সশ্রদ্ধ: ভগিনী নিবেদিতাকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থ হাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্বামী সুহিতানন্দ। রবিবার উইম্বলডন লাইব্রেরিতে।
টেনিসখ্যাত উইম্বলডন স্টেডিয়াম থেকে খানিকটা এগিয়ে বাঁ দিকে ঘুরে হাই স্ট্রিট। সেখানে ২১ নম্বর বাড়িতে আজ উৎসব। কী হবে? বাড়ির নীচের কফিশপের তরুণী কর্মী অ্যাস্ট্রেডের তা জানা ছিল না।
শনিবার সন্ধ্যায় জমজমাট ভিড়ে টেবিলে টেবিলে কফি পৌঁছে দিচ্ছিলেন তিনি। ‘‘আপনি জানেন, এ বাড়িতে কাল একটা উৎসব হবে?’’ অবাক বিস্ময়ে তরুণী বললেন, ‘‘কিছু জানি না তো!’’ পরে ম্যানেজারের কাছে খোঁজ নিয়ে এসে বলে গেলেন, ‘‘এক মহিলা থাকতেন অনেক দিন আগে। তাঁর নামে প্লাক লাগানো হবে।’’
আরও পড়ুন: সহায় শাল মাফলার, ঠান্ডাতেও হণ্টন জারি মমতার
অ্যাস্ট্রেডের মতো অনেকেই হয়তো আজ জানলেন, ২১ হাই স্ট্রিটের এই বাড়িতে কিছু দিন থাকতেন ভগিনী নিবেদিতা ও তাঁর পরিবার। ১৮৯৮ সালে ভারতে চলে গিয়েছিলেন আইরিশ মহিলা মার্গারেট নোবল। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁকে দীক্ষা দিয়ে ‘নিবেদিতা’ নামকরণ করেন। পরে এক বার ১৮৯৯-এ এখানে ফিরে এই বাড়িতেই থেকেছিলেন নিবেদিতা। স্বামীজিও অল্প কিছু দিন ছিলেন এখানে। নিবেদিতার জন্মের সার্ধ-শতবর্ষ উপলক্ষে ‘ইংলিশ হেরিটেজে’র উদ্যোগে আজ সেখানে লাগানো হল নীল রঙের স্মৃতিফলক। যাকে বলা হয় ‘ব্লু প্লাক’।
নিবেদিতার বাড়িতে রবিবার বসল এই ব্লু প্লাক।
‘ইংলিশ হেরিটেজ’ দীর্ঘদিন ধরে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিসৌধগুলিকে এই ধরনের ফলকে চিহ্নিত করছে। যাতে ইতিহাস হারিয়ে না যায়। এখনও পর্যন্ত মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী, সর্দার বল্লভভাই পটেল, জওহরলাল নেহরুর মতো নেতাদের স্মৃতিফলক লাগিয়েছে ‘ইংলিশ হেরিটেজ’। সমাজ সংস্কারক, দার্শনিক এবং মনীষীদের মধ্যে যাঁদের নামে ফলক লাগানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন স্বামী বিবেকানন্দ, রামমোহন রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ। এ বার নিবেদিতা। নিবেদিতার স্মৃতিফলকে তাঁকে শিক্ষাব্রতী ও ভারতে স্বাধীনতার প্রচারক হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও লন্ডনের মেয়র সাদিক খান।
বাড়ির অদূরে উইম্বলডন লাইব্রেরিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ইংলিশ হেরিটেজ’ এবং বেলুড়ের রামকৃষ্ণ মিশন থেকে তাঁকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। মমতা তাঁর ভাষণ শুরু করেন ‘ব্রাদার্স অ্যান্ড সিস্টার্স অব লন্ডন’ বলে। তাঁর কথায়, ‘‘ভগিনী নিবেদিতা ভারতের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। একের মধ্যে বহুকে আপন করে নেওয়ার কথা বলতেন স্বামী বিবেকানন্দ। স্বামীজির সেই দর্শনকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন নিবেদিতা।’’ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সহ-অধ্যক্ষ স্বামী সুহিতানন্দও ছিলেন অনুষ্ঠানে। উপস্থিত ছিলেন লন্ডনে ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার দীনেশ পট্টনায়েক। তিনি জানান, হ্যাম্পস্টেডে রবীন্দ্রনাথের বাড়িটি অধিগ্রহণের জন্য তাঁকে অনুরোধ জানিয়েছেন মমতা। বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন তাঁরা।
অনুষ্ঠানে নিবেদিতার জীবন ও কর্ম নিয়ে পরিবেশিত হয় একটি আলেখ্য। সেখানে স্থান পায় মমতার লেখা গান— ‘এই পৃথিবীর একই মাটি, একই আকাশ-বাতাস...’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy