কাশ্মীরে হিংসাত্মক কার্যকলাপ যখন তুঙ্গে, তখনই কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হয় সওয়াল করলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। —ফাইল চিত্র।
কাশ্মীর নিয়ে প্ররোচনা মূলক মন্তব্য করলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। গোটা পৃথিবীর মুসলিম সমাজকে কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালেন তিনি। ইরানের রাজধানী তেহরানে সোমবার ইদের নামাজে নেতৃত্ব দেন আয়াতোল্লা। সেখানে দেওয়া ভাষণেই ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা কাশ্মীর প্রসঙ্গ টেনে আনেন বলে অহলুলবাইত নিউজ এজেন্সি সূত্রে জানা গিয়েছে। কাশ্মীরের মানুষের উপর ‘অত্যাচার’ চালানো হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
আমেরিকা-সহ বিশ্বের এক বিরাট অংশ যখন ইরানের বিরুদ্ধে গুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে, তখন ভারত কিন্তু উল্টো পথে হেঁটে ইরানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করেছে। ভারত-ইরান বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বেশ নিবিড়। তেহরান বা নয়াদিল্লি সচরাচর পরস্পরের বিরুদ্ধে মন্তব্যও করে না। কিন্তু ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই সোমবার খুব স্পষ্ট করে জানালেন, ইরান কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীদের পাশে। কাশ্মীরের স্বাধীনতার পক্ষে খোলাখুলি সওয়াল করলেন তিনি। ইরান যে ভাবে কাশ্মীর সমস্যা সম্পর্কে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করল, সে ভাবে গোটা পৃথিবীর মুসলিম সমাজের উচিত কাশ্মীর সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করা, মন্তব্য আয়াতোল্লা আলি খামেনেই-এর।
ইদের জমায়েত থেকে যে ভাবে সোমবার কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য গোটা মুসলিম বিশ্বের কাছ থেকে সমর্থন চেয়েছেন আয়াতোল্লা আলি খামেনেই, তা ভারত-ইরান সম্পর্কে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা। ছবি: এএফপি।
কাশ্মীর সম্পর্কে যে মন্তব্য তিনি করেছেন, সে মন্তব্য যে মুখ ফস্কে বেরিয়ে আসা কোনও কথা নয়, তা-ও সযত্নে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন আয়োতোল্লা। ইদ জমায়েত শেষ হওয়ার পর টুইটারেও এ দিন তিনি একই বার্তা দিয়েছেন। আয়াতোল্লা আলি খামেনেই-এর টুইট, ‘‘গোটা মুসলিম বিশ্বের উচিত বাহরাইন, কাশ্মীর, ইয়েমেনের মানুষকে খোলাখুলি সমর্থন করা এবং যে সব অত্যাচারী রমজানের সময় মানুষকে আক্রমণ করলেন, তাঁদের নিন্দা করা।’’
আরও পড়ুন: ইদের দিনেও অশান্ত কাশ্মীর, পাথরের পাল্টা কাঁদানে গ্যাস!
কাশ্মীর প্রসঙ্গে এমন বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য আয়াতোল্লা যে সময়টাকে বেছে নিলেন, তা-ও খুব তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, কাশ্মীর উপত্যকায় এখন একটানা হিংসাত্মক বিক্ষোভ চলছে। নিরাপত্তা বাহিনীর উপর প্রায় রোজ হামলা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, যে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আমেরিকার অবস্থান ইরানের বিরুদ্ধে ফের কঠোর হয়েছে, সেই ট্রাম্পের সঙ্গেই সোমবার হোয়াইট হাউসে বৈঠক ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। ভেবেচিন্তেই এমন একটা দিনে এবং এমন একটা সময়ে কাশ্মীর বিতর্ক খুঁচিয়ে তুললেন আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। বলছে আন্তর্জাতিক মহল।
এই প্রথম বার ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা কাশ্মীর প্রসঙ্গে ভারতকে খোঁচা দিলেন, এমন নয়। ১৯৯০-এ প্রথম বার কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষে মুখ খুলেছিলেন আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। তার পরে ১৯৯৪ সালে ফের তিনি সন্ত্রাসবাদীদের পক্ষে মুখ খোলেন এবং কাশ্মীরিদের উপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন মঞ্চে ইরান কাশ্মীর সমস্যার কথা তুলে ধরবে বলেও সে সময় তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময়ের সঙ্গে বর্তমান সময়ের পার্থক্য রয়েছে। তখন ভারতের সঙ্গে ইরানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। পরবর্তী কালে ইরানের ঘোর দুঃসময়ে তেহরানের দিকে বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় নয়াদিল্লি। সে সহযোগিতা এখনও অক্ষুণ্ণ। এমন এক পরিস্থিতিতে আয়াতোল্লা আলি খামেনেই-এর মন্তব্য ভারত-ইরান সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে পারে বলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদদের আশঙ্কা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy