Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
হত ১৪০০

গাজার বিদ্যুৎহীন হাসপাতালে মৃত্যু হল মিরাকল শিশুকন্যার

স্কুলবাড়ির মেঝেতে এখনও চাপ চাপ রক্তের দাগ। তিন বছরের ছোট্ট মেয়েটার রক্তে ভেজা জামাটা আঁকড়ে এক নাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছেন মা শাজিয়া। ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ আসছে কংক্রিটের ধ্বংসাবশেষের আনাচ কানাচ থেকে। গত কাল গাজার জেবালিয়ার ওই স্কুলেই মারণ হামলা চালায় ইজরায়েলি সেনা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ২০ জনের। শাজিয়া জানালেন মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে সারারাত তাকে আঁকড়ে বসেছিলেন। রাতভর বোমার আওয়াজ এসেছে আশপাশের এলাকা থেকে।

মেয়ের মৃতদেহ আঁকড়ে কান্না মায়ের।

মেয়ের মৃতদেহ আঁকড়ে কান্না মায়ের।

সংবাদ সংস্থা
গাজ়া শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৪ ০২:২২
Share: Save:

স্কুলবাড়ির মেঝেতে এখনও চাপ চাপ রক্তের দাগ। তিন বছরের ছোট্ট মেয়েটার রক্তে ভেজা জামাটা আঁকড়ে এক নাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছেন মা শাজিয়া। ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ আসছে কংক্রিটের ধ্বংসাবশেষের আনাচ কানাচ থেকে। গত কাল গাজার জেবালিয়ার ওই স্কুলেই মারণ হামলা চালায় ইজরায়েলি সেনা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ২০ জনের।

শাজিয়া জানালেন মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে সারারাত তাকে আঁকড়ে বসেছিলেন। রাতভর বোমার আওয়াজ এসেছে আশপাশের এলাকা থেকে। তবে সে রাত আর কাটল কই! সকাল হওয়ার আগেই আগুনের গোলায় ধ্বংস হয়ে গেল গোটা ত্রাণশিবিরটাই। চোখের সামনেই মেয়ের শরীরটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে দেখলেন। শাজিয়ার কথায়, “ঈদের দিন প্রার্থনা করেছিলাম মেয়েটার জন্য। আমাদের বাচ্চাগুলোকে অন্তত রেহাই দিক, আর পরের দিনেই মেয়েটাকে কেড়ে নিল ওরা! আর তো প্রার্থনা করারও কিছু রইল না!”

প্যালেস্তাইনের স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, ২২ দিনের ইজরায়েলি হানায় নিহতের সংখ্যা ১৪০০ ছাড়িয়েছে। শহরের একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র ভেঙে পড়ায় এখনও অন্ধকারাচ্ছন্ন গাজা। মধ্য গাজার শিফা হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, আজ সকালে মৃত্যু হয়েছে গাজার ‘মিরাকল’ শিশুকন্যার। আসন্নপ্রসবা মায়ের মৃত্যুর পরে তাঁর শিশুকন্যাকে বাঁচিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। মেয়ের নামকরণও হয়েছিল মায়ের নামে। শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি দীর্ঘ সময় হাসপাতাল বিদ্যুৎহীন থাকায় ‘মিরাকল’ শিশুর চিকিৎসা থামিয়ে দিতে বাধ্য হন চিকিৎসকেরা।

গাজার ত্রাণশিবিরগুলোতে এখন হাজার হাজার শাজিয়ার বাস। সন্তান-পরিবার হারিয়েছেন। গত কাল রাষ্ট্রপুঞ্জের স্কুলে হামলার পর গাজা-পরিস্থিতির নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনেই হাউহাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাষ্ট্রপুঞ্জের যুদ্ধ বিষয়ক প্রতিনিধি ক্রিস্টোফার গানেস। এত শিশুর এমন ভয়ানক মৃত্যু বোধহয় আগে দেখেনি কেউ। গানেস কাল রাতেই টুইট করেন, “গাজা আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিচ্ছে। আমাদের কর্মীরা মারা যাচ্ছেন। শিবিরগুলো উপচে পড়ছে। এ সবের শেষ কোথায়?”


গাজার হাসপাতালে মিরাকল কন্যা।

এই যুদ্ধের শেষ যে সত্যিই নেই তা আজও এক বার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি যে আন্তর্জাতিক আবেদনের ধার ধারেন না তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আজ তেল আভিভে একটি সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “আমরা সংঘর্ষ বিরতির কোনও প্রস্তাব মানব না। ইজরায়েলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না করে আমরা গাজা থেকে সরছি না।” গত কাল রাতে ঘণ্টা চারেকের একটি জরুরি বৈঠকে বসে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা। হামাসের সব সুড়ঙ্গ ধ্বংস না করা পর্যন্ত সেনার পিছু না হটার সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে। প্যালেস্তাইনি জঙ্গিগোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ জারি রাখতে আজ প্রশাসনের কাছে অতিরিক্ত ১৬ হাজার রিজার্ভ সেনা এবং অস্ত্রের আর্জি জানিয়েছে ‘ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্স’ (আইডিএফ)। ৮ জুলাই থেকে গাজায় ইজরায়েলি সেনার হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এই নিয়ে মোট ৮৬ হাজার রিজার্ভ সেনা গাজায় নামানো হয়েছে।

আমেরিকার তরফে আগেও একাধিক বার গাজায় হামলা বন্ধের আর্জি জানানো হয়েছে। নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। গত কাল রাষ্ট্রপুঞ্জের স্কুলে হামলার নিন্দা করেছে মার্কিন প্রশাসনও। তবে আজ পেন্টাগন সূত্রকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচারিত একটি খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ইজরায়েলকে নতুন করে অস্ত্র পাঠিয়েছে আমেরিকা। সূত্রের খবর, গত কাল আমেরিকার কাছে আরও অস্ত্র পাঠানোর আর্জি জানায় আইডিএফ। গাজায় বলপ্রয়োগের নিন্দা করার পরেও অস্ত্র বিক্রি কেন?

উত্তর মেলেনি। তবে পেন্টাগনের প্রেস সচিব জন কিরবে আজ বলেন, “ইজরায়েলের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা অস্বীকার করতে পারি না। ইজরায়েলের সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়বদ্ধতা আমাদের আছে।”

এএফপি এবং ফাইল চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

death toll Gaza 1,400
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE