Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কিউবা চুক্তি বাতিলের জেরে চাপ ঘরে-বাইরে

বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা তো বটেই, তাঁর এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন রিপাবলিকান সেনেটরদেরও একটা বড় অংশ। মোদ্দা কথা একটাই— কিউবার সঙ্গে এ ভাবে রাতারাতি চুক্তি বাতিলে আখেরে মাসুল গুনতে হবে আমেরিকাকেই। ডকে উঠবে বাণিজ্য। আর সেই ফাঁক গলে কিউবার বাজার দখল করবে অন্যরা!

ছবি: এএফপি

ছবি: এএফপি

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ০৩:০২
Share: Save:

হাভানাকে ‘না’ বলে ফের চাপ বাড়ল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা তো বটেই, তাঁর এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন রিপাবলিকান সেনেটরদেরও একটা বড় অংশ। মোদ্দা কথা একটাই— কিউবার সঙ্গে এ ভাবে রাতারাতি চুক্তি বাতিলে আখেরে মাসুল গুনতে হবে আমেরিকাকেই। ডকে উঠবে বাণিজ্য। আর সেই ফাঁক গলে কিউবার বাজার দখল করবে অন্যরা!

রিপাবলিকান সেনেটর রিক ক্রফোর্ড যেমন আজ বলেই দিলেন, ‘‘সর্বনাশ হয়ে গেল গোটা দেশের। বিশেষত গ্রামীণ আমেরিকার। বারাক ওবামার আমলে যেমনটা চুক্তি হয়েছিল, তাতে কিউবার বাজার আমাদের কাছে একটা বড় ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছিল। তা তো গেলই, কিউবা চুক্তি বাতিল করে জাতীয় নিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।’’ তাঁর যুক্তি, আমেরিকা সরে যাওয়ায় কিউবার দিকে এ বার অবধারিত ভাবে হাত বাড়াবে ইরান, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, চিনের মতো দেশ।

আরও পড়ুন: ওবামার কিউবা চুক্তি বাতিল ট্রাম্পের

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আজ তোপ দেগেছে রাউল কাস্ত্রোর সরকারও। ওবামার সই করে যাওয়া চুক্তিকে ‘একতরফা’ বলে গত কাল ট্রাম্প যে ভাবে তা বাতিল করেছেন, আজ তার কড়া নিন্দা করে হাভানা জানিয়েছে, ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের পরেও তারা আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, নয়া কোনও নিষেধাজ্ঞার জেরে তারা ভয়ে কুঁকড়ে থাকবে।

মায়ামির লিটল হাভানায় দেশছাড়া কিউবানদের এক সভায় চুক্তি বাতিলের কথা ঘোষণা করতে গিয়ে ট্রাম্প জানান, কিউবাকে আগে সব রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়ে দেশে অবাধ নির্বাচন করতে হবে। মানবাধিকার রক্ষা নিয়ে সতর্ক হতেই হবে হাভানাকে। আর এ সব শর্ত পূরণ না হলে, কিউবার সঙ্গে নতুন কোনও চুক্তি করবে না তাঁর প্রশাসন। কিউবা সরকার আজ এর প্রেক্ষিতেও একহাত নিয়েছে ট্রাম্পকে। বলা হয়েছে, আমেরিকা যদি কোনও ভাবে কিউবার আর্থ-সামাজিক বা রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের চেষ্টা করে, তা কোনও ভাবেই মেনে নেবে না তারা।

ট্রাম্প যদিও জানিয়েছেন, কিউবার সঙ্গে এখনই কূটনৈতিক সম্পর্কে দাঁড়ি টানছে না আমেরিকা। আপাতত কোপ পড়ছে শুধু ভ্রমণ আর আংশিক ভাবে বাণিজ্য খাতে। ওবামার উদ্যোগে দীর্ঘ প্রায় ৫ দশক পরে হাভানায় যে দূতাবাস খোলা হয়েছিল, তা চালু থাকবে। অব্যাহত থাকবে বাণিজ্যিক উড়ানও। তবে ‘সামরিক-সরকার চালিত’ কিউবান সংস্থার সঙ্গে বাণিজ্য আর কোনও ভাবেই নয়। পাশাপাশি, কিউবার সেনাকে যে সব মার্কিন নাগরিক টাকা পাঠান বলে অভিযোগ, তাঁদেরও এ বার ধরপাকড়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন ট্রাম্প।

কিন্তু কিউবা ভ্রমণে নিষেধের কড়াকড়ি কেন? আগাগোড়া ট্রাম্প-বিরোধী হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকান সেনেটর জেফ ফ্লেক আজ সেই প্রশ্ন তুলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন পাল্টা পদক্ষেপের। বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে মার্কিন নাগরিকদের অবাধ যাতায়াত সুনিশ্চিত করতে কংগ্রেসে ভোটাভুটি চাইছেন ফ্লেক। বিলের সেই খস়ড়ায় এরই মধ্যে সমর্থন
জুটেছে ৫৪ জন সেনেটরের। যার মধ্যে ৯ জন রিপাবলিকান।

মায়ামির কিউবানরা অবশ্য ট্রাম্পের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। গত কাল প্রেসিডেন্টের সভায় ছিলেন হোসে নাদাল। তাঁর কথায়, ‘‘নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে এনে উচিত কাজ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যে দেশের লোকেরা এখনও পরাধীন, অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, তাদের অন্য দেশ কেন অর্থ দিয়ে যাবে?’’ তাঁর মতো অনেকেরই দাবি, কিউবা সরকার তখন যা চেয়েছিল, চুক্তি সই করে ওবামা সবটাই তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু কিউবার মানুষ তার কানাকড়িও পায়নি। কাস্ত্রোর দেশকে তাই আর কোনও রকম ছাড় দিতে নারাজ তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cuba Policy Donald Trump Barak Obama
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE