Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চোখের জলে বিদায় আধুনিক শহর-রাষ্ট্রের রূপকারকে

সকাল থেকেই আকাশের মুখ গোমড়া। সঙ্গে অঝোর বৃষ্টি। কিন্তু তাতে কী? সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সেই ভোর থেকেই উপচে পড়ছে ভিড়। হাতে সাদা-লাল জাতীয় পতাকা, চোখে জল নিয়ে সিঙ্গাপুরবাসী আজ বিদায় জানালেন তাঁদের প্রিয় নেতা লি কুয়ান য়ুকে। আজই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হল আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকারের। গত সোমবার সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে মৃত্যু হয় ৯২ বছরের লিয়ের।

লি কুয়ান য়ুকে শ্রদ্ধা নরেন্দ্র মোদীর। রবিবার সিঙ্গাপুরে। ছবি: পিটিআই

লি কুয়ান য়ুকে শ্রদ্ধা নরেন্দ্র মোদীর। রবিবার সিঙ্গাপুরে। ছবি: পিটিআই

সংবাদ সংস্থা
সিঙ্গাপুর শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩০
Share: Save:

সকাল থেকেই আকাশের মুখ গোমড়া। সঙ্গে অঝোর বৃষ্টি। কিন্তু তাতে কী? সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সেই ভোর থেকেই উপচে পড়ছে ভিড়। হাতে সাদা-লাল জাতীয় পতাকা, চোখে জল নিয়ে সিঙ্গাপুরবাসী আজ বিদায় জানালেন তাঁদের প্রিয় নেতা লি কুয়ান য়ুকে। আজই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হল আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকারের।

গত সোমবার সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে মৃত্যু হয় ৯২ বছরের লিয়ের। বেশ কিছু দিন ধরে নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন এই শহর-রাষ্ট্রের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। গত ছ’দিন ধরে পার্লামেন্ট হাউসে শোয়ানে ছিল লিয়ের দেহ। প্রশাসন জানাচ্ছে, এই ক’দিনে প্রায় সাড়ে লাখ সিঙ্গাপুরবাসী এসে লিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। সেই ভিড় সামলাতে এ ক’দিন রীতিমতো হিমশিম খেয়েছে পুলিশ প্রশাসন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পার্লামেন্ট হাউসে কয়েক সেকেন্ডের জন্য দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছিল সাধারণ মানুষকে। তবু ভিড়ে ভাটা পড়েনি।

আজ সকাল থেকেও ছিল সেই একই ছবি। পার্লামেন্ট হাউস থেকে সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তায় আজ হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন। দেশের প্রিয় নেতার শেষকৃত্যে হাজির থাকতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোর ছ’টায় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পৌঁছেছিলেন শিক্ষিকা জেনি ইয়ো। আগে বসার সুযোগ পাবেন বলে সকাল সকাল ছাতা মাথায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ৫৮ বছরের এই প্রৌঢ়া। বললেন, “উনি (লি) সিঙ্গাপুরের জন্য সব করেছেন। শিক্ষা থেকে শুরু করে আবাসন, সব দিকে খেয়াল রেখেছেন এত দিন। ওঁকে শেষ বারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে আসব না?” জেনির মতো বাকিরাও আজ একই কথা বলেছেন। যে মানুষটা সারা বিশ্বকে এই অত্যাধুনিক সিঙ্গাপুর উপহার দিয়েছেন, তাঁকে শেষ বারের মতো দেখতে শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেও তাই দেশবাসী আজ রাস্তায় নেমেছিলেন।

সাধারণ মানুষের সঙ্গে সঙ্গে আজ সারা বিশ্বের এক ঝাঁক নেতা লিয়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও ভারত-সহ প্রায় চব্বিশটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রতিনিধি আজ সিঙ্গাপুরে এসেছিলেন। ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। আজ সকালেই সিঙ্গাপুরে পা রাখেন মোদী। লিয়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় নেতাকে হারালাম। উনি গোটা এশিয়াকে শিখিয়েছিলেন নিজের ভাগ্যে বিশ্বাস করতে।” ভারতের পূর্ব নীতিও যে লি-র দ্বারা অনেকখানি অনুপ্রাণিত ছিল, তা-ও আজ মনে করিয়েছেন মোদী। তিনি জানিয়েছেন, দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে লি-ই হলেন তাঁর মূল অনুপ্রেরণা। “ওঁর সাফল্য আমায় এই সাহস জোগায় যে এক দিন ভারতও সিঙ্গাপুরের মতো বদল আনতে পারবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE