বিপাকে ফেসবুক।
ঘোর বিপাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক। ব্যবহারকারীদের (ইউজার) ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত করার অভিযোগে ফেসবুকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর খবরেই নড়ে গিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট। দু’দিনে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের সম্পত্তি বেহাত হয়েছে মার্ক জুকেরবার্গ তথা ফেসবুকের। শুধু শেয়ারে ধস নামাই নয়, এর ফলে সামগ্রিক ভাবে ফেসবুকের উপর ব্যবহারকারীদের আস্থা কমবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মূল অভিযোগ ফেসবুকের সঙ্গে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামে এক রাজনৈতিক পরামর্শদাতা সংস্থার চুক্তি নিয়ে। অভিযোগ, ওই প্রতিষ্ঠানকে অ্যাপের মাধ্যমে নিজেদের বিপুল ব্যবহারকারীর তথ্য ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল ফেসবুক। যা এই সংস্থা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে প্রচারের কাজে লাগিয়েছে। ২০১৩ সালে তৈরি হওয়া এই ব্রিটিশ সংস্থাটিকে প্রায় দেড় কোটি ডলার অর্থ সাহায্য করেন রিপাবলিকান সমর্থক রবার্ট মের্কের। ফেসবুক তো বটেই, বিষয়টি সামনে আসায় নড়েচড়ে বসেছে ট্রাম্প প্রশাসনও। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
জুকেরবার্গ বা ফেসবুকের কোনও কর্তা তো বটেই, এই বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি প্রশাসনের কোনও কর্তাও। বলা হচ্ছে, প্রায় ৫ কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়েছে অ্যানালিটিকা। অভিযোগ ওঠায় কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা জানিয়েছে ফেসবুক। তবে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে অ্যানালিটিকা।
It is time. #deletefacebook
— Brian Acton (@brianacton) March 20, 2018
রিপাবলিকাল থেকে ডেমোক্র্যাট, দু’দলই ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছে। বেশ কয়েক জন সেনেটর তো ফেসবুক কর্তা মার্ক জুকেরবার্গকে অবিলম্বে জিজ্ঞাসাবাদের আর্জিও জানিয়েছেন। আমেরিকা তো বটেই, বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও।
এরই মধ্যে বিতর্ক বাড়িয়েছে হোয়াটসঅ্যাপের প্রাক্তন যুগ্ম অধিকর্তা ব্রায়ান অ্যাকটনের একটি টুইট। বুধবার সকালে অ্যাকটন টুইট করেন, “সময় হয়েছে ফেসবুককে বিদায় জানানোর। #ডিলিটফেসবুক।” তবে এই টুইট সাম্প্রতিক বিতর্ক নিয়ে, না কি এটা অ্যাকটনের নতুন কোনও সোশ্যাল অ্যাপের প্রচার নিয়ে, তা জানা যায়নি। ২০১৪ সালে ১৬০০ কোটি ডলারে হোয়াটসঅ্যাপ কেনে ফেসবুক। হোয়াটসঅ্যাপের তখনকার দুই মালিকের প্রথম জন জ্যান কৌউম ফেসবুকের সঙ্গে থেকে গেলেও টাকা নিয়ে নিজের আলাদা ব্যবসা শুরু করেন অ্যাকটন। মাসখানেক আগে সিগনাল নামে হোয়াটসঅ্যাপের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি সংস্থায় ৫ কোটি ডলার বিনিয়োগও করেন তিনি। তবে অ্যাকটনই প্রথম নন। গত বছর ফেসবুকের স্ট্র্যাটেজির বিরুদ্ধে সরব হন সংস্থার কর্তা চামাথ পালিহাপিটিয়া। ফেসবুক আমাদের সামাজিক বন্ধনগুলি ছিঁড়ে ফেলছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরে শিন পার্কার, জাস্টিন রোজেনস্টেইনের মতো ফেসবুক কর্তারাও সংস্থার স্ট্র্যাটেজির বিরুদ্ধে সরব হন।
আরও পড়ুন: চিনা হ্যাকারদের টার্গেট হোয়াটসঅ্যাপ, সতর্কবার্তা ভারতীয় সেনার
আর এই বিতর্কে ভয়ঙ্কর ধাক্কা খেয়েছে ফেসবুকের শেয়ার দর। এক ধাক্কায় দাম কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। একই সঙ্গে শেয়ারের দাম কমেছে গুগল, অ্যালফাবেটের মতো প্রযুক্তি সংস্থারও। কিন্তু শুধু শেয়ারের দাম কমাই নয়, এর ফলে ফেসবুকের উপর সাধারণ ভাবে ভরসা অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ। তাই যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টির নিষ্পত্তির জন্য মার্ক জুকেরবার্গের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy