Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

গুলেনকে দাও, তুরস্কের তোপে আমেরিকা! দেশ জুড়ে গ্রেফতার ৬০০০

সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ করার পর ধর্মীয় নেতা গুলেন ফেতুল্লাহ ও তাঁর অনুগামীদের শেষ করে দিতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করা শুরু করে দিল তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোগানের সরকার। ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছে তুরস্ক জুড়ে।

এই ভাষণ থেকেই ফেতুল্লাহ গুলেনের বিরুদ্ধে এবং প্রকারান্তরে আমেরিকার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। ছবি: এএফপি।

এই ভাষণ থেকেই ফেতুল্লাহ গুলেনের বিরুদ্ধে এবং প্রকারান্তরে আমেরিকার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৬ ১৭:৫৫
Share: Save:

সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ করার পর ধর্মীয় নেতা গুলেন ফেতুল্লাহ ও তাঁর অনুগামীদের শেষ করে দিতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করা শুরু করে দিল তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোগানের সরকার। ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছে তুরস্ক জুড়ে। বিভিন্ন স্তরের আদালতের কয়েক হাজার বিচারক এবং বহু পদস্থ সেনাকর্তাকে ইতিমধ্যেই বরখাস্ত করে হয়েছে। তাঁদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। মার্কিন সরকারের কাছে অবিলম্বে গুলেনকে গ্রেফতার করে তুরস্কে ফেরত পাঠানোর দাবিও জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান।

তুরস্কের প্রেসিডেন্টের জোরালো দাবি, মার্কিন আশ্রয়ে থাকা ফেতুল্লাহ গুলেনই সেনা বিদ্রোহের মূল চক্রী। গুলেন দীর্ঘ দিন আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ায় থাকলেও, তুরস্কে তাঁর প্রভাব এখনও নেহাৎ কম নয়। ‘গুলেন মুভমেন্ট’ বলে একটা বড়সড় আন্দোলনের জন্মদাতা তিনি। তাঁর ধর্মীয় শিক্ষাতে গণতন্ত্র আর বিজ্ঞানের ছোঁয়া থাকে। তাঁর সমর্থকরা বিশ্বের ১০০টি দেশে হাজার খানেক স্কুল খুলে ফেলেছেন। তুরস্কেও গুলেন ভাবাদর্শের ছোঁয়ায় তৈরি হয়েছে হাসপাতাল, ব্যাঙ্ক, খবরের কাগজ, টিভি-রেডিও স্টেশনও। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সরকার এ বার ফেতুল্লাহ গুলেনের এই প্রভাবকে সব দিক থেকে শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। তুর্কি সেনাবাহিনীতে গুলেনের অনুগামীর সংখ্যা খুব বেশি নয়। তবে তুরস্কের বিচার ব্যবস্থায় গুলেনের অনুগামী প্রচুর। সেনা অভ্যুত্থানে টালমাটাল হয়ে ওঠা দেশকে সামলে নিয়েই বিচার বিভাগ থেকে গুলেনের সব অনুগামীকে রাতারাতি সরিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। এ পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৭৪৫ জন বিচারককে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতারও করে নেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর যে কর্তারা অভ্যুত্থানের চেষ্টায় যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ, তাঁদেরও বরখাস্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেনার সাধারণ কর্মী ও পদস্থ কর্তা, বিচার বিভাগের বরখাস্ত হওয়া কর্তা সহ গ্রেফতারির সংখ্যা ৬০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে বিবিসি সূত্রের খবর। বরখাস্ত এবং গ্রেফতার হওয়া উচ্চ পদাধিকারীদের মধ্যে তুরস্কের সর্বোচ্চ বিচারবিভাগীয় কর্তৃপক্ষ হাই কাউন্সিল অফ জাজেস অ্যান্ড প্রসিকিউটরস-এর পাঁচ সদস্যও রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যার মধ্যেই এরদোগানের হাতে ফিরে আসে দেশের পূর্ণ কর্তৃত্ব। তার পর তিনি ইস্তানবুলে নিজের বাসভবনের বাইরে জড়ো হওয়া অনুগামীদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। সেই ভাষণেই ফেতুল্লাহ গুলেনের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন এরদোগান। পেনসিলভেনিয়া নিবাসী গুলেনকে অবিলম্বে গ্রেফতার করুক আমেরিকা এবং ফেরত পাঠাক তুরস্কে। নিজের ভাষণে এই দাবিই তুলেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। ফেতুল্লাহ গুলেনের মতো মানুষকে যাঁরা আশ্রয় দেন, তাঁরা আসলে তুরস্কের শত্রু। নাম না করে আমেরিকাকেও এ ভাবে আক্রমণ করেছেন এরদোগান। গুলেনের নাম না করে এরদোগান বলেন, ‘‘পেনসিলভেনিয়ার উদ্দেশে আমার একটা বার্তা রয়েছে। তুমি এই দেশটার (তুরস্ক) বিরুদ্ধে যথেষ্ট ষড়যন্ত্র করে ফেলেছ। তোমার যদি সাহস থাকে, তা হলে এক বার নিজের দেশে ফিরে এস।’’

আমেরিকা অবশ্য প্রেসিডেন্ট এরদোগানের এই অভিযোগকে খুব গুরুত্ব দিতে নারাজ। মার্কিন বিদেশ সচিব জন কেরি জানিয়েছেন, ফেতুল্লাহ গুলেন আমেরিকায় বসে তুরস্কে সরকার ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছেন, এমন অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। তুরস্ক যদি গুলেনের বিরুদ্ধে প্রমাণ দাখিল করতে পারে, তা হলে নিশ্চয়ই পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। তবে আমেরিকার দীর্ঘ দিনের মিত্র তুরস্ক যে ভাবে ওয়াশিংটন বিরোধী রব তুলতে শুরু করেছে, তাতে ওবামার চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে। তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য। সিরিয়া এবং ইরাকে আইএস বিরোধী অভিযানেও তুরস্ক মার্কিন বাহিনীর শরিক। ফেতুল্লাহ গুলেনকে নিয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এখন যে অবস্থান নিচ্ছেন, তাতে ওয়াশিংটন-আঙ্কারা সম্পর্ক নেতিবাচক ছাপ পড়তে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: অভ্যুত্থানের নেপথ্যে হাত কি সেই নির্বাসিত ধর্মগুরু ফেতুল্লাহ গুলেন-এর

তুরস্কের স্থানীয় সময় অনুযায়ী শুক্রবার রাতে সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা শুরু হয়। ইস্তানবুলের এয়ারপোর্ট, দেশের টেলিভিশন স্টেশন সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দখল নেয় সেনা। বসফরাস প্রণালীর দু’পাশে অবস্থিত ইস্তানবুলের এশীয় এবং ইউরোপীয় অংশের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী দুই সেতু বন্ধ করে দেয় বিদ্রোহী সেনা। তুরস্কের সেনাপ্রধানকেও বিদ্রোহীরা আটক করে। সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ভাষণ দিয়ে বিদ্রোহীদের তরফে জানানো হয়, দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষা করতেই তাদের এই পদক্ষেপ। বিদ্রোহের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দীর্ঘক্ষণ প্রেসিডেন্ট এরদোগানের কোনও খোঁজ ছিল না। তবে সেনাবাহিনীর বড় অংশই যে অভ্যুত্থানের চেষ্টার বিরুদ্ধে, তা স্পষ্ট হওয়ার পরই এরদোগান দেখা দেন। কোনও এক অজ্ঞাত স্থান থেকে ফেসটাইম অ্যাপ ব্যবহার করে নিজের মোবাইল থেকে তিনি নিজের অনুগামীদের প্রতি এবং সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান বিরোধী অংশের প্রতি বিদ্রোহ ব্যর্থ করার আহ্বান জানান। সেনার পরস্পর বিরোধী দুই অংশের মধ্যে আগেই সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল। এরদোগানের আহ্বানের পর, সেনা আরও তেড়েফুঁড়ে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে। রাস্তায় নেমে পড়েন এরদোগান অনুগামী সাধারণ মানুষও। ফলে বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE