Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
শিশুমেধ

মুখে পুরে নিলাম টাই, যাতে শব্দ না হয়

গুলি লেগেছে দু’পায়ে। লেডি রিডিং হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই সংবাদ সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছে এই কিশোর। পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলের পড়ুয়া শাহরুখভীষণ যন্ত্রণা। মনে হচ্ছিল প্রাণ বেরিয়ে যাবে। দেখলাম দু’পায়েই হাঁটুর ঠিক নীচে ছোট গর্ত। রক্ত বেরোচ্ছে অঝোরে। আমার ইউনিফর্মও রক্তে ভিজে চুপচুপে। এ অবস্থায় পালাতে পারব না। তখনই শুনতে পেলাম, বন্দুকধারীদের এক জন আর এক জনকে বলছে, “আরে বেঞ্চের নীচে কত ছাত্র লুকিয়েছে! ওদের টেনে বের করে মার!” সব ওলোট-পালট হয়ে গেল। এ বার উপায়? একটা বুদ্ধি খেলল মাথায়। ভাবলাম মড়ার মতো চুপচাপ পড়ে থাকি। যদি ওরা আমাকে মৃত ভেবে আর গুলি না করে, তা হলে এ যাত্রা বেঁচে গেলেও যেতে পারি।

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৩
Share: Save:

ভীষণ যন্ত্রণা। মনে হচ্ছিল প্রাণ বেরিয়ে যাবে। দেখলাম দু’পায়েই হাঁটুর ঠিক নীচে ছোট গর্ত। রক্ত বেরোচ্ছে অঝোরে। আমার ইউনিফর্মও রক্তে ভিজে চুপচুপে। এ অবস্থায় পালাতে পারব না। তখনই শুনতে পেলাম, বন্দুকধারীদের এক জন আর এক জনকে বলছে, “আরে বেঞ্চের নীচে কত ছাত্র লুকিয়েছে! ওদের টেনে বের করে মার!” সব ওলোট-পালট হয়ে গেল। এ বার উপায়? একটা বুদ্ধি খেলল মাথায়। ভাবলাম মড়ার মতো চুপচাপ পড়ে থাকি। যদি ওরা আমাকে মৃত ভেবে আর গুলি না করে, তা হলে এ যাত্রা বেঁচে গেলেও যেতে পারি।

এ দিকে পা দু’টো যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে চিৎকার করে উঠি। কিন্তু তা হলেই সব শেষ। নিজের গোঙানি আটকাতে তাই টাইটাকে গুটিয়ে মুখে দিলাম। যাতে আওয়াজ না বেরোয়। আর মটকা মেরে পড়ে রইলাম বেঞ্চের নীচে। মাঝেমধ্যে আড়চোখ মেলে দেখছি, কয়েক জোড়া কালো বুট আমার আশপাশ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নীচু হয়ে দেখছে আমার সহপাঠীদের। তার পর টেনে বের করে এনে তাদের উপর গুলি চালাচ্ছে। চোখের সামনে দেখছি, ওরা লুটিয়ে পড়ছে। আমার বন্ধুরা লুটিয়ে পড়ছে। আমি তখন কোনও মতে কান্না আটকাচ্ছি। এক সময় এক জোড়া কালো বুট আমার দিকেও এগিয়ে এল। মনে হল যেন যমদূত এগিয়ে আসছে। থরথর করে কাঁপছি তখন। কিন্তু ওদের বুঝতে দিলে চলবে না। তাই কোনও মতে চোখের পাতা বুজে পড়ে রইলাম। আমাকে দেখে কী মনে হল ওদের জানি না। তবে ওরা চলে গেল। ভাবলাম, আতঙ্কের বোধ হয় এই শেষ।

সকালে যখন ক্লাসে প্রথম গুলির আওয়াজ শুনেছিলাম তখনও বুঝিনি এমনটা হতে পারে। কিছু ঠাওর করে ওঠার আগেই কেউ এক জন চেঁচিয়ে বলে, “সবাই বেঞ্চের নীচে ঢুকে যাও।” কিছু না বুঝেই লুকিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই দু’টো গুলি আমার হাঁটুতে ঢুকে গিয়েছে। ফিনকি দিয়ে বেরোতে শুরু করেছে রক্ত।

ওরা আমায় দেখে চলে যাওয়ার পরে কোনও মতে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে এলাম। দাঁড়ানোরও চেষ্টা করেছিলাম। পারলাম না। পড়ে গেলাম। যন্ত্রণা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। আর রক্তপাত? ও দিকে আর তাকাইনি। তখন শুধু একটাই লক্ষ্য। বেঁচে বেরোতে হবে স্কুল থেকে। সে জন্যই হামাগুড়ি দিতে দিতে পাশের ঘরে আসি। আর সেখানেই দেখি, চেয়ারে বসা অবস্থাতেই আমাদের অফিস অ্যাসিস্ট্যান্টকে খুন করেছে জঙ্গিরা। তাঁর দেহের একটা অংশ পুড়ছে। অন্য দিক থেকে রক্ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে। বীভৎস দৃশ্য। অথচ ছুটে যে পালিয়ে যাব উপায় নেই। উঠতে গেলেই তো টাটিয়ে উঠছে পা দু’টো। কোনও মতে দরজার পিছনে লুকোতে চেষ্টা করলাম। তার পরেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। চোখ খুলে দেখি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রয়েছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE