Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মাথায় ভ্রূণ! হতবাক ডাক্তাররা

চোখে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু সবই ঝাপসা দেখছিলেন তিনি। কানে কিছুই হয়নি। অথচ ঠিক মতো শুনতে পাচ্ছিলেন না। আর সেই সঙ্গে মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা। ২৬ বছরের মেয়ের কী হয়েছে, ভেবে কূল-কিনারা করতে পারছিলেন না বাবা-মা। মাথায় হাত চিকিৎসকদেরও। স্ক্যান করে দেখা যায়, ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় পড়ুয়া যামিনী কারানামের মাথার ভিতরে মটর দানার মতো কিছু একটা হয়েছে। চিকিৎসকেরা ধরেই নেন টিউমার।

সংবাদ সংস্থা
লস অ্যাঞ্জেলেস শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৫
Share: Save:

চোখে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু সবই ঝাপসা দেখছিলেন তিনি। কানে কিছুই হয়নি। অথচ ঠিক মতো শুনতে পাচ্ছিলেন না। আর সেই সঙ্গে মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা।

২৬ বছরের মেয়ের কী হয়েছে, ভেবে কূল-কিনারা করতে পারছিলেন না বাবা-মা। মাথায় হাত চিকিৎসকদেরও। স্ক্যান করে দেখা যায়, ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় পড়ুয়া যামিনী কারানামের মাথার ভিতরে মটর দানার মতো কিছু একটা হয়েছে। চিকিৎসকেরা ধরেই নেন টিউমার। কিন্তু বিস্ময়ের তখনও বাকি ছিল। অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে ডাক্তাররা দেখেন, কোথায় টিউমার...? মটর দানার মতো অত ছোট জিনিসও নয়। বরং মাথার মধ্যে রয়েছে হাড়-দাঁত-চুল-সহ একটা অপরিণত ভ্রূণ!

যামিনীর ঝাপসা দেখা, খেতে না পারা, কানে কম শোনা— এ সবের সূত্রপাত হয়েছিল গত বছরের শেষের দিকে। হায়দরাবাদের তরুণীটিকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে কী করা যায়, ঠিক করে উঠতে পারছিলেন না আমেরিকার ডাক্তাররা। মাথার ঠিক মধ্যিখানে পিনিয়াল গ্ল্যান্ডে টিউমার হয়েছে। অস্ত্রোপচার করা বেশ ঝুঁকির। এ দিকে, যন্ত্রণা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

অস্ত্রোপচার করা ঠিক হবে কি না, এই দোলাচলের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতেই হঠাৎ ডাক্তার এইচ শাহিনিয়ানের সন্ধান পায় যামিনীর পরিবার। ‘কি-হোল’ অস্ত্রোপচারের জন্য সুনাম আছে শাহিনিয়ানের। এর বিশেষত্ব হচ্ছে, মাথার খুব সামান্য অংশ ফুটো (কি-হোল) করে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে পৌঁছে যাওযা। আর তার পর ছুরি-কাঁচি চালিয়ে টিউমারটিকে বাদ দেওয়া।

যামিনীর মাথার পিছন দিকে একটা ছোট্ট গর্ত করেন শাহিনিয়ান। নিপুণ ভাবে একটা এন্ডোস্কোপ ঢুকিয়ে দেন খুলির মধ্যে। আর তার পরই চমক। শাহিনিয়ান দেখেন, টিউমার নয়। রয়েছে একটি ‘টেরাটোমা’ (এমন টিউমার, যার মধ্যে রয়েছে কলাস্তর বা টিস্যু। যা সাধারণত কোনও অঙ্গে থাকে)। চুল-দাঁত-হাড়ের মাংসপিণ্ড।

চিকিৎসকরা মনে করছেন, টেরাটোমাটি আসলে ওই তরুণীরই যমজ বোনের ভ্রূণ। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন যা কোনও ভাবে তাঁর শরীরে চলে যায়। আর তার পর, গত ২৬ বছর ধরে গোপনে রয়ে যায় যামিনীর দেহে।

তাঁর কর্মজীবনে হাজার আষ্টেক অস্ত্রোপচার করেছেন শাহিনিয়ান। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার টেরাটোমা-র মুখোমুখি হলেন। এ বারও সফল হয়েছেন তিনি। মাংসপিণ্ডটি বাদ দেওয়া হয়েছে যামিনীর মাথা থেকে। চিকিৎসকদের আশা, এ বার ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবেন মেয়েটি।

যাঁকে ঘিরে এত হইচই, কী বলছেন সেই যামিনী?

মুচকি হেসে বললেন—‘‘আমার দুষ্টু যমজ বোনটা গত ২৬ বছর ধরে খুব জ্বালাল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE