Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বঙ্গ সম্মেলনের জমি তৈরি, এ বার অপেক্ষা

ইউরোপে সাত দিনের বাণিজ্য সফর সেরে আজ রাতে এখান থেকে ফেরার বিমান ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। দুবাই হয়ে কলকাতায় পৌঁছনোর কথা আগামী কাল সন্ধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

দেবাশিস ভট্টাচার্য
এডিনবরা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:১৩
Share: Save:

সাহেবদের একটা কথা আছে, ‘পুডিংটা কেমন, না খেলে বোঝা যায় না!’ তাঁর এ বারের লন্ডন ও স্কটল্যান্ড সফরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুডিং তৈরির কাজ শুরু করে দিয়ে গেলেন। কত দিনে তা তৈরি হয়ে পাতে পড়বে এবং কেমন হবে তার স্বাদ, সেটা বলবে সময়।

ইউরোপে সাত দিনের বাণিজ্য সফর সেরে আজ রাতে এখান থেকে ফেরার বিমান ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। দুবাই হয়ে কলকাতায় পৌঁছনোর কথা আগামী কাল সন্ধ্যায়। সফরের সামগ্রিক প্রাপ্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র আজ বলেন, ‘‘লন্ডনে বাণিজ্য সম্মেলনে আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সংখ্যায় বিদেশি শিল্প প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন। ছোট-বড়-মাঝারি সব মাপের শিল্প সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলি থেকে প্রতিনিধিরা পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং মেধা বিনিময়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। কিছু বিষয়ে আলোচনা এগিয়েও গিয়েছে।’’

আর স্কটল্যান্ডে? অমিতবাবুর জবাব, ‘‘এখানেও ‘সাফল্য’ আশাতীত। এই প্রথম ভারতের কোনও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর রাজ্যের জন্য বিনিয়োগ চাইতে স্কটল্যান্ডে এলেন। তাতে এখানকার বাণিজ্যমহল অভিভূত। এডিনবরাতেও বাণিজ্য সম্মেলনে ৭০ জনের বেশি প্রতিনিধি অংশ নেন। স্কটল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী অ্যালাসডির অ্যালান আলাদা ভাবে এসে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষে আমার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।’’ তিনি জানান, জল নিয়ে স্কটল্যান্ডের বিশেষ পারদর্শিতা আছে। তা সে বিশুদ্ধ পানীয় জলই হোক বা নদী-নালা সংস্কার কি নদীর উপরে সেতু নির্মাণ। স্কটল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী এই ব্যাপারে রাজ্যের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।

এডিনবরার সম্মেলন থেকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, তথ্য প্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও সহযোগিতার যে সব ইঙ্গিত মিলেছে, তার অনেকগুলিই বাস্তবায়িত হবে বলে অমিতবাবুর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘বাণিজ্য ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ ও স্কটল্যান্ডের মধ্যে যোগাযোগ আছে। পশ্চিমবঙ্গের বহু সংস্থা স্কটল্যান্ডের সঙ্গে ব্যবসা করে। স্কটল্যান্ডেরও একাধিক সংস্থা পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসা করে আসছে। এই যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বলা চলে ঐতিহাসিক। এ বার মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিনিয়োগের আহ্বান নিয়ে এই দেশ সফর করায় তার মাত্রা আরও বাড়ল।

মুখ্যমন্ত্রী নিজে অবশ্য এখনই আগ বাড়িয়ে বেশি কিছু বলার পক্ষপাতী নন। তবে লন্ডন ও এডিনবরা, দু’জায়গাতেই বাণিজ্য সম্মেলন করে তিনি যে যথেষ্ট খুশি, তা অকপটে বলছেন। আর যে বিষয়কে তিনি গুরুত্ব দিতে চান, তা হল আসন্ন বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। এই বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য লন্ডনের শিল্পপতি লক্ষ্মী মিত্তলের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মমতা। মিত্তল যেতে প্রস্তুত। লন্ডন ও স্কটল্যান্ডের বাণিজ্য বৈঠকগুলিতেও প্রতিনিধিদের কাছে একই আমন্ত্রণ পৌঁছে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং দু’জায়গা থেকে বাণিজ্য প্রতিনিধি দল সেখানে যোগ দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিদেশে রওনা হওয়ার আগে মুম্বইয়ে মুকেশ অম্বানী ও সজ্জন জিন্দলের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের কাছ থেকেও জানুয়ারির বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিতে পেরেছেন মমতা। ফলে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে মিত্তল-অম্বানী-জিন্দলদের সঙ্গে হাজির থাকবেন ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। মমতার মতে, সব মিলিয়ে বিশ্ববঙ্গ সম্মেলন এ বার সত্যিই ‘বিশ্বমানে’ পৌঁছতে চলেছে।

অতএব ‘পুডিং’ প্রস্তুত। এ বার পাতে পড়লে খেয়ে দেখার পালা। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও তা জানেন। তাই গত কালের সম্মেলন মঞ্চে তিনি স্বয়ং বলেছেন, ‘‘আমি আগাম কোনও বড় কথা বলব না। আপনারা সবাই আসুন, দেখুন এবং বুঝুন কে কী করতে পারেন। আমরা সঙ্গে আছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE