সেনার বিরুদ্ধে হামলা জারি থাকুক। কিন্তু তা বলে নিষ্পাপ স্কুলপড়ুয়ারা কেন তালিবানি আক্রমণের লক্ষ্য হবে? কোনও মানবাধিকার সংগঠন নয়, রবিবার এই প্রশ্ন তুলল জঙ্গি সংগঠন আল-কায়দার দক্ষিণ এশিয়া শাখার প্রধান ওসামা মেহমুদ। তার কথায়, “আমেরিকা ও তার তাবেদার শাসক ও সেনার বিরুদ্ধে আমরা যে যুদ্ধ শুরু করেছি, শিশু ও মহিলারা কখনওই তার বলি হতে পারেন না।” এই মন্তব্যে মোটেও কান দিচ্ছে না পাক প্রশাসন। এ দিন আরও চার জঙ্গিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে তারা।
অন্য দিকে, ইসলামাবাদে জঙ্গি-কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে অন্তত ৩০০ জনকে গ্রেফতার করেছে পাক সেনাবাহিনী। আসলে মঙ্গলবার পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে তালিবানি হামলার পর পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানের মাটি থেকে সন্ত্রাসবাদকে সমূলে খতম করা হবে। সেই লক্ষ্যে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে তালিবান-বিরোধী অভিযানের গতি বাড়িয়েছে পাক সেনা। পাশাপাশি শুরু হয়েছে জঙ্গি কার্যকলাপে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের দ্রুত ফাঁসিতে ঝোলানোর কাজ। এ দিন আরও চার জঙ্গিকে পঞ্জাবের ফয়জলাবাদ জেলে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তাদের নাম জুবেইর আহমেদ, রশিদ কুরেশি, গুলাম সরওয়ার ভাট্টি ও আদতে রুশ নাগরিক অখলখ আহমেদ। প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফের উপর হামলা চালানোর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল পাঁচ জন। তাদের মধ্যে অন্যতম আরসাদ মেহমুদের মৃত্যুদণ্ড দু’দিন আগেই কার্যকর করা হয়েছে। বাকি ৪ জনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হল এ দিন।
এতেই শেষ নয়। লাহৌরের কোট লাখপত জেলে আরও চার জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ফাঁসি হতে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। শুক্রবারই আরও দুই জঙ্গির ফাঁসির পরোয়ানা সই করেছিল এক সন্ত্রাসদমন আদালত। সূত্রের খবর, আগামী মঙ্গলবার তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। সব মিলিয়ে পাকিস্তান জুড়ে দোষী সাব্যস্ত জঙ্গিদের ফাঁসির প্রক্রিয়া নিয়ে তোড়জোড় চলছে। শরিফ নিজে এ দিন এক চিনা প্রতিনিধি দলের সামনে ফের ঘোষণা করেছেন, যে কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীই পাক সেনা অভিযানের লক্ষ্য।
এই বর্ধিত তৎপরতার জেরে ফের দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে আঁচ করে জায়গায় জায়গায় নিরাপত্তা বাড়িয়েছে সেনাবাহিনী। এর সঙ্গেই শুরু হয়েছে ব্যাপক ধরপাকড়। গত কাল রাজধানী ইসলামাবাদে জঙ্গি সন্দেহে ৩০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সবের পিছনে উদ্দেশ্য একটাই। সন্ত্রাসবাদীদের কড়া বার্তা দেওয়া। শতাধিক স্কুলপড়ুয়ার মৃত্যু যে এত সহজে মেনে নেওয়া হবে না, তা বুঝিয়ে দিতে রীতিমতো তৎপর পাকিস্তান।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মঙ্গলবারের হামলায় সায় নেই আল-কায়দারও। রবিবার ওই জঙ্গি সংগঠনের দক্ষিণ এশিয়া শাখার প্রধান মেহমুদ একটি চার পাতার ই-মেলে জানিয়েছে, পেশোয়ারের ঘটনায় তারাও গভীর ভাবে শোকাহত। মেহমুদের কথায়, “পাক সেনার অপরাধ ও নৃশংসতা সীমা ছাড়িয়েছে। এ-ও সত্যি যে আমেরিকার দাসত্ব করার নিরিখে এই সেনাবাহিনী সবার উপরে...কিন্তু তার মানে এই নয় যে অত্যাচারিত মুসলিমদের উপর বদলা নিতে হবে।” তাদের কথায়, পাক সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণ চলুক। তবে তা বলে স্কুলছাত্রদের উপর হামলা মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়।
কিছুটা এই মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এ দিন ফের আফগানিস্তানে একটি চেকপয়েন্টে হামলা চালায় তালিবান। তাতে সাত জন পুলিশের মৃত্যু হয়।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আল-কায়দার মন্তব্য থেকে শুরু করে আফগানিস্তানে এই হামলা কোনও কিছুতেই গুরুত্ব দেওয়ার সময় নেই পাক প্রশাসনের। তালিবান-নিকেশ অভিযানের পাশাপাশি এখন তাদের আর এক লক্ষ্য মঙ্গলবারের হামলায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত স্কুলপড়ুয়াদের সুস্থ করে তোলা। সে জন্য বিশেষ ‘কাউন্সেলিং’-এরও আয়োজন করা হয়েছে। সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী, পড়ুয়ারা তো বটেই, তাদের পরিবার ও শিক্ষক-শিক্ষিকা সকলকেই এই মানসিক অভিঘাত থেকে বের করে আনার জন্য বিশেষ ‘থেরাপি সেশন’-এর আয়োজন করা হবে। গোটা বিষয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার(হু) সঙ্গে আলোচনা করে আগামিকাল চূড়ান্ত করা হবে বলে খবর।
এত কিছুর পরেও যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গি-মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠছে, তা বিলক্ষণ জানে প্রশাসন। বিশেষত সম্প্রতি ২৬/১১ কাণ্ডের অন্যতম চক্রী জাকিউর রহমান লকভি জামিন পাওয়ায় ফের মুখ পোড়ে পাকিস্তানের। এ পরিস্থিতিতে সম্মান ফেরাতে ভারতকেই একহাত নিয়েছে পাক প্রশাসন। শরিফের জাতীয় নিরাপত্তা ও বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ জানান, মুম্বই হামলার শুনানি ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু ভারত এই হামলার অন্যতম সাক্ষীদের সঙ্গে পাক বিচারবিভাগীয় কমিশনকে কথা বলতে না দেওয়াতেই ধাক্কা খেয়েছে শুনানির প্রক্রিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy