মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান। হতে পারত আরও ভয়ঙ্কর কোনও হামলা।
গত কাল বিকেলে বার্সেলোনার ব্যস্ত রাস্তা ‘লা রামব্লা’য় জঙ্গির ভ্যান পিষে মেরে ফেলেছিল ১৩ জনকে। কয়েক ঘণ্টার মাথায় আজ ভোরবেলায় স্পেনের সৈকত শহর কামব্রিলসে ঠিক একই কায়দায় পথচারী আর পুলিশকে পিষে মারার চেষ্টা করেছিল আরও একটি গাড়ি। মুহূর্তে শুরু হয় আতঙ্ক আর হুড়োহুড়ি। কিন্তু এই ঘটনার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঘাতক গাড়িটিকে ঘিরে ফেলে পুলিশের বিশাল বাহিনী। পাঁচ জঙ্গি কালো রঙের অডি থেকে বেরোনোর চেষ্টা করতেই গুলি করে মেরে ফেলা হয় তাদের। স্পেনের সরকার জানিয়েছে, কালকের হামলার সঙ্গেই জড়িত আজকের এই হামলা। নিহত জঙ্গিদের দেহে বাঁধা ছিল বোমা বেল্ট। বম্ব ডিফিউজাল স্কোয়াড এসে সেগুলি নিষ্ক্রিয় করে।
সকালে কামব্রিলসের ঘটনায় এক পুলিশ-সহ সাত জন আহত হয়েছিলেন। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় এক মহিলার। বার্সেলোনায় হামলার পরে আতঙ্ক আর হুড়োহুড়ির সুযোগে ঘাতক ভ্যান থেকে নেমে পালিয়ে গিয়েছিল আততায়ী। কাল ভাবা হয়েছিল,
হামালাকারী ছিল দু’জন। কিন্তু পুলিশ জেনেছে, এক জনই হামলা চালিয়েছিল। আজ রাত পর্যন্ত তাকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। স্পেনের বিভিন্ন শহরে চিরুনি তল্লাশি হচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকার। এখনও পর্যন্ত হামলার ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কাল পুলিশ আততায়ীর পরিচয় না জানালেও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, তার নাম মুসা ঔবাকির। বয়স আঠারো। সে আদতে মরোক্কোর বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, দাদা দ্রিস ঔবাকিরের পরিচয় পত্র ব্যবহার করে কাল ওই ঘাতক ভ্যানটি ভাড়া করেছিল সে। পুলিশ ইতিমধ্যেই দ্রিসকে গ্রেফতার করেছে। তার সঙ্গেই আটক করা হয়েছে স্পেনের মেলিলার এক বাসিন্দাকে। ক্যাটালান প্রদেশের রিপোল শহর থেকেও ধরা হয়েছে এক জনকে। যদিও ধৃতদের পরিচয় নিয়ে সরকারি ভাবে কিছুই জানায়নি পুলিশ। শুধু জানা গিয়েছে, গত বুধবার বার্সেলোনার দক্ষিণে আলসানারে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছিল এক স্প্যানিশ নাগরিকের। সে দিনের সেই ঘটনাও কাল আর আজকের হামলার সঙ্গে যুক্ত বলে নিশ্চিত পুলিশ।
শ্রদ্ধা: নিহতদের স্মরণে। শুক্রবার বার্সেলোনার রাস্তায়। ছবি: রয়টার্স
কাল হামলার পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ‘লা রামব্লা’র রাস্তা। আজ সকালে অবশ্য সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় সেটি। তবে আতঙ্ক কাটেনি স্থানীয় বাসিন্দাদের। বত্রিশ বছরের ফেডেরিকো কোলমেনারেজো ‘লা রামব্লা’-র খুব কাছে থাকেন। জানালেন, ঠাকুরমার ফোন এসেছিল বলে ঠিক ওই সময়টায় বাড়ি থেকে বেরোননি। আর সে জন্যই প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আলি শিরাজিনিয়ার কথায়, ‘‘লোক জন এমন ভাবে চিৎকার করছিল, প্রথমটায় শুনে মনে হয়েছিল যেন ফিল্মের কোনও তারকা এসেছে। পরে বুঝি আসল বিষয়টা কী। অনেকেই আশপাশের দোকানে ঢুকে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন। সে এক ভয়াবহ দৃশ্য।’’
কাল ‘লা রামব্লা’য় ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ অভিনেত্রী লায়া রুয়াস। বার্সেলোনায় ছুটি কাটাচ্ছিলেন তিনি। একটি রেস্তোরাঁয় ঢুকে ফ্রিজারের মধ্যে লুকিয়ে পড়েন। সেখান থেকেই টুইট করেন— ‘‘জঙ্গি হামলার মধ্যে পড়ে গিয়েছি। ফ্রিজারে লুকিয়ে রয়েছি। সকলে সুরক্ষিত থাকুক, এই প্রার্থনাই করি।’’ হামলার হুড়োহুড়িতে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে একটি শিশু। তার মা-ও হাসপাতালে।
স্পেনের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, কালকের হামলায় হতাহতের মধ্যে মোট ২৪টি দেশের নাগরিক রয়েছেন। বেলজিয়াম ও ইতালি সরকার জানিয়েছে, নিহতদের তালিকায় রয়েছেন তাদের দেশের নাগরিকরা। ফ্রান্স জানিয়েছে, ২৬ জন ফরাসি নাগরিক আহত। যাঁদের মধ্যে ১১ জনের অবস্থা খুবই গুরুতর।
২০০৪ সালের পরে এত বড় সন্ত্রাসবাদী হামলার মুখোমুখি হয়নি ইউরোপের এই দেশ। সে বার রাজধানী মাদ্রিদের ট্রেনে পরপর হামলা চালিয়েছিল আল কায়দা। মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ১৯২ জনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy