রোহীত দাশগুপ্ত
চারদিক থেকে গেল গেল রব উঠছে। গত সাড়ে তিন দশকে লেবার পার্টির এ রকম খারাপ অবস্থা নাকি কখনওই হয়নি। স্থানীয় কাউন্সিলের ভোটের ফল বলছে, টোরিদের পায়ের তলার মাটি আরও শক্ত হয়েছে। আর এই অস্থির সময়ে লেবার পার্টির হয়ে ভোটে লড়ছেন কলকাতার এক ছেলে, ২৯ বছর বয়সি রোহীত দাশগুপ্ত।
ব্রিটিশ রাজনীতিতে আগেই পা রেখেছেন বাঙালিরা। লেবার পার্টির হয়েই জিতেছেন বাংলাদেশি বশোদ্ভূত টিউলিপ সিদ্দিক। রোহীত বললেন, ‘‘ব্রিটেনের ভোট-মঞ্চে আমিই মনে হয় প্রথম কলকাতা-কানেকশন!’’ রাজনীতিতে কবে এলেন? ‘‘যাদবপুরেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি। আর এ দেশে এসে সক্রিয় রাজনীতি শুরু করি,’’ উত্তর সেন্ট জেমস স্কুল ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যবিভাগের প্রাক্তনীর। জানালেন, সাত বছর আগে লেবার পার্টির সদস্য হয়েছিলেন। আর এ বার একেবারে প্রার্থীপদ।
এমন একটা আসন থেকে, যেটা আবার কনজারভেটিভদের শক্ত ঘাঁটি। ২০১০ থেকে ইস্ট হ্যাম্পশায়ারের এমপি কনজারভেটিভ পার্টির ড্যামিয়েন হিন্ডস। ২০১৫-র নির্বাচনে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী (ইউকিপ-এর পিটার বেইলি)-র থেকে পাঁচগুণ বেশি ভোট পেয়েছিলেন ড্যামিয়েন।
তাতে অবশ্য দমছেন না তরুণ বাঙালি। তাঁর কথায়, ‘‘এখানেও নানা ধরনের মানুষ থাকেন। তাঁদের অসংখ্য না-পাওয়া রয়েছে। সেগুলোই আমি প্রচারে তুলে ধরব।’’ কেমন সব না-পাওয়া? রোহীত বললেন, ‘‘এ বার ভোটে স্থানীয় বিষয়গুলো যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। গৃহনির্মাণ, কর্মক্ষেত্রে সম-মজুরির অধিকার, এ ধরনের বিষয়ের দিকে আমাদের কনজারভেটিভ সরকার একদম নজর দেয়নি। ফলে দরিদ্ররা দরিদ্রতর হয়েছেন। আমি দেশের দরিদ্রতম ব্যক্তিটির কণ্ঠস্বর হতে চাই।’’
আরও পড়ুন:থানা পিছু রক্ত, নির্দেশ মমতার
উঠে এল ব্রেক্সিট প্রসঙ্গ। রোহীতের মতে, ‘‘খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ব্রিটেন। সৌজন্য ব্রেক্সিট। বর্ণবিদ্বেষ, মুসলিমবিদ্বেষ আকাশ ছুঁয়েছে। ব্রেক্সিট গণভোটের পরে প্রথমবার আমি বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্যের শিকার হই।’’ তবে ব্রেক্সিট ছাড়া আরও অনেক বিষয় নিয়ে ভাবার আছে, মনে করেন রোহীত। যেমন, গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি তিন গুণ বেড়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবার বেসরকারিকরণ শুরু হয়েছে। ‘‘এ ভাবে চললে স্বাস্থ্য বা শিক্ষা আর সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে থাকবে না,’’ মন্তব্য রোহীতের। পিএইচডি শেষ করার পরে সাউদ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াতেন। এখন শিক্ষকতা করেন লসবরো বিশ্ববিদ্যালয়ে।
উঠে এল লেবার পার্টির প্রধান জেরেমি করবিনের কথাও। দলের ভরাডুবির জন্য যাঁকে দায়ী করছেন দলীয় সমর্থকরাই। রোহীতের মতে, ‘‘অনেকেই করবিনকে ভিলেন বানাচ্ছেন। কিন্তু আমার মনে হয়, তিনি আমাদের যোগ্য নেতা।’’ লেবার পার্টির জন্য এটা যে খুব ভাল সময় নয়, তা মেনে নিয়েই রোহীত বললেন, ‘‘অনেকেই এ বারের নির্বাচনে লেবার পার্টির অবস্থাকে ১৯৮৩-র ভোটের সঙ্গে তুলনা করছেন। হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে, ১৯৮৩-র ভোটে লেবার পার্টি ভয়ঙ্কর ভাবে হেরে গিয়েছিল। কিন্তু এটা-ও ভুললে চলবে না যে, সেই নির্বাচন থেকেই দু’টি মুখ উঠে এসেছিল যাঁরা পরে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন— গর্ডন ব্রাউন ও টনি ব্লেয়ার।’’ রোহীতের আশা, ‘‘এ বারও পট পরিবর্তন হতে পারে। এমন কোনও নতুন মুখ উঠে আসতেই পারেন, যাঁরা ভবিষ্যতে ব্রিটেনের ইতিহাসে জায়গা করে নেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy