ি নিয়ে সমীক্ষাও অবশ্য আঙুল তুলছে মানুষের স্বভাবের দিকেই। সেই গবেষণা বলছে, মানুষের পক্ষে তো আর যন্ত্রমানবের মতো নিখুঁত এবং নির্ভুল হওয়া সম্ভব নয়। তাই মানবিক প্রবৃত্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাই প্রতিযোগিতাতেও পিছিয়ে পড়ছে তারা।

একই কথা শোনা যাচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বয়ংক্রিয় যানবিদ ডোনাল্ড নর্ম্যানের দিকে। নর্ম্যানের বক্তব্য, “গুগল কার নিয়ে সমস্যা একটাই— এটা বড্ড বেশি নিরাপদ আর বড্ড বেশি নিয়ম মেনে চলে! যদি পরিস্থিতি বুঝে মানুষের মতো গুগল যন্ত্রমানব আক্রমণাত্মক পদ্ধতি অবলম্বন করে, তাহলেই হয়ত এই সমস্যার সুরাহা হতে পারে!”

অবশ্য, ‘গুগল কার’ এত সমস্যার মুখোমুখি না হলে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর হতে পারত। একেই তো এই গাড়ি পরিবেশ-বান্ধব! তার উপর ট্র্যাফিক নিয়ম মেনে চলে বলে এই গাড়ির ধাক্কায় পথচারীর মৃত্যুর সংখ্যাও প্রায় শূন্যতে এসে দাঁড়াত বলে গবেষকদের বিশ্বাস। কিন্তু, তা আর হচ্ছে কই! এই গাড়ি নিয়ে নানা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে— তার সবকটাই প্রায় নিরাপত্তা-সংক্রান্ত! প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে নিন্দুকেরা, মাঝরাস্তায় খারাপ হয়ে গেলে তখন এই গাড়ি সারাবেন কী করে? আর পাঁচটা গ্যারাজে তো আর এই গাড়ির মেরামতি করাতে পারবেন না! বা, কেউ হয়ত হ্যাক করল গুগল-এর অ্যাকাউন্ট! তখন কি আর এই গাড়িকে নিরাপদ বলা যাবে? তখন তো সে হ্যাকারের মর্জিমাফিক যাত্রীকে নিয়ে যাবে গন্তব্যে। কিডন্যাপিং-এর কাজটাও হয়ে যাবে অনেক সোজা!

আপাতত যদিও এই সব কূটকচালি নিয়ে মাথা ঘামাতে মোটেও রাজি নয় গুগল। সংস্থাটির মাথাব্যথা কেবল একটা জায়গাতেই— কী করে যন্ত্রমানবের মধ্যে কিছুটা হলেও ইনস্টল করা যায় মানবিক প্রবৃত্তি, যাতে রাস্তায় মানুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে পারে এই গাড়ি!

না কি অপেক্ষা করতে হবে সেই কল্প সময়ের জন্য, যখন মানুষ আর নয়, রাস্তায় চলবে শুধুই স্বয়ংক্রিয় গাড়ি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE