Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

আলিঙ্গন দৃঢ় হলেও উঠল না ভিসা, ব্যবসা বা জলবায়ু চুক্তি প্রসঙ্গ

মোদী-ট্রাম্পের বেশ কয়েক বার আলিঙ্গন অবশ্য দেখা গিয়েছে, হোয়াইট হাউসে অতিথিবৎসল ট্রাম্প দম্পতির সহৃদয় বিদায় জানানোর ফুটেজ দেখা গিয়েছে। কিন্তু এই সফর শেষে মোদী কার্যত শূন্য হাতে দেশে ফিরছেন বলেই মনে করছেন অনেক প্রবীণ কূটনীতিক।

সৌজন্য: হোয়াইট হাউসে নরেন্দ্র মোদীকে বিদায় জানাচ্ছেন সস্ত্রীক ডোনাল্ড ট্রাম্প। এএফপি

সৌজন্য: হোয়াইট হাউসে নরেন্দ্র মোদীকে বিদায় জানাচ্ছেন সস্ত্রীক ডোনাল্ড ট্রাম্প। এএফপি

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ০৪:০৭
Share: Save:

পাঁচ ঘণ্টার মোলাকাত। তার মধ্যে কুড়ি মিনিট নরেন্দ্র মোদী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প একান্তে। বাকি সময় দু’পক্ষের প্রতিনিধি দলের মধ্যে বৈঠক। হোয়াইট হাউসে নৈশভোজ। রোজ গার্ডেনে যৌথ বিবৃতি। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর তিন দিনের এই সফর সম্পর্কে প্রবীন কূটনীতিকেরা বলছেন, দু’পক্ষ থেকেই বন্ধুত্বের উষ্ণতার দীর্ঘ ঘোষণা আছে। কিন্তু ট্রাম্প জমানার এইচ ওয়ান বি ভিসা নীতি অথবা প্যারিস জলবায়ু চুক্তির মতো বিষয়গুলি তুলতে ব্যর্থ হলো ভারত।

মোদী-ট্রাম্পের বেশ কয়েক বার আলিঙ্গন অবশ্য দেখা গিয়েছে, হোয়াইট হাউসে অতিথিবৎসল ট্রাম্প দম্পতির সহৃদয় বিদায় জানানোর ফুটেজ দেখা গিয়েছে। কিন্তু এই সফর শেষে মোদী কার্যত শূন্য হাতে দেশে ফিরছেন বলেই মনে করছেন অনেক প্রবীণ কূটনীতিক। প্রাক্তন বিদেশসচিব কানওয়াল সিব্বল যেমন মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে, ভারত সম্পর্কে মার্কিন মনোভাবে কোনও পরিবর্তনই আসবে না।

মোদীর সফরের মুখে হিজবুল প্রধান সৈয়দ সালাউদ্দিনকে বিশেষ সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করল আমেরিকা। যৌথ বিবৃতিতেও তার নাম এল। কিন্তু সিব্বলের প্রশ্ন, দশ বছর আগেই তো হিজবুল মুজাহিদিনকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছিল আমেরিকা। এখন তার নেতাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করাটা কি নাটক নয়? অটলবিহারী বাজপেয়ী ও দেশে যাওয়ার আগেও দাউদ ইব্রাহিমকে বিশ্ব-সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করেছিল আমেরিকা।

আরও পড়ুন: ক্যামিলাকে খুনের হুমকি দেন ডায়ানা, দাবি নতুন বইয়ে

প্রাক্তন কূটনীতিকেরা শুধু নন, সাউথ ব্লকের অনেকেই মনে করছেন, মোদী আমেরিকা গিয়ে পাকিস্তানের সন্ত্রাসকে বড় বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছেন। চিন যে এলাকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছে, তা নিয়েও ট্রাম্পের কাছে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কান্নাকাটি করেছেন মোদী। প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদের বক্তব্য, পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক স্তরে রাখাটাই দিল্লির লক্ষ্য। তবু আমেরিকার কাছে গিয়ে নালিশ করাটা যেন, ‘মা আমাকে ও মারছে’ গোছের কাঁদুনি গাওয়া!

এ কথা ঠিক পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে চিনের সিল্ক রুট তৈরি নিয়ে ভারতের উদ্বেগের সঙ্গে মার্কিন প্রশাসন একমত হয়েছে। কিন্তু শিবশঙ্কর মেননের মতো কূটনীতিক মনে করেন, চিনের সঙ্গে রণং দেহি মনোভাব ভারতের বিদেশনীতির সাবেকি মূলমন্ত্র নয়। অনেক কূটনীতিক মনে করেন, চিনের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক থাকলেই বরং আমেরিকার কাছে দিল্লির গুরুত্ব বাড়ে। আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক চিনের উপরে চাপ বাড়ায়। অজিত ডোভাল ও জয়শঙ্কর এখন যে ভাবে চিনের সঙ্গে সংঘাতের কৌশল নিয়েছেন, তাতে ভারতের মার্কিন নির্ভরতা বেড়েছে।

ট্রাম্পের দরবারে মোদী

প্রাপ্তি


পাকিস্তান ‘সন্ত্রাসবাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল’, বলল আমেরিকা। ওবামা-জমানায় পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসের মদতদাতা’ বললেও এত কড়া তকমা আগে কখনও আমেরিকা দেয়নি।


‘বিপজ্জনক নন’ এ রকম ভারতীয় পর্যটকদের আমেরিকায় প্রবেশ অনেক সহজ হয়ে গেল। তবে কে ‘বিপজ্জনক নন’ তা ঠিক করবে আমেরিকাই।


রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের দাবিকে সমর্থন জানালেন ট্রাম্প। খুশি নয়াদিল্লি। ক্ষুব্ধ বেজিং।


আমেরিকার কথায়, ‘ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখা সব দেশেরই কর্তব্য।’ ইঙ্গিত বেজিংয়ের পেশি আস্ফালনের দিকেই।

কাঁটা


এইচ ১-বি ভিসা নিয়ে কোনও কথা হলো না। ফলে দুশ্চিন্তা কমছে না টাটা বা ইনফোসিসের মতো ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ও তাদের কর্মীদের।


গুগ্‌লের সিইও সুন্দর পিচাই, অ্যামাজনের সিইও জেফ বেজোস-এর মতো হাই প্রোফাইল কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মোদী। কিন্তু কেউই কোনও বড় মাপের লগ্নির স্পষ্ট আশ্বাস দেননি।

দু’দেশের মধ্যে অসামরিক পরমাণু চুক্তির বাস্তবায়ন দীর্ঘদিন ধরেই ঝুলে রয়েছে। তা নিয়ে কথা হয়েছে। তবে তিন পৃষ্ঠার সুদীর্ঘ যৌথ বিবৃতিতে আঞ্চলিক সন্ত্রাসের মোকাবিলা যতটা গুরুত্ব পেয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য ততটা পায়নি। আছে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ এলাকায় শান্তিরক্ষার কথা। উত্তর কোরিয়ার লাগাতার হুমকি থেকে শুরু করে আফগানিস্থানে নয়া কলেবরে সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা, নাম না করেও দক্ষিণ-চিন সাগর সমস্যার ইঙ্গিত— এই সবই ঠাঁই পেয়েছে বিবৃতিতে।

ভারত সরকারের দাবি, দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে মার্কিন কর্তাদের সক্রিয় করে তোলা ও যৌথ বিবৃতি দেওয়ানোটাও মোদীর সাফল্য। কূটনীতির জগতের অনেকেই কিন্তু বলছেন, বারাক ওবামা এক সময় বিষয়টি নিয়ে খানিকটা উৎসাহ দেখালেও চিন যে এই এলাকাটিকে বাড়ির পুকুর ভাবতে শুরু করেছে, তা নিয়ে জাপান বা ভারতের মাথাব্যথা থাকলেও ট্রাম্পের কোনও উৎসাহ নেই। বিবৃতিটি তাই নাম কা ওয়াস্তে।

রণেন সেন অথবা শ্যাম শরণের মতো কূটনীতিক প্রকাশ্যে কিছু না বললেও, তাঁরা পাকিস্তান সম্পর্কে আমেরিকার নীতি নিয়েও সতর্ক করেছেন। ট্রাম্পের প্রতিরক্ষা সচিব এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা দু’জনেই মার্কিন সেনাবাহিনীর লোক। এই অবস্থায় পাকিস্তানকে মার্কিন সেনার প্রতিরক্ষা সহায়তা কমছে কোথায়? প্রধানমন্ত্রীর এই আমেরিকা সফরের পরে বিদেশনীতি বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মোদীর আসল সমস্যা হলো, তিনি বিদেশনীতির দিকে নজর দেওয়ার চেয়েও পাকিস্তান ও চিনের বিরোধিতা করে নির্বাচনী রাজনীতির মোক্ষ লাভেই বেশি ব্যস্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE