Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ইরাক-সিরিয়ায় কার্টুন অস্ত্রে বধ আইএসআইএস

ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে গিয়ে নাস্তানাবুদ জঙ্গি! মাথার ব্যান্ডে জ্বলজ্বল করছে আইএসআইএস-এর (ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া) নাম। কখনও রকেট লঞ্চার তুলতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে, কখনও আবার উল্টো করে বন্দুক ধরে নিজের সাঙ্গপাঙ্গকেই ঘায়েল করছে। অদূরের ইরাকি সেনা ছাউনিতে রকেট ছুড়তে গিয়ে নিজেদের ঘাঁটিই উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্যও বিরল নয়।

সংবাদ সংস্থা
বাগদাদ ও বেইরুট শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৩২
Share: Save:

ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে গিয়ে নাস্তানাবুদ জঙ্গি! মাথার ব্যান্ডে জ্বলজ্বল করছে আইএসআইএস-এর (ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া) নাম। কখনও রকেট লঞ্চার তুলতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে, কখনও আবার উল্টো করে বন্দুক ধরে নিজের সাঙ্গপাঙ্গকেই ঘায়েল করছে। অদূরের ইরাকি সেনা ছাউনিতে রকেট ছুড়তে গিয়ে নিজেদের ঘাঁটিই উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্যও বিরল নয়। স্বভাবতই এ সব দেখে বকাবকিতে কসুর করছে না কম্যান্ডার। তাতে আবার মুখ ফুলিয়ে অভিমান করে যুদ্ধত্যাগের প্রতিজ্ঞাও করছে জঙ্গি!

এ ছবি বাস্তব। কল্পবাস্তব। বাস্তবে যখন নিজেদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করতে পশ্চিম এশিয়াকে ছারখার করে দিচ্ছে আইএসআইএস জঙ্গিরা, তখন সেই বাস্তবকে ঠেকাতে কল্পবাস্তবকেই হাতিয়ার করেছে পশ্চিম এশিয়ার টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলি। জঙ্গিদের এমন সব হাস্যকর কীর্তিকলাপের দৃশ্যই এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লেবানন, সিরিয়া আর ইরাকের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে। আমেরিকার বিখ্যাত লুনি টিউনসের ধাঁচে তৈরি করা এই কার্টুনগুলোর মাধ্যমেই জঙ্গি-বিরোধী জনমত গঠনের চেষ্টা চলছে।

আদতে বাচ্চাদের জন্য তৈরি এই কার্টুন চিত্রে বোঝানো হচ্ছে, জঙ্গিরা আসলে ধর্মের আক্ষরিক মানে বের করছে। দেখানো হচ্ছে তারা কতটা আত্মপ্রেমী, মানবতা বিরোধী। সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে আর আতঙ্ক তৈরি করে জঙ্গিরা যে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে তা-ও পরিষ্কার করে দেখানো হচ্ছে। লেবাননের বাসিন্দা তথা কার্টুনের লেখক ও প্রযোজক নাবিল আসাফ জানালেন, যে জঙ্গিরা সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসকে দীর্ঘজীবী করতে চায় তাদের সঙ্গে লড়তে এ বার টেলিভিশন মিডিয়ার অস্ত্র এই কার্টুন। পশ্চিম এশিয়ার প্রতিটি দেশের টেলিভিশন নেটওয়ার্কই সর্বসম্মত ভাবে এই কার্টুন সম্প্রচার করছে। নাবিল বলেন, “আরবে তো ব্যঙ্গ আর কল্পকাহিনীর চল বহুদিনের। সরকারের বিরোধ বা ক্ষমতাবানের অত্যাচার প্রতিক্ষেত্রেই প্রতিবাদের ভাষা হয়ে এসেছে নান রকমের কল্পকাহিনী। আইএসআইএস-কে আমরা জানাতে চাই, আমরা ওদের পক্ষে নই। যেটাকে ওরা ধর্ম বলে চালাতে চেষ্টা করছে, সেটাই আসলে অধর্ম।”

সিরিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের এক কর্তার মতে, এ ভাবেই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করা সম্ভব। তাঁর কথায়, “দেশের অন্তত ৫০ শতাংশ বাচ্চাকেও যদি সত্যিটা বোঝাতে পারি তাহলেও একটা প্রজন্মকে এর বাইরে নিয়ে আসতে পারব।” সম্প্রতি, মিশরের ধর্মীয় প্রধান অনলাইনে আইএসআইএস বিরোধী প্রচার করতে শুরু করেন। সাংবাদিকদের কাছে তিনি আবেদন করেছিলেন, “এই জঙ্গি সংগঠনকে দয়া করে মুসলিম রাষ্ট্রের (ইসলামিক স্টেট) তকমা দেবেন না।” সেই নিয়ে বিস্তর হাসিঠাট্টাও চলেছে। বিভিন্ন দেশের পরিচিত ব্যঙ্গশিল্পীরা সেখানে কমেন্টও করেছেন।

তবে জঙ্গি-বিধ্বস্ত দেশে এমন অনুষ্ঠান সম্প্রচারে ঝুঁকি তো রয়েছেই। নাবিলের স্পষ্ট জবাব, “অবশ্যই এটা স্পর্শকাতর বিষয়। কিন্তু নাশকতার বিরুদ্ধে কথা বলার এই একটাই রাস্তা আছে। ধর্মস্থানে রাখা কাটা মাথা দেখে গুটিয়ে যাওয়া মানুষকে সাহস যোগাতে হবে। এটা ভয় পাওয়ার সময় নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE