Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ট্রাম্পের বর্ষপূর্তিতে ‘স্তব্ধ’ দেশ

ঠিক এক বছর আগে এই দিনেই আমেরিকার শীর্ষ পদে বসেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তার বর্ষপূর্তির দিনেই মার্কিন মুলুকে নেমে এল অন্ধকার। রাজকোষে পড়ল তালা। আর্থিক সঙ্কটে থমকে গেল সরকারি দফতরগুলোর কাজ।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৬
Share: Save:

ঠিক এক বছর আগে এই দিনেই আমেরিকার শীর্ষ পদে বসেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তার বর্ষপূর্তির দিনেই মার্কিন মুলুকে নেমে এল অন্ধকার। রাজকোষে পড়ল তালা। আর্থিক সঙ্কটে থমকে গেল সরকারি দফতরগুলোর কাজ।

আশঙ্কা অবশ্য ছিলই। ‘স্টপগ্যাপ ফান্ড’ বা স্বল্পকালীন বাজেটের প্রস্তাব ‘হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ’ বা মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে ২৩০-১৯৭ ভোটে পাশ হয়েছিল বৃহস্পতিবার। কিন্তু উচকক্ষ অর্থাৎ সেনেটে কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিলই। শুক্রবার রাতে সরকারি খরচ চালানো নিয়ে সেনেটে ‘টেম্পোরারি স্পেন্ডিং’ পেশ করে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি। কিন্তু শেষমূহূর্তের বোঝাপড়াতেও কোনও লাভ হয়নি। রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ৫১-৪৯-এ। বিল পাশ করাতে হলে প্রয়োজন ছিল ৬০টি ভোট। ফলে জিততে হলে কিছু ডেমোক্র্যাটকে দলে টানতেই হতো ট্রাম্পকে। টোপও ফেলেছিলেন তাই। বাচ্চাদের স্বাস্থ্যবিমা খাতে অনুদানের সময়সীমা ৬ বছর অবধি বাড়ানোর প্রস্তাব দেন তিনি। ফলও পান। বেশ কিছু ডেমোক্র্যাটের ভোটও পান। কিন্তু কিছু রিপাবলিকান বেঁকে বসে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন জানান। ফলে শেষমেশ স্বল্পকালীন বাজেটের সমর্থনে প্রয়োজনীয় ৬০টি ভোট আর তুলতে পারেনি রিপাবলিকানরা। আর তাতেই এক রাতে আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে মার্কিন সরকার। মুখ পুড়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। চাপে রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাট দু’পক্ষই।

জাতীয় সুরক্ষা ও মানুষের নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিষেবা বাদ দিয়ে বাকি সব সরকারি দফতরের কাজই স্তব্ধ হতে বসেছে। বিনা বেতনে কাজ করছেন স্বাস্থ্য ও আইন মন্ত্রকের কর্মীরা। আশঙ্কা, সোমবারের মধ্যে সমস্যার মীমাংসা না হলে, কয়েকশো হাজার কর্মী অনির্দিষ্ট কালের জন্য বসে যাবেন। এই আর্থিক সঙ্কটের ফলে যে সব সংস্থাগুলো প্রভাবিত হবে, সেগুলি হল— অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবা, সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিষেবা, হাউজিং অ্যান্ড আর্বান ডেভেলপমেন্ট, শিক্ষা, বাণিজ্য, শ্রম এবং পরিবেশ রক্ষা। তবে স্কুল, সরকারি পরিবহণ, গ্রন্থাগার, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, বিমানবন্দর, ন্যাশনাল পার্ক, মিউজিয়াম, আদালত, ডাক পরিষেবা, আবগারি, সীমান্ত প্রহরা, শুল্ক ও অভিবাসন সংক্রান্ত পরিষেবাগুলো বহাল থাকবে।

ট্রাম্প অবশ্য আগেই আন্দাজ করেছিলেন জল কোন দিকে গড়াতে পারে। টুইট করেছিলেন, ‘‘ভাবগতিক ভাল লাগছে না।’’ ডেমোক্র্যাটদের নিন্দা করে তিনি বলেছিলেন, সরকারের সাফল্য সহ্য করতে না পেরেই এই কাজ করছে ওরা। ডেমোক্র্যাটদের দাবি ছিল, আট লক্ষ অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ী করতে হবে। ‘ড্রিমার’দের হয়েও দাবি জানিয়েছে তারা। শিশু অবস্থায় মার্কিন মুলুকে এসেছিল তারা। কিন্তু এখনও বেআইনি অভিবাসী হয়েই রয়ে গিয়েছে আমেরিকায়। আগামী মার্চ মাসে শেষ হয়ে যাচ্ছে তাদের আইনি নিরাপত্তার সময়সীমা। সে ক্ষেত্রে অন্তত ৭ লক্ষ তরুণ অভিবাসীকে হয়তো আমেরিকা ছাড়তে হবে। রিপাবলিকানদের অভিযোগ, আমেরিকান স্বার্থে আঘাত করে অভিবাসীদের জন্য গলা ফাটাচ্ছেন ডেমোক্র্যাটরা। কোনও শর্তই মানতে রাজি হননি রিপাবলিকানরা। দু’পক্ষই টানা একে অপরকে বিঁধে গিয়েছে।

গত কাল গভীর রাতে বিতর্ক চলছিল সেনেটে। সমাধানে পৌঁছতে বাড়তি ৯০ মিনিট সময় দেন সেনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককনেল। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাত ছুঁতেই, ক্যালেন্ডারে দিন বদলে যেতেই, ‘শাটডাউন’ হয়ে যায়। এর আগে ২০১৩ সালে বারাক ওবামার জমানাতেও এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল আমেরিকা।

মার্কিন ‘অ্যান্টি-ডেফিসিয়েন্সি অ্যাক্ট’ অনুযায়ী এ ধরনের ফান্ডিং বিল পাশ না হলে রাজকোষ ফাঁকা হয়ে যায়। সরকারি দফতরে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ঘাটতি মেটাতে ‘স্টপগ্যাপ ডিল’ করা হয়। তবে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান, দু’পক্ষেরই আশা সোমবার অফিস খোলার আগে হয়তো সমাধান মিলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE