রাত দশটার পর থেকে ভিড় বাড়ে মিয়াংগ ডাং সরণীতে। ঝিনুক, শামুক, অক্টোপাস, কাঁকড়ার স্যুপে ম ম করতে থাকে সোলের এই ফুড স্ট্রিট। সঙ্গে জনপ্রিয় পানীয় সজু। রাত বাড়লে বাড়ে মৌতাত। সেই সঙ্গে দুই কোরিয়াকে জোড়া লাগানোর স্বপ্নও।
বিশ বছর ধরে দুই কোরিয়ার সংযুক্তিকরণের (রিইউনিফেকশন) প্রয়াস অব্যাহত। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের প্রতিনিধিরা উত্তর কোরিয়ার একনায়কতন্ত্র এবং কিম জং উনের পরমাণু পরীক্ষার কঠোর সমালোচনা করছেন ঠিকই। কিন্তু পাশাপাশি বলছেন, দেশভাগের যন্ত্রণা একদিন মুছে যাবে। বহু থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, সরকারি উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও তৈরি হয়েছে এই ‘রিইউনিফেকশন’ নিয়ে। কোনও মতে সীমান্ত টপকে উত্তরের কোনও বাসিন্দা যদি এ-পারে চলে আসেন (সম্প্রতি একজন এসেছেন অর্ধমৃত হয়ে, ও-পারের বুলেট পায়ে নিয়ে) তা হলে তাঁকে রাজঅতিথি করে রাখা হয়। দু’দেশকে এক করা নিয়ে গানও লেখা হয় সরকারি স্তরে।
কিন্তু সারা দিন পরিশ্রমের পর (দক্ষিণ কোরিয়া ওঠে ভোর পাঁচটায়, এই মাইনাস পাঁচেও) যে সব যুবক চিংড়ি আর সজুতে একটু শান্তি খুঁজতে আসেন, তাঁরা আর নাড়ির টান পান না উত্তর কোরিয়ার জন্য। কিমের উন্মাদনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঙ্কার নিয়ে বিন্দুমাত্র বিচলিত নন, স্যামসং, হুন্ডাই বা কোনও সফটওয়্যার সংস্থায় কাজ করা যুবক যুবতীরা। আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আলাদা থাকতে থাকতে, এবং সমৃদ্ধির শীর্ষে পৌঁছে গিয়ে ইতিহাসবোধ ভোঁতা হয়ে গিয়েছে তাঁদের।
সবে হাইস্কুলের গণ্ডি পার করেছেন কুকেনজিও জু। জীববিদ্যা নিয়ে পড়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন কলেজে। ঝকঝকে এই তরুণীটি মিয়াংগ ডাং-এ দাঁড়িয়ে বলছেন, “উত্তর কোরিয়ার মানুষের জন্য আমাদের সহানুভূতি যে নেই তা তো নয়। বাপ দাদাদের অনেক পরিচিতই তো ও-পারে। ভাল করে খেতেও পায় না শুনি। না, আমরা যুদ্ধ চাই না।’’ তা হলে কী চান? পাশে দাঁড়ানো তাঁর বন্ধু জুং মিন ইয়াং বলছেন, “প্রশ্ন করে দেখুন। প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে তিন জন বলবে যে তারা চায় না সংযুক্তিকরণ। আমরাও বলছি। কারণ জানি যে ও দিকে বিন্দুমাত্র উন্নয়ন নেই। জো়ড়া লাগলে আমাদের উপর বিরাট চাপ আসবে।”
ভারতীয় দূতাবাস সূত্র বলছে, আগামি পাঁচ বছরেও এই জোড়া লাগার কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ আমেরিকার অগ্রাধিকার এখন অন্য। কিম প্রশাসনকে ধ্বংস করাটা যে মুখের কথা নয় সেটা ভালই জানে ওয়াশিংটন। কৌশলগত এবং কূটনৈতিক চাপ তৈরির রাস্তা তাই একসঙ্গে মেপে দেখছে তারা। পরিস্থিতি থমথমে। সংযুক্তিকরণ এখন অগ্রাধিকারের তালিকার তলানিতেও নেই।
হান নদীর পাশেই ডোরা অবর্জাভেটরি। যেখান থেকে দূরবীনে দেখা যায় ‘শ্রীহীন’ উত্তর কোরিয়াকে। পাশে দু’দেশের মধ্যে ডিএমজে (ডিমিলিটারাইজড জোন)। চব্বিশ ঘন্টা পালা করে নজর রাখা হয়। কী ভাবে মানুষ ও-পার থেকে জীবন বাজি রেখে পালিয়ে আসতে চেষ্টা করেন, তা দেখেছেন এ দিকের অফিসাররা। সাংবাদিক প্রতিনিধিদল এসেছে শুনে দেখালেন উত্তর কোরিয়ার পাহাড়ের উপর একটি টাওয়ারকে। “এ রকম তিনটি টাওয়ার আছে ওদের। ওখানকার সমস্ত চ্যানেলের সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিম যা চাইবেন, সেটাই প্রচার হয়। আমরা চাই এ সব বন্ধ হোক। ওখানকার মানুষ স্বস্তি পান,” বললেন এক অফিসার।
তবে এই চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে যে বিস্তর ফারাক সেটা হয়তো তিনিও জানেন। উর্দি পরে আছেন, তাই বললেন না শুধু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy