সম্মান: চিনা কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসের প্রথম দিনে বক্তৃতার শেষে প্রতিনিধিদের অভিবাদন জানাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। বুধবার বেজিংয়ে। ছবি: এএফপি।
নতুন যুগে প্রবেশ করেছে চিন। তাই বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠা উচিত তারই— চিনা কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম কংগ্রেস শুরুর দিন ৩ ঘণ্টা ২৩ মিনিটের বক্তৃতা এ ভাবেই শুরু করলেন প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। বুঝিয়ে দিলেন, চিনা ভাবধারার সমাজতন্ত্র থেকে একচুলও সরবেন না তিনি। যে উন্মুক্ত আদর্শের পথে ইউরোপীয় সমাজতন্ত্র এগিয়েছিল, তা দীর্ঘমেয়াদি হয়নি। তাই যে আড়াল রেখে চিনা সমাজতন্ত্র সাফল্য এনেছে শি-এর দেশে, তাতেই আস্থা রাখছেন প্রেসিডেন্ট।
বুধবার শি-র বার্তা, ‘চিনের নিজস্ব সমাজতন্ত্র’র হাত ধরে দেশ তরতর করে এগোচ্ছে। যা থেকে স্পষ্ট, অন্য সব দেশের কাছে নয়া নজির হয়ে উঠছে চিন। শি-র মতে, কোনও উন্নয়নশীল দেশ যদি স্বাতন্ত্র বজায় রেখে চিনা মডেল থেকে অনুপ্রাণিত হয়, তাদের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। রুদ্ধদ্বার এই শীর্ষ সম্মেলনে ঠিক হবে আগামী দফায় রাষ্ট্রের শীর্ষ পদে কে অনুমোদন পাবেন। যদিও গোড়া থেকে আভাস মিলেছে, এই পদে শি চিনফিংই আসতে চলেছেন ।
কড়া নিরাপত্তায় মোড়া পার্টি কংগ্রেস প্রতি পাঁচ বছর অন্তর বসে। আগামী মঙ্গলবার সম্মেলন শেষ হলেই দেশের পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির নয়া সদস্যদের নাম ঘোষণা হবে। ২২৮০ জন প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করবেন। তাঁদের মধ্যে থেকে ২৫ জনকে বেছে নিয়ে তৈরি হবে পলিটব্যুরো। এঁদের মধ্যে সাত জনকে নিয়ে আবার তৈরি হবে পলিটব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটি অ্যাপেক্স ৭।
২০১২ সালে শি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দ্রুত এগিয়েছে চিনের অর্থনীতি। কিন্তু একাংশের অভিযোগ, দেশ আরও স্বৈরাচারী হয়েছে। কথায় কথায় নিষেধাজ্ঞা বেড়েছে। আইনজীবী এবং আন্দোলনকারীদের যখন-তখন গ্রেফতার করা হয়েছে।
বেজিংয়ে কর্মরত এক ব্রিটিশ সাংবাদিকের মতে, পূর্বসূরিদের তুলনায় শি অনেক বেশি দৃঢ়চেতা। ক্ষমতায় থাকার প্রথম পাঁচ বছরের মূল্যায়নে তাই শি-এর মুখে শোনা গেল, ‘‘পার্টি অসাধ্য সাধন করেছে।’’ কিন্তু তাঁর বক্তৃতায় সব চেয়ে যেটি দাগ কেটেছে সাংবাদিকদের মনে, তা হল তাঁর মতাদর্শগত আত্মবিশ্বাস। পার্টির তরফেই সংবাদমাধ্যমে দাবি, পশ্চিমি গণতন্ত্রের সঙ্কটের মাঝে চিনের দৃঢ়তা এবং ঐক্য চোখে পড়ার মতো। আজ চিনফিংও বলেছেন, বিদেশি রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে তিনি কখনওই অনুসরণ করবেন না। চিনের নেতৃত্বকে দুর্বল করতে চায় এমন যে কোনও বিষয়ের বিরোধিতা করবে তার দল।
এই সূত্রেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বেশ কয়েক বার বিঁধেছেন শি। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে আমেরিকাকে ঠুকে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কোনও দেশ যদি ভাবে নিজেরটুকু নিয়ে থাকব, তবে চলবে না। আমরা যে বিশ্বে বাস করি, তাতে সবার অধিকার।’’ তার পরে চিনফিং জানান, ২০৫০ সালের মধ্যে ‘সমাজবাদী আধুনিকতা’-র মাধ্যমে তাঁর দেশ গর্বে মাথা উঁচু করে জায়গা করে নেবে। পরিবেশ এবং আর্থিক সংস্কার তাতে বড় ভূমিকা নেবে। সঙ্গে বলেছেন, চিনকে ‘উদ্ভাবকদের দেশে’ পরিণত করতে চান। কমাতে চান আবাসন শিল্প ঘিরে আমজনতার উদ্বেগ ছাড়া শি-র রাজনৈতিক চিন্তা অন্তর্ভুক্তির জন্য সংবিধান পুনর্লিখনের কাজেও পার্টি হাত দিতে পারে বলে কংগ্রেস সূত্রে খবর। বলা হচ্ছে, এর ফলে পূর্বতন দলনেতা মাও জে দং অথবা দেং শিয়াওপিং-এর স্তরে উত্তরণ ঘটবে শি চিনফিংয়ের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy