Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

অর্থের ভাঁড়ারে টান: জঙ্গিদের বেতন অর্ধেক করল আইএস

জঙ্গিদের বেতন প্রায় ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিল ইসলামিক স্টেট (আইএস)। শুধু সাধারণ জঙ্গিরাই নয়, সব স্তরেই বেতন অর্ধেক করে দিচ্ছে আইএস ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কোলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১৯:০৮
Share: Save:

চিনের অর্থনৈতিক সঙ্কটে বিশ্বের শেয়ার বাজার টালমাটাল। তেলের দাম হুহু করে কমছে। তার পরে আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের ক্রমাগত বিমান হানা। এই পরিস্থিতিতে জঙ্গিদের বেতন প্রায় ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিল ইসলামিক স্টেট (আইএস)। শুধু সাধারণ জঙ্গিরাই নয়, সব স্তরেই বেতন অর্ধেক করে দিচ্ছে আইএস। মঙ্গলবার আইএস-এর প্রকাশিত কিছু কাগজপত্র থেকে এমন তথ্য পাওয়া গিয়েছে। পাশাপাশি মঙ্গলবার ইরাকে আইএস-এর হিংসা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করল রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশন।

সিরিয়া ও ইরাক জুড়ে আইএস-এর বিস্তারের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে অর্থের অফুরান জোগান। সেই জোগানের বড় অংশ ছিল তেল। চোরাবাজারে তেল বেচে বছরে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার রোজগার করত আইএস। এই আয়ের একটি অংশ যেত জঙ্গিদের বেতনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইএস নাম লেখানোর হিরিকের পিছনে মতাদর্শের পাশাপাশি অর্থের প্রলোভনও বড় ভূমিকা নিয়েছে। এ বার সেই প্রলোভনেই বড়সড় কাটছাঁট করতে বাধ্য হল আইএস। তবে আগের মতো মাসে দু’বার অর্থ বিতরণ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে আইএস-এর প্রশাসন।

আইএস-এর অর্থের ব্যাপার দেখাশোনা করে বায়াত মাল আল-মুসলিমিন। সিরিয়ার রাক্কা থেকে এই তথ্যগুলি প্রকাশিত হয়েছে। আইএস-এর প্রতিপত্তি কমাতে ওই অঞ্চলে তেল উৎপাদনের পরিকাঠামোয় বিমান হানা চলছে। এতে এক দিকে, যেমন তেলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তেমনই তেলের উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কর্মীরাও পালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে আইএস-এর অর্থ জোগানের মূল উৎসেই আঘাত পড়েছে।

আইএস-এর অর্থের আর একটি উৎস কর সংগ্রহ। কিন্তু যে ভাবে আইএস-এর দখলে থাকা এলাকা থেকে মানুষ ঘর ছাড়ছেন তাতে সেই উৎসেও ভাটার টান। ফলে বাধ্য হয়েই আইএস কে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আর এই সংবাদে স্বস্তি প্রকাশ করেছে আমেরিকা। তেল উৎপাদন ক্ষেত্রগুলির উপরে হামলা আরও বাড়ানো হবে বলে হুমকি দিয়েছে আমেরিকা।

অন্য দিকে, গত কালই সামনে এসেছিল পূর্ব সিরিয়ার দেইর এল-জৌর-এর বালিঘিয়া শহরের প্রায় তিনশো জনকে হত্যা করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা। সরকারি আধিকারিক, সেনা আধিকারিক ছাড়াও সেই দলে ছিল অনেক নারী ও শিশুও। আজ, মঙ্গলবার রাষ্ট্রপু়্ঞ্জের মানবাধিকার কমিশন ইরাকে আইএস-এর হিংসা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করল। তাতে দেখা যাচ্ছে ১ জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ৩১ অক্টোবর ২০১৫ পর্যন্ত শুধু ইরাকেই আইএস হিংসায় প্রাণ গিয়েছে ১৮৮০০ জন সাধারণ নাগরিক। আহত হয়েছেন ৩৬ হাজার ২৫৪ জন আর ঘর ছেড়েছেন প্রায় ৩২ লক্ষ। এ দিন রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান জেইর রায়দ আল হুসেন এই রিপোর্টটি প্রকাশ করেন।

সিরিয়ার পশ্চিমাংশ দখল নেওয়ার পরে ইরাকে ঢুকে পড়ে আইএস। তাদের সামনে প্রায় উড়ে যায় ইরাকি সেনা। প্রধান ইরাকের পশ্চিমাংশে আনবার এবং নিনেভ প্রদেশ আইএস-এর দখলে চলে আসে। কিছু দিন আগে আনবার অঞ্চলে আইএস ঘাঁটি রামাদি ইরাকি সেনা পুনর্দখল করতে পারলেও নিনেভ প্রদেশের মসুল এখনও আইএস-এর দখলে রয়েছে। সেখানে থেকে পালিয়ে আসে মানুষদের সঙ্গে কথা বলে এই রাষ্ট্রপুঞ্জ এই রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে।

রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে অধিকাংশ মৃত্যুই হয়েছে আইইডি বিস্ফোরণ থেকে। এই রিপোর্টেই মেয়েদের উপরে যৌন নির্যাতন চালানোর অনেক প্রমাণ মিলেছে। বাদ যায়নি শিশুরাও। এই রিপোর্টই জানাচ্ছে শুধু মসুলেই ৯০০ শিশুকে অপহরণ করেছে আইএস। এই শিশুদের মগজ ধোলাই করে যুদ্ধে নামানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সব মিলিয়ে আইএস-এর যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ এনেছে রাষ্ট্রপুঞ্জরে মানবাধিকার কমিশন। এই অবস্থায় ঘরছাড়াদের দ্রুত ঘরে ফেরাতে ইরাকের সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন জেইর রায়দ আল হুসেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE