ইরানের চাবাহার বন্দর। ফাইল চিত্র।
ইরানের ছাবাহারে বন্দর গড়ার জন্য তেহরানের সঙ্গে নয়াদিল্লির চুক্তি হতেই প্রতিক্রিয়া দিল ওয়াশিংটন। ওবামা প্রশাসনের ঘোষণা, আমেরিকা খুব সতর্ক নজর রাখছে এই ভারত-ইরান চুক্তির দিকে। ছাবাহার ঘোষণাপত্রের সবক’টি শর্ত খতিয়ে দেখা হবে।
ছাবাহারে ভারত যে বন্দর গড়ে তোলার চেষ্টায় রয়েছে, তা বিশ্বের কাছে অজানা নয়। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই চেষ্টা চলছিল। একাধিক কারণে ভারত এই বন্দর গড়ার চেষ্টায় ছিল। প্রথমত, পাকিস্তানের গোয়াদরে চিন যে বন্দর তৈরি করছে, তার পাল্টা প্রস্তুতি হিসেবে ভরাতকেও মধ্য এশিয়ার কোথাও বন্দর গড়তেই হত। দ্বিতীয়ত, আফগানিস্তানের পুনর্গঠনের জন্য ভারত সে দেশে যে পণ্য ও সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে, তা পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে পাঠানোই সুবিধাজনক। কিন্তু পাকিস্তান রাস্তা দিতে রাজি নয়। তাই ইরান হয়েই পণ্য ও সরঞ্জাম পাঠাতে হচ্ছে। তাই আফগানিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ দৃঢ় রাখতে ইরানে নিজস্ব বিনিয়োগে তৈরি বন্দর থাকা ভারতের পক্ষে খুবই সুবিধাজনক। তৃতীয়ত, ছাবাহার বন্দরের মাধ্যমে ইরান এবং মধ্য এশিয়ার অন্য দেশগুলির সঙ্গে ব্যবসা ও লেনদেন অনেক বাড়াতে পারবে ভারত।
এই তৃতীয় বিষয়টি নিয়েই আপত্তি রয়েছে আমেরিকার। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি রুখতে দীর্ঘ সময় সে দেশের উপর নানা নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছিল আমেরিকা। সম্প্রতি ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি স্থগিত করতে রাজি হওয়ায় একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। তার পরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইরান সফরে গিয়ে সে দেশের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে ঘোষণা করেছেন, ৩৩০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করে ছাবাহারে বন্দর গড়ে তুলবে ভারত। তেহরানে মোদীর এই ঘোষণা মার্কিন আইনসভায় স্বাভাবিক ভাবেই অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করার উপর এখনও বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে আমেরিকা। ভারত আদৌ সেই নিষেধাজ্ঞাকে সম্মান জানাচ্ছে কি না, মার্কিন আইনসভায় প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই। দ্রুত বদলাতে থাকা আন্তর্জাতিক সমীকরণের প্রেক্ষিতে ভারত এবং আমেরিকা পরস্পরের আরও কাছে আসা শুরু করেছে। ভারতকে ন্যাটো সদস্যদের সমান মর্যাদা দিতে মার্কিন কংগ্রেসে বিল পাশ হয়েছে। এহেন ভারত ইরানের উপর জারি থাকা মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে অগ্রাহ্য করলে আমেরিকার পক্ষে তা অস্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। তাই মার্কিন বিদেশ দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিশা দেসাই বিসওয়াল মার্কিন সেনেটে জানিয়েছেন, ‘‘ইরানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক কার্যকলাপের ক্ষেত্রে যে সব বিধিনিষেধ রয়েছে, সে ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে আমাদের (আমেরিকার) কথাবার্তা খুব স্পষ্ট ভাবেই হয়েছে।’’
আরও পড়ুন:
এশিয়ায় আগুন লাগাবেন না, ওবামাকে লাল চোখ দেখাল চিন
মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক সে দেশের আইনসভাকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছে, ভারত ইরানে বন্দর তৈরি করলেও এমন কিছু করবে না যা আমেরিকার অস্বস্তির কারণ হয়। তবে আমেরিকা যে বিষয়টিকে খুব হালকা ভাবে দেখছে না, তাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে। মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, ইরানে ভারত ঠিক কী কী কার্যকলাপে অংশ নিচ্ছে, সে দিকে আমেরিকা সতর্ক নজর রাখছে। ছাবাহার ঘোষণাপত্রের সবক’টি দিক মার্কিন প্রশাসন খতিয়ে দেখবে বলেও ওয়াশিংটন জানিয়েছে। তবে মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক সে দেশের আইনসভাকে এও জানিয়েছে যে ভারতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমেরিকা ওয়াকিবহাল। অর্থনৈতিক বিষয়, জ্বালানির অভাব মেটানো এবং নতুন বাণিজ্য পথ তৈরি করাই যে ভারতের মূল লক্ষ্য, তা আমেরিকা জানে বলে সে দেশের বিদেশ মন্ত্রক মন্তব্য করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy