Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

বন্যা, ভূমিধসে বিধ্বস্ত ক্যালিফোর্নিয়ায় মৃত্যু বেড়ে ১৭, এখনও নিখোঁজ বহু

ওপরা উইনফ্রে, রোব লোয়ের মতো হলিউড তারকাদের বিলাসবহুল ঠিকানা। বন্যা আর কাদা-ধসের কালো স্রোতে চাপা পড়ে গিয়েছে ঝকঝকে সাজানো স্বপ্নের মতো শহরটা।

খোঁজ: ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রাণের সন্ধানে পুলিশ-কুকুর। ছবি: এপি।

খোঁজ: ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রাণের সন্ধানে পুলিশ-কুকুর। ছবি: এপি।

সংবাদ সংস্থা
ক্যালিফোর্নিয়া শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৫
Share: Save:

যত দূর চোখ যায়, শুধু কাদা আর জঞ্জালের স্তূপ! মাঝে মধ্যে উঁকি দিচ্ছে কোনও বাড়ির ছাদ বা কার্নিস। কোথাও বা এক ফালি জানলার কাঁচ। দেখে বোঝার উপায় নেই এটাই ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে অভিজাত মন্টেসিটো শহর। ওপরা উইনফ্রে, রোব লোয়ের মতো হলিউড তারকাদের বিলাসবহুল ঠিকানা। বন্যা আর কাদা-ধসের কালো স্রোতে চাপা পড়ে গিয়েছে ঝকঝকে সাজানো স্বপ্নের মতো শহরটা।

কয়েক দিন ধরেই এক টানা বৃষ্টি আর ঝড়ের চোখ রাঙানিতে প্রমাদ গুনছিলেন আমেরিকার উপকূলবর্তী ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দারা। সেই আশঙ্কা সত্যি করেই ধস নেমেছে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা বারবারা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায়। ঝড়, বন্যা আর ধসের কবলে বুধবার পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত দেড়শোর বেশি। খোঁজ নেই বহু মানুষের। ধ্বংস হয়ে গিয়েছে শ’খানেক বাড়ি। গত দু’মাসে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার বড়সড় বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত ক্যালিফোর্নিয়া।

ডিসেম্বরেই ভয়াবহ দাবানলে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ার বহু এলাকা। সম্প্রতি এত বড় অগ্নিকাণ্ড দেখেননি বলে জানিয়েছিলেন বাসিন্দারা। সেই জ্বালা জুড়োতে না জুড়োতে এ বার ভাসিয়ে দিল বন্যা। আমেরিকার বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থা ‘ফেমা’ (ফেডারেল এমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি) অবশ্য এতে অস্বাভাবিক কিছু দেখছে না। তাদের মতে, এক বার দাবানল হলে পরের পাঁচ বছরে বন্যার আশঙ্কা বহু গুণ বেড়ে যায়।

কিন্তু কেন? আমেরিকার আবহাওয়া নির্ণায়ক সংস্থা ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের মতে, দাবানলে মাটির ওপরের স্তর পুড়ে শক্ত হয়ে যায়। সে মাটি ভেদ করে সহজে জল গলতে পারে না। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। জলের সঙ্গে পোড়া মাটি আর গাছপালার স্তূপ মিশে সহজেই তা কাদার স্রোতে পরিণত হয়।

মন্টেসিটোর পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে ১০১ নম্বর জাতীয় সড়ক। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ওরেগন হয়ে ওয়াশিংটন পৌঁছয় এই রাস্তা। এই মুহূর্তে যার বিরাট একটা অংশ ভাসছে কাদার স্রোতে। দেখে বোঝার উপায় নেই নদী না রাস্তা! মন্টেসিটোর বাসিন্দা, আমেরিকার চ্যাট-শোয়ের সঞ্চালক এলেন ডে জেনেরেস টুইটারে সেই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছেন, ‘‘নদী নয়। আমার বাড়ির পাশে ১০১ ফ্রিওয়ের ছবি।’’

ক্যালিফোর্নিয়ার প্রশাসন অবশ্য হাত গুটিয়ে বসে নেই। সান্টা ক্যাটালিনার কাছে রোমেরো উপত্যকায় আটকে রয়েছেন অন্তত ৩০০ মানুষ। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেখানে উদ্ধার কাজ চলছে। ক্যালিফোর্নিয়ার বন্যা-বিপর্যস্ত এলাকায় পৌঁছনোর বহু রাস্তাই পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া বড় বড় পাথরে বন্ধ। ফলে আকাশপথেই চলছে উদ্ধারকাজ। বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ৫০ জনকে এ ভাবে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বেশ কিছু এলাকাকে ‘বিপজ্জনক’ চিহ্নিত করে দ্রুত তা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। যাঁরা একান্তই রয়ে গিয়েছেন, রোগ-সংক্রমণের আশঙ্কায় তাঁদের জল ফুটিয়ে খেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আশঙ্কা, ধস পুরোপুরি সরলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

California Dead
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE