বিজয়িনী নাদিয়া। — নিজস্ব চিত্র
দুধসাদা রং। গায়ে জড়ানো সোনালি ফিতে আর মুক্তোর মালা। মাথায় লাল ফুল। ঠিক যেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের হ্যাট!
রানির টুপিই বটে। খাস ব্রিটেনে সেই ‘টুপি’ বানিয়ে সেরার শিরোপা পেলেন এক বাঙালি কন্যে।
তবে ফ্যাশন দুনিয়ায় নয়। এক ব্রিটিশ টিভি চ্যানেলের বেকিং প্রতিযোগিতায় জিভে জল আনা সুস্বাদু ও সুদৃশ্য কেক বানিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান ছিনিয়ে নিলেন বছর তিরিশের ব্রিটিশ-বাংলাদেশি নাদিয়া জামির হুসেন। সাহেবদের মুলুকেই গো-হারান হারিয়ে দিলেন ইংরেজদের। প্রথম তিনে উঠেছিলেন আরও এক বাঙালি, তমাল রায়।
প্রতিযোগিতার শুরুটা মসৃণ ছিল না নাদিয়ার জন্য। লিডসের বাসিন্দা তিন সন্তানের মা নাদিয়া এক গৃহবধূ। মাথায় হিজাব পরা মেয়েকে কী চোখে দেখবে সবাই, তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন নাদিয়াও।
প্রথম প্রথম ভুলচুকও হতো। কিন্তু ক্রমশ বদলাতে থাকে ছবিটা। ধীরে ধীরে নিখুঁত হতে শুরু করে তাঁর হাতের কাজ। কখনও এমন কেক বানিয়েছেন, যেন ‘মেহেন্দি’ পরিয়ে দিয়েছেন। কখনও আবার চকোলেট আর ক্রিমে পেখম মেলেছে ময়ূর। তবে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে যে এমন চমক দিতে চলেছেন নাদিয়া, তা ভাবেনি কেউ। দুধ-সাদা হ্যাট, মুক্তোর মালা, ঘন নীল শাড়িতে সাজানো। ‘‘চোখ ধাঁধাঁনো... একেবারে নিখুঁত’’, বলে উঠলেন বিচারক। কী বলছেন নাদিয়া? খুব সাধ ছিল, তাঁর বিয়েতেও কেক আসবে। কিন্তু বাংলাদেশিদের বিয়েতে এই রেওয়াজ নেই। ‘‘সেই সাধটাই মিটিয়ে নিয়েছি। অবশেষে আমাদের বিয়ের কেক এল।’’ — জয়ের হাসি মেখে বললেন তরুণী। আর সে জন্যই নিজের বিয়ের শাড়ি, গয়না দিয়ে মনের মতো করে কেকটাকে সাজিয়ে ছিলেন তিনি।
আরও একটি বিষয়ে উচ্ছ্বসিত নাদিয়া। প্রথম যে-দিন ময়দানে পা ফেলেছিলেন, সন্দেহের চোখে তাকিয়েছিলেন অনেকেই। মাস খানেক আগের ভিতু মেয়েটি এখন অনেক পরিণত। নিজেই বললেন, ‘‘৪ ফুট ১১ ইঞ্চি। সবচেয়ে ছোটখাটো প্রতিযোগী হিসেবে এসেছিলাম। আজ ট্রফি হাতে বেরনোর সময় নিজেকে এক বিশালাকার দৈত্য লাগছে।’’
বাঙালি মেয়ের ব্রিটেন জয়ের খবর আজ প্রকাশ্যে এলেও সব কিছুই ঘটেছে মাস চারেক আগে। সুখবরটা এত দিন চেপে রাখলেন কী ভাবে? নাদিয়া বললেন, ‘‘ব্রাউন পেপারে মুড়ে সুটকেসের মধ্যে রেখেছিলাম ট্রফিটা। তার পর তা লুকিয়ে রাখি খাটের তলায়। আর লুকোছাপা নেই। সাজিয়ে রাখব... বসার ঘরে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy