Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
International

পাহাড়চূড়োয় তুষার ঝড়ে এক মাস কাটালেন একা মহিলা!

তুষার ঝড়ের মধ্যে পাহাড়চূড়োয় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই পা হড়কে নীচের অতল খাদে গড়িয়ে পড়লেন সঙ্গী ২৮ বছর বয়সী আন্দ্রেঁজ পিটার। চোখের সামনে দেখলেন, হুড়মুড় করে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে যাচ্ছে আন্দ্রেঁজ।

সেই মহিলা।

সেই মহিলা।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৬ ১৮:৪২
Share: Save:

তুষার ঝড়ের মধ্যে পাহাড়চূড়োয় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই পা হড়কে নীচের অতল খাদে গড়িয়ে পড়লেন সঙ্গী ২৮ বছর বয়সী আন্দ্রেঁজ পিটার। চোখের সামনে দেখলেন, হুড়মুড় করে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে যাচ্ছে আন্দ্রেঁজ। বাঁচার জন্য আর্তনাদ করছে। এক সময় আন্দ্রেঁজ দৃষ্টির বাইরে চলে গেল ৩৩ বছর বয়সী প্রেমিকা পাভলিনা পিৎজোভার। তার আর্ত চিৎকারও আর শুনতে পেলেন না পাভলিনা। আন্দ্রেঁজ হারিয়ে গেল চিরতরে, দুর্লঙ্ঘ পর্বতের অন্দরে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন পাভলিনা, নিষ্পলক চোখে। কিছুই করার ছিল না যে তাঁর! পুরোপুরি একা হয়ে গেলেন পাভলিনা, এই মুহূর্ত থেকেই, পাহাড়চূড়োয়। তার পর হাড়জমানো ঠান্ডায় পাহাড়চূড়োয় একা একাই তিন-তিনটে রাত কাটিয়েছেন পাভলিনা। প্রচণ্ড শীতের হাত থেকে বাঁচতে স্লিপিং ব্যাগ আর হাতের কাছে যা পেয়েছিলেন, তাই দিয়েই নিজেকে মুড়ে নিয়েছিলেন পাভলিনা। তার পর হন্যে হয়ে খুঁজে শেষমেশ পেয়ে গিয়েছিলেন পাহাড়ের ওপর একটা কুঁড়েঘর। অন্তত মাথার ওপর একটা ছাদ তো! একেবারেই পরিত্যক্ত ওই কুঁড়েঘরটা। আশপাশে আর ও কয়েকটা ছিল। কেউ নেই কোথাও। সবক’টাই খালি। শীত পড়ে গিয়েছে বলে হয়তে সকলেই সেগুলি ফেলে রেখে সমতলের নিরাপদ জায়গায় নেমে গিয়েছেন।


এই সেই ভয়ঙ্কর পাহাড়।

নিউজিল্যান্ডের সাউথ আইল্যান্ডে ফিওর্ডল্যান্ড ন্যাশনাল পার্কে রোটেবার্ন পাহাড়চূড়োয় ওঠার জন্য সঙ্গী আন্দ্রেঁজকে নিয়ে রওনা হয়েছিলেন পাভলিনা, গত ২৭ জুলাই। কিন্তু দু’দিন পর মধ্য শীতের ঘন কুয়াশা ও প্রচণ্ড তুষার ঝড়ে তাঁরা দু’জনেই নিখোঁজ হয়ে যান। তাঁরা পথ হারিয়ে ফেলেন। খুঁজতে শুরু করেন চূড়োয় ওঠার আদত পথ। তারই মধ্যে অতল খাদে পড়ে গিয়ে চির দিনের জন্য হারিয়ে গেলেন আন্দ্রেঁজ। ঘন কুয়াশা আর তুষার ঝড়ের মধ্যে দিয়ে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না পাভলিনা। এই ভাবে তিন-তিনটে রাত কাটিয়ে ৩২ কিলোমিটার দূরে ওই কুঁড়ে ঘরটি খুঁজে পেয়েছিলেন পাভলিনা।

সদ্যই বেঁচে ফিরে এসেছেন পাভলিনা। সাংবাদিকদের ডেকে শুনিয়েছেন গায়ে কাঁটা দেওয়া এই কাহিনী। ভাগ্যিস, পাভলিনার কাছে ছিল পর্যাপ্ত খাবারদাবার, জ্বালানি কাঠ আর গ্যাস! ছিল একটা পাহাড়ে চড়ার রেডিও। বিপদে পড়লে যার মাধ্যমে জানানো যায় আর তার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নির্দেশও পাওয়া যায়। কিন্তু, পাভলিনার সমস্যাটা হয়েছিল অন্য জায়গায়। তিনি এক বর্ণ ইংরেজি বুঝতে পারেন না। আর রেডিওয় সব নির্দেশই আসে ইংরেজি ভাষায়।


পাহাড়ে যে কুঁড়েঘরে এক মাস কাটিয়েছেন পাভলিনা, একা।

পাভলিনা জানিয়েছেন, ওই কুঁড়ে ঘরটি থেকে বেরিয়ে তিনি সমতলে নেমেও আসতে পারছিলেন না। কারণ, ঘরটির ভেতর থেকেই দেখছিলেন, কী ভীষণ ভাবে তুষার ঝড় বইছে বাইরে। হাড়জমানো ঠান্ডায় তাঁর হাত, পা সবই অসাড় হয়ে গিয়েছিল। ফলে, সেই তুষার ঝড় না থামা পর্যন্ত টানা একটা মাস পাভলিনাকে থাকতে হয়েছিল ওই নির্বান্ধব পাহাড়চূড়োয়। ওই কুঁড়ে ঘরে। মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া হেলিকপ্টারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পাহাড়ে চড়ার ‘এইচ’ কুঠার দিয়ে নিশানা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।


পাহাড়ে ওঠার আগে পাভলিনার সঙ্গে আন্দ্রেঁজ (ডান দিকে)

কোনও প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়াই পাহাড়চূড়োয় উঠেছিলেন পাভলিনা ও আন্দ্রেঁজ। পরে পুলিশের নজরে পড়ে পাহাড়ের তলায় বেশ কিছুটা দূরে একটা গাড়ি পড়ে রয়েছে বেশ কিছু দিন ধরে। পুলিশের ধারণা হয়, কেউ বা কারা ওই গাড়িতে চেপে এসে পাহাড়ে চড়েছে। কিন্তু বহু দিন গাড়িটি ওখানে পড়ে থাকায় পুলিশের সন্দেহ হয়, পাহাড়ে নিশ্চয়ই কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেই মতো পাহাড়চূড়োয় পাঠানো হয় হেলিকপ্টার। তখনই পাহাড়চূড়োর কুঁড়ে ঘরটি থেকে হাতের ‘এইচ’ কুঠারটি তুলে পাভলিনাকে চিৎকার করতে দেখেন হেলিকপ্টারে থাকা উদ্ধারকারী দলটির সদস্যরা। তার পর উদ্ধার করা হয় পাভলিনাকে। পরে ওই পাহাড় থেকে একটি মৃতদেহও উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সেটি আন্দ্রেঁজেরই কি না, পুলিশ সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। তদন্ত শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন- দুর্ঘটনা-বিমার টাকা পেতে নিজের হাত, পা কেটে ফেললেন মহিলা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE