Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ বারও বাতিলের মুখে এভারেস্ট অভিযান

তাণ্ডব থেমেছে। আকাশ পরিষ্কার। আপাতত থেমেছে মৃত্যু মিছিল। তবু একটু জোরে হাওয়া দিলেও তাঁবু ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন অভিযাত্রীরা। চমকে উঠছেন পাথর পড়ার শব্দেও। দিনভর আশঙ্কার দৃষ্টি গেঁথে রয়েছে পামুরি আর নুপৎসে শৃঙ্গের ঢালে। ফের নেমে আসবে না তো বরফের স্রোত!

বিধ্বস্ত এভারেস্ট বেসক্যাম্পে উদ্ধারকাজে কপ্টার। ছবি: রয়টার্স।

বিধ্বস্ত এভারেস্ট বেসক্যাম্পে উদ্ধারকাজে কপ্টার। ছবি: রয়টার্স।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৩
Share: Save:

তাণ্ডব থেমেছে। আকাশ পরিষ্কার। আপাতত থেমেছে মৃত্যু মিছিল। তবু একটু জোরে হাওয়া দিলেও তাঁবু ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন অভিযাত্রীরা। চমকে উঠছেন পাথর পড়ার শব্দেও। দিনভর আশঙ্কার দৃষ্টি গেঁথে রয়েছে পামুরি আর নুপৎসে শৃঙ্গের ঢালে। ফের নেমে আসবে না তো বরফের স্রোত!

এভারেস্ট বেস ক্যাম্প থেকে দেবরাজ দত্ত জানালেন, বেস ক্যাম্পের এখনকার ছবিটা ঠিক এমনই। সোমবার সকালেই গোরকশেপ থেকে ফের বেস ক্যাম্পে এসেছেন তিনি। শেরপাদের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে সেখানে। তবে অভিযান চালানো আর সম্ভব হবে না বলেই আশঙ্কা তাঁর। বললেন, ‘‘বেশির ভাগ অভিযাত্রীই নীচে নেমে গিয়েছেন অভিযান বাতিল করে। সোমবার বেশ কিছু বিদেশিকে হেলিকপ্টারে করে নামিয়ে আনা হয়েছে বেস ক্যাম্পের ওপরের ক্যাম্প ওয়ান থেকে। রবিবার উদ্ধার হওয়া ২২টি মৃতদেহও কাঠমান্ডু পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে হেলিকপ্টারে। তবে এখনও বহু অভিযাত্রীর খোঁজ নেই।’’

সোমবার মৃতদের মধ্যে এক ভারতীয় মহিলার পরিচয় জানা গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মৃত রেণু ফতেদার জন্মসূত্রে কাশ্মীরি হলেও, থাকতেন অস্ট্রেলিয়ায়। আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো শৃঙ্গ জয় করার পর এভারেস্টের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। তুষার ধসের দাপটে মাত্র ৪৯ বছর বয়সেই ফুরিয়ে গেল স্বপ্ন।

অভিযান ‘বাতিল’, এ কথা এখনও সরকারি ভাবে ঘোষণা করেনি নেপাল সরকার। প্রশাসনিক সূত্রে বারবারই বলা হচ্ছে, সমতলটা যে ভাবে গুঁড়িয়ে গিয়েছে, তাতে এখনই এভারেস্ট অভিযান নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা যাচ্ছে না। তবে বেস ক্যাম্প এবং শেরপা সংগঠন সূত্রের খবর, সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তার উপরে এখনও থামেনি আফটার শকের ধাক্কা। সোমবার সন্ধেতেও ফের কেঁপেছে কাঠমান্ডু ও শহরতলি। এ সময় অভিযান চালিয়ে যাওয়া মানে ঝুঁকি বাড়ানো ছাড়া কিছুই নয়।

সায় দিেচ্ছন পর্বতোরোহী বসন্ত সিংহরায়ও। বললেন, ‘‘ফিরে আসাটা যতটা দুর্ভাগ্যের, বেঁচে থাকাটা তার থেকে অনেক অনেক বেশি সৌভাগ্যের ওঁদের কাছে। কাঠমান্ডুতে নেমে এসে ধ্বংসের চেহারাটা দেখলে হয়তো আরও বেশি করে সেটা বুঝতে পারবেন ওঁরা।’’ তাঁর কথায়, ‘‘জীবনের থেকে বড় কিছুই নয়।’’ হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)-এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসুও বললেন, ‘‘সারা নেপাল যে ভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে, শেরপাদের বাড়ি-ঘর-পরিবার যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাতে শেরপাদের এবং পর্বতারোহণ সংস্থাগুলির মতামতকেই সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে অভিযাত্রীর মত ব্রাত্য।’’

এভারেস্টের নর্থ কল দিয়ে অর্থাৎ তিব্বতের দিক থেকে সমস্ত অভিযান ইতিমধ্যেই বাতিল ঘোষণা করেছে চিন সরকার। অন্তত কুড়ি জন অভিযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে নর্থ কলের বেস ক্যাম্পে। আহত কমপক্ষে ৬০।

প্রকৃতির সঙ্গে যে গায়ের জোর খাটে না, সে কথা বিলক্ষণ জানেন আরোহীরাও। গোরকশেপ থেকে সুনীতা হাজরা জানালেন, ‘‘যে অবস্থা চোখের সামনে দেখেছি আর ফেরার পরেও মাঝে মাঝেই যে ভাবে কেঁপে উঠছে চারপাশ, ওপরে ওঠার কথা ভাবছিই না।’’ জানালেন, অনেক দামী যন্ত্রপাতি তুষার ধসে চাপা পড়ে গিয়েছে। তার কিছু যদি উদ্ধার করা যায়, সেই আশায় বেস ক্যাম্পে গিয়েছেন সুনীতার সঙ্গী শেরপা বিষ্ণু দাই। তিনি বেস ক্যাম্প থেকে ফিরলেই লুকলা-র দিকে নামা শুরু করবেন বারাসতের সুনীতা ও পলতার লিপিকা বিশ্বাস।

কোরিয়ার একটি দলের সঙ্গে অন্নপূর্ণা শৃঙ্গ অভিযানে গিয়েছিলেন এভারেস্ট ও কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গজয়ী পর্বতারোহী দীপঙ্কর ঘোষ। বিপর্যয়ের আঁচ সে ভাবে পৌঁছয়নি ওখানে। তবে বিপর্যয়ের খবর পেয়ে দীপঙ্কর ও তাঁর দলের সঙ্গীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অভিযান বাতিল করে নীচে নামবেন তাঁরা। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত লামজুং এলাকায় উদ্ধারকাজে হাত লাগাবেন।

পশ্চিমবঙ্গ যুবকল্যাণ দফতরের পর্বতারোহণ শাখার উপদেষ্টা উজ্জ্বল রায় জানান, তিন জন পর্বতারোহীর একটি দল কাঠমান্ডু গিয়েছে সোমবার দুপুরেই। হ্যাম রেডিও অপারেটরের চার জন উদ্ধারকারীর একটি দলও রওনা দিয়েছে। তাঁদের তরফে অম্বরীশ নাগবিশ্বাস বললেন, ‘‘নিজেরাই টাকাপয়সা জোগাড় করে যাচ্ছি।’’

এ বার হয়তো অভিযান হবে না। কিন্তু তাই বলে, আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেনি অভিযাত্রীদের। প্রত্যয়ী গলায় সুনীতা বললেন, ‘‘বেঁচে থাকলে আরও অনেক অভিযান হবে। অনেক পাহাড় বাকি আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE