Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

স্মৃতিতে ইরাক, ইয়েমেন নিয়ে তৎপরতা বাড়ছে নয়াদিল্লির

রাতের আকাশ চিরে উড়ে আসছে যুদ্ধবিমান। ধ্বংস করছে বিদ্রোহী শিয়া হুথি সম্প্রদায়ের দখলে থাকা ঘাঁটি। চার দিকে শুধু মৃত্যুভয়। এ সবের মাঝেই দিন কাটছে ইয়েমেনে কর্মরত সাড়ে তিন হাজার ভারতীয়ের। তাঁদের দেশে ফেরানোর চেষ্টা শুরু করেছে ভারত সরকার। কিন্তু যা পরিস্থিতি, তাতে তাঁদের নির্বিঘ্নে দেশে ফেরানোটা বিদেশ মন্ত্রকের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। আরও জানা গিয়েছে, ওই ভারতীয়দের মধ্যে যে নার্সরা রয়েছেন, তাঁদের বেশিরভাগেরই পাসপোর্ট ও শংসাপত্র এখন নিয়োগকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হেফাজতে। তাঁদের ফেরার পথে এটাও বড় বাধা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০২:৪৬
Share: Save:

রাতের আকাশ চিরে উড়ে আসছে যুদ্ধবিমান। ধ্বংস করছে বিদ্রোহী শিয়া হুথি সম্প্রদায়ের দখলে থাকা ঘাঁটি। চার দিকে শুধু মৃত্যুভয়। এ সবের মাঝেই দিন কাটছে ইয়েমেনে কর্মরত সাড়ে তিন হাজার ভারতীয়ের।

তাঁদের দেশে ফেরানোর চেষ্টা শুরু করেছে ভারত সরকার। কিন্তু যা পরিস্থিতি, তাতে তাঁদের নির্বিঘ্নে দেশে ফেরানোটা বিদেশ মন্ত্রকের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। আরও জানা গিয়েছে, ওই ভারতীয়দের মধ্যে যে নার্সরা রয়েছেন, তাঁদের বেশিরভাগেরই পাসপোর্ট ও শংসাপত্র এখন নিয়োগকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হেফাজতে। তাঁদের ফেরার পথে এটাও বড় বাধা।

ওই নার্সদের বেশিরভাগই কেরলের বাসিন্দা। গত কাল পাসপোর্ট ও শংসাপত্র সংক্রান্ত বিষয়টি কেরলের মুখ্যমন্ত্রী উমেন চান্ডিকে জানিয়েছিলেন তাঁরা। সমস্যা সমাধানে যাতে অবিলম্বে ইয়েমেনের ভারতীয় দূতাবাস হস্তক্ষেপ করে, সে মর্মে সেখানকার অফিসারদের অনুরোধ জানান চান্ডি। কী ভাবে ওই ভারতীয়দের দেশে ফেরানো হবে, তা নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজেরও কথা হয়। সুষমা তাঁকে আশ্বস্ত করেন, ওই ভারতীয়দের প্রথমে জলপথে ইয়েমেনের

পড়শি দেশ জিবুতিতে আনা হবে। এ জন্য দু’টি জাহাজ পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে। তার মধ্যে একটি ইতিমধ্যেই পারস্য উপসাগরে রয়েছে। জিবুতি থেকে ভারতীয়দের বিমানে দেশে উড়িয়ে আনার কথা ভাবা হচ্ছে।

তবে ইয়েমেনের রাস্তাঘাটের এখন যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে সকলে যে জাহাজ অবধি পৌঁছতে পারবেন তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে তাঁদের স্থলপথে সৌদি আরবে নিয়ে আসার কথা পরিকল্পনা রয়েছে। তার পর সেখান থেকে ভারতে উড়িয়ে আনা হবে। কিন্তু বর্তমানে ইয়েমেনের যা পরিস্থিতি, তাতে এই পরিকল্পনাগুলি ঠিক কতটা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই গিয়েছে।

সে সন্দেহ আরও উস্কে দিচ্ছে ইরাকের স্মৃতি। বহুস্তরীয় কূটনীতির উপর ভিত্তি করে সেখান থেকে বহু ভারতীয়কে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারলেও এখনও আটকে রয়েছেন অনেকেই। সে দিক থেকে দেখলে ইয়েমেনের পরিস্থিতি সামলানো সুষমা স্বরাজের মন্ত্রকের কাছে মান বাঁচানোর লড়াই। নরেন্দ্র মোদী সরকার বিলক্ষণ জানে, ইয়েমেন থেকে ভারতীয়দের নির্বিঘ্নে ফেরাতে না পারলে, বিরোধীরা নতুন করে সমালোচনার সুযোগ পেয়ে যাবে।

এখন তাই যুদ্ধকালীন তৎপরতা। ইয়েমেনের ভারতীয় দূতাবাস ইতিমধ্যেই তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। অন্য দিকে, গত কাল দিল্লি ও তিরুঅনন্তপুরমে ‘কন্ট্রোল রুম’ খোলা হয়েছে। ইয়েমেনে আটকে থাকা ভারতীয়দের আত্মীয়রা সেখানে ফোন করে নিয়মিত খবরাখবর নিচ্ছেন। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন জানান, কয়েক বছর আগে যখন ইয়েমেনে প্রথম সমস্যা শুরু হয়েছিল, তখন সেখানে ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার ভারতীয় ছিলেন। গত জানুয়ারিতে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হওয়ায় ভারতীয় দূতাবাসের তরফে নির্দেশিকা

জারি করে বলা হয়েছিল, ওই ভারতীয়রা যেন যত দ্রুত সম্ভব ইয়েমেন ছেড়ে চলে যান। সে নির্দেশিকার পর যে বহু ভারতীয়ই ইয়েমেন ছেড়েছিলেন, তা সম্প্রতি জানতে পেরেছে বিদেশ মন্ত্রক। বাকি যে সাড়ে তিন হাজার ভারতীয় ইয়েমেনে রয়েছেন, তাঁরাও শীঘ্র দেশে

ফিরতে পারবেন বলে আশা বিদেশ মন্ত্রকের।

ইয়েমেনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লা সালের অনুগত শিয়া হুথি সম্প্রদায়ের সঙ্গে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবেদাব্বো মনসুর হাদির অনুগত সুন্নিদের সংঘর্ষের জেরে ইয়েমেন এখন রণাঙ্গন। প্রায় গোটা দেশের দখলই হুথিদের হাতে। সৌদি আরবে পালিয়ে গিয়েছেন হাদি।

হাদি তথা সুন্নিদের তরফে ইয়েমেনে লড়াইয়ে নেমেছে সৌদি আরব। গত কাল থেকে তাদের যুদ্ধবিমান ইয়েমেনে বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই সে হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৯ জন বাসিন্দা। অন্য দিকে, শোনা যাচ্ছে ইরান গোপনে হুথি শিয়াদের সমর্থন করছে। কূটনীতিকদের দাবি, ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ এখন আসলে সৌদি আরব বনাম ইরানের কর্তৃত্ব কায়েমের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।

সৌদি আরবের পাশে রয়েছে মিশর, জর্ডন, কুয়েত-সহ ১০টি আরব দেশ। ইয়েমেনের মাটিতে তাদের সেনাবাহিনী নামানো হবে কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে সৌদি আরব। এক হুথি নেতার অবশ্য পরিষ্কার হুমকি, “যদি কোনও বিদেশি সেনা দেশে ঢোকে, তা হলে ইয়েমেনকে অনুপ্রবেশকারীদের কবরস্থান বানিয়ে ছাড়ব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE