Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বৈঠকে মোদী-লি, উত্তেজনা কমাতে চায় বেজিং-দিল্লি

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, রবিবারই ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতের্তের দেওয়া নৈশভোজে মোদী-খ্যছিয়াং কথা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:০১
Share: Save:

প্রতিবেশী কূটনীতিতে কোণঠাসা নরেন্দ্র মোদী সরকার এ বার ড্রাগনকে প্রশমিত করতে সক্রিয়। পাকিস্তান এবং চিন একযোগে সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি করতে পারে, এই মর্মে রিপোর্ট পাওয়ার পরে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে সাউথ ব্লক। চলছে কূটনৈতিক পথে সম্পর্কের তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা। তারই সূত্র ধরে এ দিন ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় আসিয়ান শীর্ষ বৈঠকের ফাঁকে চিনা প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াং-এর সঙ্গে বৈঠকে বসেন মোদী।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, রবিবারই ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতের্তের দেওয়া নৈশভোজে মোদী-খ্যছিয়াং কথা হয়েছে। তবে সেটা ছিল নেহাতই সৌজন্য সাক্ষাৎ। এ দিন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকের একটি ছবি টুইটারে পোস্ট করেছেন। তবে দু’জনের মধ্যে কী কথা হয়েছে, তা জানা যায়নি।

শীর্ষ স্তরের এই আবহে স্পষ্ট, দু’পক্ষই এই মুহূর্তে উত্তেজনার পথ এড়াতে চাইছে। আগামি মাসেই ভারতে আসছেন চিনের স্টেট কাউন্সিলার ইয়াং জিয়েচি। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা ভারত-চিন সীমান্ত আলোচনা ফের শুরু হচ্ছে জিয়েচি এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের মধ্যে। ভারত-চিন সীমান্ত মেকানিজমের (দু’দেশের বিশেষ প্রতিনিধির মধ্যে রাজনৈতিক স্তরে আলোচনার জন্য তৈরি) এটি ২০তম বৈঠক। ডোকলামের ৭২দিন ব্যাপী উত্তেজনার পরে এই আলোচনা চিনের সঙ্গে সম্পর্ক তথা গোটা অঞ্চলের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি নয়াদিল্লিতে ভারত, চিন এবং রাশিয়ার মধ্যে বিদেশ মন্ত্রক পর্যায়ের একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও হবে। সেটিতে যোগ দিতে আসছেন চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই।

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ডোকলাম কাণ্ডের পরে চিন প্রসঙ্গে যথেষ্ট সতর্ক হয়েই এগোনোর কথা ভাবছে ভারত। কিছুটা থিতিয়ে যাওয়া বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আবার টানটান করা এখন সাউথ ব্লকের অগ্রাধিকার। ক্ষমতায় আসার পর থেকে মোদী চেষ্টা করে গিয়েছেন বিশেষ করে চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি কমানো‌র জন্য। কিন্তু জুন মাসে দু’দেশের রাষ্ট্রনেতার বৈঠকে বিবিধ প্রতিশ্রুতির আদানপ্রদান হলেও তার পর সব হিসেব উল্টে দিয়েছে ডোকলাম।

এ বার সেই ক্ষত মেরামতির পালা। কূটনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে, চিন তাদের দেওয়া একটি পুরনো প্রস্তাবকেই নতুন মোড়কে তুলে ধরতে চলেছে ডিসেম্বরের বৈঠকে। এর আগে এই চিনা প্রস্তাবটি নাড়াচাড়া করে টেবিল চাপা দিয়েছিল ভারত। কিন্তু চলতি পরিস্থিতিতে তাকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রস্তাবটি হল, এক সঙ্গে গোটা সীমান্ত নিয়ে আলোচনায় না-বসে সমস্যার পৃথক-পৃথক ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে সমাধানসূত্র খোঁজা। অর্থাৎ, সিকিম, লাদাখ এবং অরুণাচল— এই তিনটি এলাকাকে আলাদা করে নিয়ে এক এক করে আলোচনা করা। সমাধান খোঁজা। চিনের যুক্তি, এই তিনটি সেক্টরের চরিত্র এতটাই আলাদা যে এদের এক বন্ধনীতে আনা সম্ভব নয়। সাউথ ব্লক সে সময় ঘরোয়া ভাবে জানিয়েছিল, এলাকার এই পৃথকীকরণ করার ফলে চিন তাদের মর্জি মতো সমাধান করতে চাইবে। একটি একটি এলাকা নিয়ে আলোচনা করে তাদের কৌশলগত ক্ষেত্রটি (অরুণাচল) ফেলে রাখবে। তবে ডোকলাম পরবর্তী সময়ে এই নিয়ে সুর কিছুটা নরম করতে পারে নয়াদিল্লি।

আগামি মাসের দৌত্য নিয়ে ইতিবাচক কথা বলছে চিনও। নয়াদিল্লিতে অবস্থিত চিনা রাষ্ট্রদূতের কথায়, ‘‘আগামি মাস থেকে ফের দ্বিপাক্ষিক বিনিময় শুরু হবে। চিনের দুই নেতার ভারত সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন অধ্যায় শুরু করবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Li Keqiang China Premier Manila
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE