Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
কোয়েটায় হত ৬১, জখম ১২০

পুলিশ প্রশিক্ষণ কলেজে হামলার দায় নিল আইএস

ফের রক্তাক্ত কোয়েটা! গত কাল রাতে কোয়েটার পুলিশ প্রশিক্ষণ কলেজের হস্টেলের ব্যারাকে আচমকাই ঢুকে পড়ে তিন জঙ্গি। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায় তারা। তারপর তাদের মধ্যেই দু’জন জঙ্গি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়।

আহতকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী ও পুলিশ। ছবি:এপি।

আহতকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী ও পুলিশ। ছবি:এপি।

সংবাদ সংস্থা
করাচি শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৭
Share: Save:

ফের রক্তাক্ত কোয়েটা!

গত কাল রাতে কোয়েটার পুলিশ প্রশিক্ষণ কলেজের হস্টেলের ব্যারাকে আচমকাই ঢুকে পড়ে তিন জঙ্গি। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায় তারা। তারপর তাদের মধ্যেই দু’জন জঙ্গি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়। আর এক জন জঙ্গি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে। ওই ফিদাইন হামলায় এখনও পর্যন্ত নিহত অন্তত ৬১ জন। বেশির ভাগই হস্টেলের শিক্ষানবিশ।

এই প্রথম নয়। এর আগেও দু’বার কোয়েটার এই পুলিশ প্রশিক্ষণ কলেজে জঙ্গি হামলা হয়েছিল— ২০০৬ সালে ও ২০০৮ সালে। এ বার কারা এই হামলা চালিয়েছে, তা নিয়ে প্রথম দিকে ধোঁয়াশা ছিল। পাক প্রশাসনের তরফে প্রথমে জানানো হয়, লস্কর-ই-জাঙ্গভি আলামি গোষ্ঠী এই হামলা চালিয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের এই ধারণা উড়িয়ে দিয়ে মঙ্গলবার এই হামলার দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি গোষ্ঠী। আইএস প্রভাবিত ‘আমাক’ সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, হামলায় আইএস ‘যোদ্ধা’রা মেশিনগান, গ্রেনেড ব্যবহার করেছে। তার পর ভিড়ের মধ্যে নিজেদের উড়িয়ে দিয়েছে।

কোয়েটায় ফের এই হামলা কপালে ভাঁজ ফেলছে পাক প্রশাসনের। কারণ, চলতি বছর অগস্ট মাসে এই কোয়েটাতেই জঙ্গি হামলার বলি হয়েছিলেন প্রায় ৭০ জন। তখন হামলার দায় স্বীকার করেছিল তালিবানের জামাত-উর-অহরার গোষ্ঠী। সেই হামলার দায় নিয়েছিল আইএস-ও। কিন্তু পাক সেনার তরফে দাবি করা হয়, হামলার পেছনে আইএসের ভূমিকা নেই। কোয়েটার সেই হামলা ছাড়া পাকিস্তানে আরও বেশ কয়েকটা হামলার দায় নিয়েছিল আইএস। কিন্তু সব ক’টি দাবিই উড়িয়ে দিয়েছিল পাক সেনাবাহিনী।

কোয়েটার কালকের হামলার পরেও কিন্তু পাক সেনাবাহিনী বা প্রশাসন কিছুতেই স্বীকার করতে চাইছে না যে, এ দেশে ভাল ভাবেই জাল বিস্তার করেছে আইএস। একটি গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশে এমন কিছু জঙ্গিগোষ্ঠী আছে, যাদের সঙ্গে আইএসের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, পাকিস্তান সরকার দেশের মাটিতে আইএসের উপস্থিতি কোনও ভাবেই স্বীকার করতে চায় না।

সোমবার রাতে ঠিক কী হয়েছিল?

পুলিশ সূত্রে খবর, তখন ১১টা বেজে গিয়েছে। কোয়েটার পুলিশ প্রশিক্ষণ ব্যারাকে তখন ছিলেন প্রায় সাতশো জন আবাসিক। বেশির ভাগই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হস্টেলের গেটের পাশে ওয়াচ টাওয়ারে ডিউটিরত নিরাপত্তারক্ষীকে প্রথমে নিশানা করে জঙ্গিরা। ওই নিরাপত্তারক্ষীও জঙ্গিদের ঠেকাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারান। এর পর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে, মুখ কালো কাপড়ে ঢেকে তিন জঙ্গি হস্টেলের ভিতর ঢোকে। হস্টেলে ঢুকেই এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে দেয় তারা। আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে দেন হস্টেলের আবাসিকরা। বেশ কয়েক জনকে পণবন্দিও বানায় জঙ্গিরা। এর পর ওই হস্টেলের ভিতরেই দুই জঙ্গি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়। তৃতীয় জঙ্গি বিস্ফোরণ ঘটানোর আগেই পুলিশ অবশ্য তাকে খতম করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, হামলার কয়েক ঘণ্টা পরে, মঙ্গলবার সকালে, ওই কলেজ চত্বর ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। ভয়াবহ ওই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬১ জন। নিহতদের মধ্যে ২০ জন পুলিশকর্মী ও নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন। বাকিরা শিক্ষানবিশ। বালুচিস্তান প্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি টুইট করে জানিয়ছেন, আহত প্রায় ১২০ জন।

হামলার পরেই নিরাপত্তা বাহিনীর তোপের মুখে পড়েছে বালুচিস্তান সরকার। নিরাপত্তা বাহিনীর এক অফিসার জানিয়েছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ফাঁক ছিল। তা ছাড়া, ওই প্রশিক্ষণ কলেজের দেওয়াল মাটির তৈরি। সেই সুযোগটাই নিয়েছিল জঙ্গিরা। আগেও দু’বার ওই প্রশিক্ষণ কলেজে জঙ্গি হামলা হয়েছে। এক আবাসিক জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে বিশেষ অস্ত্র না থাকায় পাল্টা লড়াই চালাতে পারেননি তাঁরা। নিরাপত্তা বাহিনীর আক্ষেপ, ঘটনার রাতে যথেষ্ট পরিমাণ অস্ত্র থাকলে কোনও প্রাণহানি হওয়ার আগেই জঙ্গিদের শিক্ষা দেওয়া যেত!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

IS police training school Quetta attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE