Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

স্তব্ধ হোয়াট্সঅ্যাপ, ত্রাহি ত্রাহি রব নেট দুনিয়ায়

কারও ফোনেই হোয়াট্সঅ্যাপ চলছে না যে! ভারতে গড়বড় মালুম হয়েছিল শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ। মোটামুটি দুপুর পৌনে ২টো থেকে পরের চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ মিনিট কার্যত ‘নেটিজেনদের’ ত্রাহি রব মুম্বই থেকে ম্যাঙ্গালুরু, কলকাতা থেকে কালিকট।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:২৩
Share: Save:

প্রায় খাঁচাবন্দি ইঁদুরের দশা। বিরক্তি। হতাশা। রাগ। হরেদরে সকলের বক্তব্য একটাই— ‘এ স্মার্টফোন লইয়া কী করিব!’

কারও ফোনেই হোয়াট্সঅ্যাপ চলছে না যে! ভারতে গড়বড় মালুম হয়েছিল শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ। মোটামুটি দুপুর পৌনে ২টো থেকে পরের চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ মিনিট কার্যত ‘নেটিজেনদের’ ত্রাহি রব মুম্বই থেকে ম্যাঙ্গালুরু, কলকাতা থেকে কালিকট। তত ক্ষণে সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে খবর— কোনও এক অজানা কারণে দুনিয়া জুড়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে জনপ্রিয় এই মেসেজিং অ্যাপ।

কেউ হোয়াট্‌সঅ্যাপ খুলতেই পারছেন না। কেউ মেসেজ পাঠিয়ে বসে আছেন, অথচ তা যথাস্থানে পৌঁছনোর নাম নেই। কেউ পাগলের মতো মোবাইল রিস্টার্ট করে চলেছেন। থমকে গিয়েছে অফিসের গ্রুপে জরুরি কেজো আলোচনা থেকে বন্ধুদের গ্রুপের রোজকার গুলতানি। চেপে বসেছে ভয়— অ্যাকাউন্টটাই ‘হ্যাক’ হয়ে গেল না তো!

শুধু ভারত নয়, শ্রীলঙ্কা, ইতালি, সৌদি আরব, ফিলিপিন্স, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ব্রাজিল, মরক্কো— এ দিন ভুক্তভোগীর তালিকা দীর্ঘ। ফেসবুক, হোয়াট্সঅ্যাপ ও বিভিন্ন ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার হাল-হকিকত জরিপ করার ওয়েবসাইট ‘ডাউন ডিটেক্টর ডট কম’ খুললেই মালুম হচ্ছে হতাশা। ‘হোয়াট্সঅ্যাপ গোল্লায় গিয়েছে’ বলে ইংরেজি-হিন্দিতে গালিগালাজের ছড়াছড়ি। পর্তুগিজ, স্প্যানিশ বা মালয় ভাষাতেও নানা মন্তব্য। ফেসবুকের অধীনস্থ অ্যাপটির এমন বেহাল দশায় টুইটারে ‘#হোয়াট্সঅ্যাপডাউন’ লিখে ঝাঁঝিয়ে উঠেছেন অনেকেই।

আরও পড়ুন: হঠাৎ কোমায় হোয়াট্সঅ্যাপ

কলকাতাও তথৈবচ। আমেরিকান কনস্যুলেটের এক আধিকারিক বলছিলেন, ‘‘সকাল থেকেই বেশ কিছু মেসেজ আটকে। শুধু লেখা আসছে— ওয়েটিং ফর দিস মেসেজ, দিস মে টেক আ হোয়াইল!’’ এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের মন্তব্য, ‘‘কী বলব, আজকাল মায়েরা বাচ্চাদের পেট খারাপের ‘তথ্যপ্রমাণ’ অবধি ছবি তুলে ফরোয়ার্ড করে দেন! হোয়াট্সঅ্যাপে ঢুকতে না-পেরে দুপুর থেকে অনেকেই বারবার আনইনস্টল ও ইনস্টল করছেন।’’

তবে জনতার রসবোধ একেবারে উবে গিয়েছে বলা যাচ্ছে না! চেতন ভগতের টুইট, ‘নিশ্চয়ই কোনও ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারের কাণ্ড! ওঁর প্রেমিকা ওঁকে ব্লক করেছেন বলে রাগে উনিও ভাবলেন— তবে রে! আমি ব্লক তো সক্কলে ব্লক! তাতেই এই দুর্যোগ।’ অরবিন্দ কেজরীবালের নাম করে একটি ছদ্ম প্রোফাইল থেকেও মজা করা হচ্ছে, ‘এ হল মোদীর ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রচারের ব্যর্থতা। প্রধানমন্ত্রী গদি ছাড়ুন।’ আবার এ দিনের যন্ত্রণা তেমন ভুগতে হয়নি, এমন কেউ কেউ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘হা হা, আমি সূর্য-চাঁদের গ্রহণ দেখা মিস করে যাই। আজ হোয়াট্সঅ্যাপ-গ্রহণটাও দেখা হল না!’’

দিনশেষে অবশ্য অনেকটা শুধরোয় পরিস্থিতি। তবে হোয়াট্সঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের নীরবতায় চিন্তা কাটছে না অনেকেরই। আবার যদি ‘সে’ আসে ফিরিয়া?

‘‘স্মার্টফোনধারীদের উৎকণ্ঠা আমি ভালই বুঝতে পারছি’’— বললেন মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম। তাঁর মতে, ‘‘সবাই মোটেও কাজের তাগিদে হোয়াটসঅ্যাপে মেতে থাকেন না। হোয়াট্সঅ্যাপ, ফেসবুকের মতো অ্যাপগুলোয় মানুষের নির্ভরতা অসুস্থতার পর্যায়ে গিয়েছে।’’ অনেকে এটা বলছেনও যে, রাতদিন স্রোতের মতো আসা অবান্তর ‘ফরোয়ার্ডেড মেসেজ’, ‘গুড মর্নিং’, ‘গুড নাইট’, জোকস— এ সবের থেকে কিছুক্ষণ অন্তত রেহাই পাওয়া গিয়েছে এ দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

নেটিজেন Netizen WhatsApp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE