Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মার্কিন দৈনিকে তথ্য ফাঁস কেন, ফুঁসছেন ট্রাম্প

কোনও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের আগেই ম্যাঞ্চেস্টার বিস্ফোরণের আত্মঘাতী জঙ্গির নাম বেরিয়ে গিয়েছিল প্রথম সারির এক মার্কিন দৈনিকে। এ নিয়ে ব্রিটিশ প্রশাসন উষ্মা প্রকাশ করতেই নিজের দেশের সংবাদমাধ্যমকে তুলোধোনা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৭ ০২:০৩
Share: Save:

কোনও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের আগেই ম্যাঞ্চেস্টার বিস্ফোরণের আত্মঘাতী জঙ্গির নাম বেরিয়ে গিয়েছিল প্রথম সারির এক মার্কিন দৈনিকে। এ নিয়ে ব্রিটিশ প্রশাসন উষ্মা প্রকাশ করতেই নিজের দেশের সংবাদমাধ্যমকে তুলোধোনা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কী করে তথ্য ফাঁস হলো, তা জানতে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে তদন্ত করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

নির্বাচনের আগে থেকেই মার্কিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাপে-নেউলে সম্পর্ক ট্রাম্পের। বিভিন্ন খবরের কাগজ ও টিভি চ্যানেলকে নাম করে করে তিরস্কার করেন তিনি। যোগ দেন না হোয়াইট হাউসের সাংবাদিকদের বিশেষ নৈশভোজেও। যে-মার্কিন দৈনিকে ম্যাঞ্চেস্টার হামলা নিয়ে নানা তথ্য ফাঁস হয়েছে, তাদের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক খুবই খারাপ!

ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে এসেছেন ট্রাম্প। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশের সংবাদমাধ্যমে বারবার তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। যে কোনও দেশেই এ ধরনের তথ্য ফাঁস জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক।’’ ট্রাম্প হোয়াইট হাউস দখল করার পরে প্রথম যে-রাষ্ট্রনেতা আমেরিকায় এসে দেখা করেছিলেন, তিনি হলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। সেই কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘ব্রিটেনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই গভীর। সত্যি বলতে কী, অন্য কোনও দেশের সঙ্গে আমরা এত ঘনিষ্ঠ নই। এ ধরনের তথ্য ফাঁসের ঘটনা খুবই ন্যক্কারজনক।’’

এই তথ্য ফাঁসের জেরে ভবিষ্যতে আমেরিকার সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান আর করা হবে কি না, তা নিয়ে ব্রিটিশ প্রশাসনের অন্দরে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ব্রাসেলসেই কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন টেরেসা মে। তবে ট্রাম্পের বিবৃতির পরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষতে কিছুটা মলম পড়ল বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা।

ম্যাঞ্চেস্টার বিস্ফোরণের পরে ব্রিটিশ তদন্তকারীরা প্রথম থেকেই বলছিলেন, তাঁদের কাছে জঙ্গি সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে তাঁরা এই মুহূর্তে সেগুলো প্রকাশ্যে আনছেন না। তার পরেও মার্কিন দৈনিকে আত্মঘাতী সেই জঙ্গি সলমন আবেদির নাম প্রকাশ করা হয়। এ দেশের সন্ত্রাসদমন বিশেষজ্ঞেরা বলেন, চক্রীর নাম প্রকাশের ক্ষেত্রে অন্তত ৩৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করাই দস্তুর। যাতে পরে ওই সন্দেহভাজনের পরিবার, বন্ধুবান্ধবকে চমকে দেওয়া যায়। শুধু তা-ই নয়, ফরেন্সিক তদন্তে উঠে আসা বেশ কিছু তথ্যও ফাঁস হয়ে গিয়েছে মার্কিন দৈনিক মারফত।

গত সোমবার রাতে ম্যাঞ্চেস্টার এরিনায় মার্কিন পপ তারকা আরিয়ানা গ্রান্ডের অনুষ্ঠানের পরে বিস্ফোরণে যে-বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটি সম্পর্কেও বেশ কিছু স্পর্শকাতর তথ্য বেরিয়ে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগেই প্যারিস ও ব্রাসেলসের জঙ্গি হামলায় একই ধরনের বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল। এ ধরনের তথ্য প্রথমে মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ায় বিস্তর চটে যান ব্রিটিশ গোয়েন্দারা। ব্রিটিশ পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে যে-প্রমাণ উদ্ধার করেছে, তার প্রায় সবটাই ফাঁস হয়ে গিয়েছে বলে দাবি। বেরিয়ে গিয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছবিও। তার মধ্যে রয়েছে ফেটে যাওয়া বোমার অংশ, একটি রুকস্যাক এবং ডিটোনেটরের ছবি। প্রাথমিক তদন্তে ব্রিটিশ পুলিশ অনেকটাই তথ্য জেনেছিল। সলমন আবেদি বাঁ হাতে ছোট্ট ডিটোনেটর নিয়ে ঢুকেছিল— এমন তথ্যও হাত গলে বেরিয়ে গিয়েছে। ছবিগুলো থেকে জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, বোমায় থাকা নাট এবং স্ক্রু এরিনার দরজা এবং দেওয়াল ভেদ করে ঢুকে যায়। আবেদি ভিড়ের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল। এরিনা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে তার শরীরের উপরের অংশ উড়ে গিয়ে পড়ে। এই ধরনের তথ্য প্রকাশের কোনও প্রয়োজন ছিল না বলেই মনে করছে ব্রিটিশ পুলিশ। তাদের বক্তব্য, এতে সাধারণ মানুষ আরও বিচলিত হবে। তদন্ত প্রক্রিয়াতেও বাধা তৈরি হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE