আয়লান এবং গালিপের হাত ধরে রয়েছেন আবদুল্লা। ছবি: টুইটার।
প্রশাসনের নজর এড়াতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাত ৩টেয় রবারের ছোট নৌকায় রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা। বাঁচার জন্য গ্রিসে পৌঁছনোটা ছিল খুব জরুরি। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর কোনও উপায়ই ছিল না। বাধ্য হয়েই জীবন বাজি রেখে গভীর রাতে সমুদ্রপথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি। নৌকা পাওয়া যাচ্ছিল না। তার ব্যবস্থা করতে অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন নগদ চার হাজার ইউরো। তা সত্ত্বেও নতুন জীবনের পথে যাওয়া হল না আবদুল্লার! ১৫ ফুট উঁচু ঢেউ এক ঝটকায় যেন তছনছ করে দিল তাঁর জীবন। স্ত্রী এবং পুত্রশোকে বিহ্বল বাবার এখন একমাত্র আর্জি, যুদ্ধ বন্ধ হোক।
তাঁরই তিন বছরের ছেলে আয়লানের দেহ ভেসে এসেছে তুরস্কের উপকূলে। যে ছবি দেখে শিউরে উঠেছে গোটা বিশ্ব। শরণার্থীদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া এবং একই সঙ্গে শান্তিরক্ষার দাবিতে সরব হয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা বিশ্বে। অথচ তাঁরই ভিতরটা এখন ফাঁকা।
বৃহস্পতিবার আয়লানের দেহ নেওয়ার জন্য তুরস্কের এক মর্গে যান আবদুল্লা। প্রিয়জনদের হারিয়ে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছেন তিনি। জীবন থেকে তাঁর আর কিছুই পাওয়ার নেই। ছলছল চোখে আবদুল্লা বলেন, ‘‘আমার কাছে আর কোনও কিছুরই মূল্য নেই। যা মূল্যবান ছিল তা হারিয়েছি।’’
এ ভাবেই পড়েছিল ছোট্ট আয়লানের দেহ। ছবি: এএফপি।
তুরস্কের ওই ঘটনার পরে তোলপাড় হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে। এমনকী, বাদ যাননি আবদুল্লাও। বাবা হয়ে একরত্তি দুই শিশুকে কেন এ ভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলেন, তা নিয়ে শ’য়ে শ’য়ে আঙুল উঠেছে তাঁর দিকেও। প্রশ্ন উঠেছে, কেন লাইফ জ্যাকেট পরানো হয়নি? সমালোচনার মুখে অবশ্য মানুষ ভুলে গিয়েছেন আসল বিষয়টিই। ভুলে গিয়েছে কোন পরিস্থিতির শিকার হয়ে আবদুল্লারা দেশ ছেড়েছেন।
এ দিন আবদুল্লার দাবি, লাইফ জ্যাকেট তাঁদের ছিল। কিন্ত দুর্ঘটনার সময় তা কোনও ভাবে গা থেকে খুলে যায়। যদিও তুরস্কের পুলিশের দাবি, এত ছোট সাইজের লাইফ জ্যাকেট সেখানে অমিল।
প্রশাসনের নজর এড়াতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাত ৩টেয় রবারের ছোট নৌকায় রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা। পাঁচ ফুট উঁচু বিপজ্জনক ঢেউয়ের আঘাতে প্রতি মুহূর্তেই ছিল ডুবে যাওয়ার ভয়। কিন্তু পিছনে ফেরার উপায়ও যে ছিল না! সিরিয়া ছেড়ে সপরিবারে কানাডায় বোনের কাছে যাচ্ছিলেন তিনি। আবদুল্লার বোন টিমা কুর্দি কানাডার বাসিন্দা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ায় সবই হারিয়েছিলেন আবদুল্লা। টাকা ছিল না। সিরিয়া থেকে কানাডা-এই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে দাদাকে তাঁর কাছে আসার জন্য টাকাও পাঠিয়েছিলেন টিমা। সেই টাকার ভসাতেই রওনা দেন আবদু্ল্লারা। মাঝসমুদ্রে ঘটে বিপত্তি। পাঁচ ফুট উঁচু ঢেউ নিমেযের মধ্যেই বদলে যায় ১৫ ফুটের দৈত্যে। উল্টে যায় নৌকা। সন্তানদের, স্ত্রী-কে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন তিনি। নিজে ডুবে যেতেও যেতেও চেষ্টা করেছিলেন ছেলেদের মুখ জলের উপরে রাখতে, যাতে তারা শ্বাস নিতে পারে। কিন্তু পারেননি। চোখের সামনেই তাঁদেরকে ডুবে যেতে দেখেন আবদুল্লা।
ফোনে দাদার থেকে সব শুনেছেন টিমা। তাঁর আফসোস, কেন টাকা পাঠালাম? তা না হলে হয়ত দাদা সিরিয়াতেই থেকে যেত। পাশাপাশি তিনি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কানাডা সরকারের বিরুদ্ধেও। এর আগে তাঁর সঙ্গে কানাডায় বসবাস করার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন এক দাদা। কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়। ঘটনা সামনে আসার পর সমালোচকদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপারও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy