পণবন্দি ছেলেকে খাঁচার মধ্যে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেছে জঙ্গিরা। খবরটা পাওয়া মাত্রই অচেতন হয়ে পড়েন মা। এখনও ভর্তি হাসপাতালে। চোখে জল বাবারও। তবে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে এখন ফুঁসছেন। আইএসকে পাল্টা জবাব দিতে জর্ডন সরকার আজই দুই জঙ্গিকে ফাঁসি দিয়েছে। বাবা চাইছেন, খতম হোক পুরো গোষ্ঠীটাই।
দুই জাপানির পর, আইএসের হাতে নিহত পণবন্দি জর্ডনের বিমানচালক মোয়াজ আল কাসাসবে। গত কালই সেই ভিডিও পেশ করে জঙ্গিরা। ব্যাপক মারধরের পর খাঁচার মধ্যে রেখেই জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয় তাঁকে। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে এক সময় খাঁচাতেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে সেই খাঁচার উপর দিয়েই চালানো হয় বুলডোজার। অনলাইনে এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই জঙ্গি-বর্বরতায় উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। বিক্ষোভে সামিল জর্ডন-সহ বিশ্বের একটা বড় অংশ। পণবন্দি বিমানচালকের মুক্তি নিয়ে জঙ্গিরা যখন বন্দি-বিনিময়ের শর্ত দেয়, অন্য রকম প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল আম্মানে। আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জর্ডনের সামিল হওয়া নিয়েও
প্রশ্ন ওঠে। তবে গত কালের ভিডিও মোড় ঘুরিয়েছে মানসিকতায়। কাসাসবের বাবার মতো দেশের একটা বড় অংশ চাইছে উচিত জবাব দেওয়া হোক আইএসকে।
জাপানি সাংবাদিক কেনজি গোতোর মুণ্ডচ্ছেদের ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পরও জঙ্গিদের সঙ্গে আপসের ইঙ্গিত দিয়েছিল আম্মান। কাসাসবের জীবিত থাকার প্রমাণ চেয়ে জর্ডনে বন্দি প্রাক্তন আল কায়দা জঙ্গি সাজিদা আল-রিশওয়াইকে ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলে তারা। গত কালের ভিডিওর পর অবশ্য অন্য মেজাজ রাষ্ট্রের। ২০০৫ সালে জর্ডনের রাজধানী আম্মানে আত্মঘাতী হামলার মূল চক্রী সাজিদা-আল-রিশওয়াইয়ের সঙ্গে জিয়াদ আল-কারবোলিকে আজ দিনের শুরুতেই ফাঁসি দেয় জর্ডন। গত কালই ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লা। কড়া নিন্দার পাশাপাশি আইএসের বিরুদ্ধে হামলা আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে সেই বৈঠকে।
তবে পণবন্দি বিমানচালককে ঠিক কবে হত্যা করা হয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। ওয়াশিংটন এবং আম্মান যৌথ ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে প্রকাশিত ভিডিওটির খুঁটিনাটি জানতে। বিশেষজ্ঞদের একটা অংশের দাবি, এত দিন পর্যন্ত আইএস যতগুলি ভিডিও প্রকাশ করেছে, তার মধ্যে এটিই সব চেয়ে ভয়াবহ। প্রযুক্তিগত ভাবেও সব চেয়ে আধুনিক। একাধিক এইচডি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে এ ক্ষেত্রে। রীতিমতো সময় নিয়ে তথ্যচিত্র কিংবা সংবাদ প্রতিবেদনের মতো করেই সম্পাদনা করা হয়েছে ভিডিওটি। সেই সূত্র ধরেই জর্ডন প্রশাসনের একটা অংশের মত, অপহৃত বিমানচালককে অনেক আগেই মেরে ফেলা হয়েছিল।
আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গিয়ে গত ডিসেম্বরে উত্তর সিরিয়ায় ভেঙে পড়ে জর্ডনের একটি যুদ্ধবিমান। অনুমান, সেই বিমানের চালক কাসাসবে তখন থেকেই জঙ্গিদের কবলে। গোতোকে দিয়ে জঙ্গিরা একাধিক বার্তা পাঠালেও কাসাসবেকে গত কালের আগে কোনও ভিডিওতে দেখা যায়নি। কেনজি গোতোকে দিয়ে যে বার বন্দি-বিনিময় নিয়ে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা দেয় আইএস, তখনও শুধুই ছবিতে দেখা গিয়েছিল কাসাসবেকে।
জর্ডনের সরকারি এক চ্যানেলে আজ ঘোষণা করা হয়, ৩ জানুয়ারি এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। প্রাথমিক সন্দেহ, মাস খানেক ধরে অডিও-ভিসুয়াল ও সোশ্যাল মিডিয়ায় পারদর্শী কিছু ব্রিটিশ জঙ্গির সাহায্য নিয়েই এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়। গত কালের পর আজ ফের ভিডিও প্রকাশ করেছে আইএস। তাতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তায় জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে পণবন্দি বিমানচালককে পুড়িয়ে মারার দৃশ্য। রাস্তায় দাঁড়িয়ে তা দেখে উল্লাসে ফেটে পড়ছে বাচ্চারাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy