Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সম্মান রক্ষার্থে কি খুন ভারতীয় তরুণী

ঘটনা ১৯ জুলাইয়ের। পুলিশ জানিয়েছে, উইম্বলডনে একটি বিলাসবহুল বাড়িতে থাকতেন সেলিন। তাঁর বান্ধবী পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তিনি সেলিনের বাড়ির একটি ঘরে শুয়েছিলেন। বাথরুমে স্নান করছিলেন সেলিন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৭ ০৪:৩৫
Share: Save:

আরবের এক মুসলিম যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সেলিন ডুখরানের। বছর উনিশের ওই তরুণীর বাড়ির লোকের একেবারেই পছন্দ ছিল না সেটা। কারণ সেলিনের পরিবার ছিল ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম। আরবের যুবকটির সঙ্গে বাড়ির মেয়ের প্রেম তাই মেনে নেননি তাঁরা। দিন কয়েক আগে দক্ষিণ পশ্চিম লন্ডনের অভিজাত কিংস্টন এলাকার একটি বাড়ির ফ্রিজ থেকে উদ্ধার হয় উনিশ বছরের সেলিনের গলা কাটা দেহ। মেরে ফেলার আগে ধর্ষণও করা হয় ওই কিশোরীকে। গত কাল উইম্বলডন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানির সময় সরকারি কৌঁসুলি বিনিতা রসকো জানান, পরিবারের সম্মান রক্ষার্থেই খুন করা হয়েছে সেলিনকে। শুধু তিনিই নন। আক্রান্ত হন তাঁর এক বান্ধবীও।

ঘটনা ১৯ জুলাইয়ের। পুলিশ জানিয়েছে, উইম্বলডনে একটি বিলাসবহুল বাড়িতে থাকতেন সেলিন। তাঁর বান্ধবী পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তিনি সেলিনের বাড়ির একটি ঘরে শুয়েছিলেন। বাথরুমে স্নান করছিলেন সেলিন। সেই সময় আচমকা দুই মুখোশ পরা দুষ্কৃতী বাড়িতে ঢুকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তাঁদের দু’জনকে অপহরণ করে। তাঁদের মুখে মোজা গুঁজে দেওয়া হয়েছিল। বাড়িতে সেই সময় অন্য কেউ ছিল কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। অপহরণ করার পরে প্রায় পাঁচ মাইল দূরে কিংস্টন এলাকার আর একটি বিলাসবহুল বাড়িতে তোলা হয় সেলিন ও তাঁর বান্ধবীকে। সেখানে দু’জনকে ধর্ষণ করার পরে সেলিন ও তাঁর বান্ধবীর গলা কেটে ফেলা হয়। সেলিনের মৃত্যু হলেও কোনও ভাবে তাঁর বান্ধবী সেই বন্দি দশা থেকে পালাতে সক্ষম হন। তিনিই পুলিশে খবর দেন। মধ্য কুড়ির ওই তরুণীর নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ। তাঁকে দক্ষিণ লন্ডনের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:বায়ুসেনার নিশানায় ছিলেন মুশারফরা

এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৩ বছরের মুজাহিদ আরশিদ ও ২৮ বছরের ভিনসেন্ট ট্যাপু নামে দুই ব্যক্তিকে। ভিনসেন্টের বিরুদ্ধে অবশ্য শুধুই অপহরণের অভিযোগ রয়েছে। ধর্ষণ, খুন ও খুনের চেষ্টার মামলা রয়েছে আরশিদের বিরুদ্ধে। কাল আদালতে হাজিরও করা হয়েছিল ওই দু’জনকে। কী কারণে সেলিন ও তাঁর বান্ধবীর উপর ওই দু’জন হামলা করেছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। সেলিন এই দু’জনকে চিনতেন কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

১৯৯৬ সালে লন্ডনেই জন্ম সেলিনের। তাঁরা তিন ভাই-বোন। সোশ্যাল মিডিয়ায় খুবই সক্রিয় ছিলেন এই মুসলিম তরুণী। মেক আপ নিয়ে সর্বক্ষণ প্রচুর টুইট করতেন। রোজার সময় নিজের উপবাস রাখা নিয়ে পোস্ট করেছিলেন তিনি। তাঁর শেষ টুইটও ঈশ্বরের প্রশংসা করেই। তাঁকে কেন এ ভাবে ধর্ষণ করে খুন করা হল, তার উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। যদিও সেলিনের বান্ধবীর দাবি, পরিবারের অমতে ওই আরব যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্যই খুন হতে হয়েছে সেলিনকে। গোটা ঘটনার পিছনে দায়ী সেলিনের পরিবারই। মেয়ের মৃত্যুর পরে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেননি সেলিনের বাবা-মা। পুলিশও তাঁদের পরিচয় জানায়নি। যে যুবকের সঙ্গে সেলিনের সম্পর্ক ছিল, তাঁর পরিচয়ও প্রকাশ্যে আসেনি।

তবে এক ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড আজ দাবি করেছে, কাল শুনানি চলার সময় ভরা আদালত কক্ষে এক মধ্যবয়সি দম্পতিকে দেখা গিয়েছিল। মহিলার মাথায় ছিল হিজাব। ধৃত ভিনসেন্ট তাঁদের দেখে মাথা নাড়ে। কী ভাবে ওই এশীয় দম্পতিকে ভিনসেন্ট চিনল, তা অবশ্য জানানো হয়নি সেই রিপোর্টে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE