Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

শুল্ক দফতরের ‘হেনস্থায়’ থমকে ত্রাণ

মেচি নদীর কোলে পানিট্যাঙ্কির বিএসএফ ছাউনি পেরিয়ে কাঁকরভিটায় পা রাখতেই বদলে যাচ্ছে পুরো ছবিটা। জলপাই পোশাকের নেপালি সেনার কড়া প্রশ্ন, ‘‘কাঁহা জানু হুনছো (কোথায় যাবেন)?’’ স্থান উল্লেখের সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসছে পরের প্রশ্ন, ‘‘কিনো জানু হুনছো (কেন যাচ্ছ সেখানে)?’’—এই জোড়া প্রশ্নের ধাক্কায় গত কয়েক দিন ধরেই থমকে গিয়েছে ত্রাণ। মেচি সেতুর উপরে তাই ত্রাণ বোঝাই গাড়ির মিছিল।

স্মরণে। কাঠমান্ডুর রাস্তায় শনিবার সন্ধ্যায়। ছবি: এএফপি।

স্মরণে। কাঠমান্ডুর রাস্তায় শনিবার সন্ধ্যায়। ছবি: এএফপি।

অনির্বাণ রায়
কাঁকরভিটা (নেপাল) শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৫ ০৩:১১
Share: Save:

মেচি নদীর কোলে পানিট্যাঙ্কির বিএসএফ ছাউনি পেরিয়ে কাঁকরভিটায় পা রাখতেই বদলে যাচ্ছে পুরো ছবিটা।

জলপাই পোশাকের নেপালি সেনার কড়া প্রশ্ন, ‘‘কাঁহা জানু হুনছো (কোথায় যাবেন)?’’ স্থান উল্লেখের সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসছে পরের প্রশ্ন, ‘‘কিনো জানু হুনছো (কেন যাচ্ছ সেখানে)?’’—এই জোড়া প্রশ্নের ধাক্কায় গত কয়েক দিন ধরেই থমকে গিয়েছে ত্রাণ। মেচি সেতুর উপরে তাই ত্রাণ বোঝাই গাড়ির মিছিল।

এক রাশ বিরক্তি নিয়ে কাঁকরভিটার শুল্ক দফতরের সামনে বসে ছিলেন কলকাতা থেকে এক গাড়ি জামা কাপড় এবং শুকনো খাবার নিয়ে নেপাল পাড়ি দেওয়া একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এক কর্মী। বলছেন, ‘‘ভাবছি, ঢের হয়েছে। জিনিসপত্র এখানেই নামিয়ে ফিরে যাব।’’ তাঁদের অভিযোগ, ত্রাণ সামগ্রীর জন্য ১৫% হারে কর চাইছে নেপালের শুল্ক দফতর।
কখনও বা চিড়ের বস্তা আর জলের ড্রাম তল্লাশিতে লাগিয়ে দিচ্ছে নিদেনপক্ষে ১০-১২ ঘণ্টা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে পোশাক সংগ্রহ করে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল শিলিগুড়ির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাঁদের দাবি, ট্রাক বোঝাই জামা কাপড় দেখে শুল্ক দফতর এখন প্রতিটি পোশাকের জন্য ‘ভাউচার’ দাবি করছে।

এখানেই অভিযোগের শেষ নয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ত্রাণ নিয়ে কাঁকরভিটায় পৌঁছে ছিলেন। শিলিগুড়ির প্রকৃতিপ্রেমী সংস্থা ‘ন্যাফ’-এর মুখপাত্র অনিমেষ বসুর অভিযোগ, ‘‘পড়ুয়ারা শুকনো খাদ্য, পোশাক নিয়ে যাচ্ছিলেন। ওঁদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়।’’

পোশাক এবং গুঁড়ো দুধের প্যাকেট বোঝাই করে গত বুধবার সকালে কাঁকরভিটায় পৌঁছেছিলেন বাগডোগরার রাজু রায়। তাঁর দাবি, ‘‘গিয়েছিলাম ত্রাণ পৌঁছে দিতে। নেপাল সেনার জওয়ানেরা চেয়ে বসল টাকা। ভাবতে পারেন!’’

বিধ্বস্ত দেশে ত্রাণ পৌঁছে দিতে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে কেন?

নেপাল প্রশাসনের দাবি, ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার নামে কেউ ব্যবসাও করতে পারে। সে কারণেই এই সর্তকতা। নেপালের শুল্ক দফতরের কর্মী প্রেম সিকদেল বলেন, ‘‘ত্রাণের সঙ্গে লুকিয়ে অবৈধ চোরাচালান হতে পারে, এমনকী, নাশকতার সামগ্রী পাচারও হতে পারে, সে কারণেই উপর থেকে কড়া সর্তকতার নির্দেশ এসেছে।’’

ত্রাণসামগ্রীর ভাড়া নেবে না রেল

নেপালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশে ত্রাণ পাঠানো হলে সেই পণ্য পরিবহণ বাবদ রেল কোনও ভাড়া নেবে না। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখপাত্র সুগত লাহিড়ি জানান, সরকারি, সরকার অধিগৃহীত বা বেসরকারি সংগঠন বিহারের রক্সৌল স্টেশন অবধি ট্রেনে ত্রাণ পাঠাতে চাইলে, বিনামূল্যে তা নিয়ে যাবে রেল। এ ব্যাপারে নিকটবর্তী স্টেশনে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE