Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
মৃত বেড়ে ৬,৬২১

প্রাণের আশা নেই, জানাল নেপাল সরকার

এ বার শুধুই লাশ গোনার পালা। যত খোঁড়া হবে, ততই বেরোবে লাশ। ধ্বংসস্তূপের নীচে আর কাউকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব নয় বলে আজ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে খোদ নেপাল সরকার। ভূমিকম্পের পর পেরিয়ে গিয়েছে সাত দিন। এখনও পর্যন্ত মিলেছে ৬,৬২১ জনের দেহ। নিখোঁজ বহু। মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়াতে পারে বলে গত কালই আশঙ্কা প্রকাশ করেন নেপালি সেনাপ্রধান জেনারেল গৌরব রানা। বেড়ে চলা মৃত্যুমিছিলের মাঝে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই ঘোষণায় ফের ভাঙনের মুখে নেপাল। ঘরবাড়ি ভেঙেছে আগেই। এ বার ভাঙন মনের ঘরে।

সংবাদ সংস্থা
কাঠমান্ডু শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৫ ০৩:১১
Share: Save:

এ বার শুধুই লাশ গোনার পালা। যত খোঁড়া হবে, ততই বেরোবে লাশ। ধ্বংসস্তূপের নীচে আর কাউকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব নয় বলে আজ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে খোদ নেপাল সরকার।

ভূমিকম্পের পর পেরিয়ে গিয়েছে সাত দিন। এখনও পর্যন্ত মিলেছে ৬,৬২১ জনের দেহ। নিখোঁজ বহু। মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়াতে পারে বলে গত কালই আশঙ্কা প্রকাশ করেন নেপালি সেনাপ্রধান জেনারেল গৌরব রানা। বেড়ে চলা মৃত্যুমিছিলের মাঝে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই ঘোষণায় ফের ভাঙনের মুখে নেপাল। ঘরবাড়ি ভেঙেছে আগেই। এ বার ভাঙন মনের ঘরে।

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র লক্ষ্মীপ্রসাদ ধকল আজ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘উদ্ধারকাজ এবং ত্রাণে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু মনে হয় না ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে আর কাউকে জীবিত উদ্ধার করতে পারব।’’ এই মুহূর্তে ভারত-সহ অন্তত ২০টি দেশ নেপালে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। এখনও নিখোঁজ কয়েক হাজার দেশি-বিদেশি।

আজ আবার ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে বিদেশি রাষ্ট্রের ‘সন্দেহজনক’ ভূমিকা নিয়ে মুখ খুলেছেন নেপালের মাওবাদী নেতা প্রচণ্ড। সাহায্যের নাম করে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাতে পারে বিদেশি শক্তি, এই অভিযোগ করে তিনি প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালাকে সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছেন। প্রচন্ডের সন্দেহ-তালিকা থেকে বাদ পড়েনি ভারতও।

গত সপ্তাহের ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত ৫০ জন বিদেশির মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। তার মধ্যে ৩৮ জন ভারতীয় রয়েছেন বলেও আজ জানিয়েছে নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে আরও ১০ জনকে। আপাতত তাঁদের চিকিৎসা চলছে নেপালেরই দু’টি হাসপাতালে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবশ্য দাবি, নেপালের এই ভূমিকম্পে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তাঁদেরই। অভিযোগ, ঘটনার সাত দিন পরেও খোঁজ মেলেনি ১,০০০ ইউরোপীয়ের।

উদ্ধারকাজে সরকারি গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল আগেই। আজ আন্তর্জাতিক ত্রাণ নিয়েও ছড়িয়েছে ক্ষোভ। সরকারের তরফে মুখ খোলেন নেপালের অর্থমন্ত্রী রামশরন মাহাতো। বলেন, ‘‘ত্রাণে টুনা মাছ আসছে, মেয়োনিজ আসছে। এ সবে আমাদের কী হবে বলতে পারেন? খোলা আকাশের নীচে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের ত্রিপল প্রয়োজন। প্রয়োজন খাদ্যশস্যের, নুন-চিনির। কিন্তু মিলছে কোথায়!’’ সাহায্যকারী দেশগুলির কাছে আজ সরাসরি অর্থসাহায্যেরও আর্জি জানান তিনি।

বাসস্থানের সমস্যা যে গত সাত দিনেও মেটানো যায়নি, পরোক্ষে তা-ও মেনে নিয়েছে সরকার। রাষ্ট্রপুঞ্জের দাবি, ভূমিকম্পে দেশ জুড়ে প্রায় ৬ লক্ষ বাড়ি সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাবে ধ্বংস হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী মীনেন্দ্র রিজল বলেন, ‘‘মানুষ খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাচ্ছে। এই মুহূর্তে ৪ লাখ তাঁবুর প্রয়োজন সারা দেশে। কিন্তু আমরা মাত্র ২৯ হাজারের ব্যবস্থা করতে পেরেছি।’’

দেশের বহু প্রত্যন্ত অঞ্চলেই এখনও উদ্ধারকারী দল এসে পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। কাঠমান্ডু উপত্যকায় উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে ত্রাণ এলেও, এখানে অভিযোগ কালোবাজারির। প্রতিবাদে আজ রাস্তায় নামেন একাংশ। বিক্ষুব্ধ নির্মল বিশি জানান, ‘‘২০ টাকা দামের খাবার এখন ৫০ টাকায় বিকোচ্ছে। ত্রাণ আসছে, কিন্তু সে সব যাচ্ছে কোথায়— কেউ জানে না।’’ পরিবারের দশ জনকে নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে তাঁবুর নীচেই রয়েছেন ফুলমায়া লাগুন। তাঁর অভিযোগ— ‘‘এক বোতল জল দিয়েই ওদের দায়িত্ব শেষ।’’ দাওয়া শেরপা বলেন, ‘‘নিজের প্রভাব খাটাতে পারলেই ত্রিপল জুটছে। যাঁদের হয়ে কেউ বলার নেই, তাঁরা খোলা আকাশের নীচেই পড়ে আছেন।’’

বাসস্থান, পানীয় জলের মতো বাড়ছে খাদ্যসঙ্কটও। এরই মধ্যে ইউনিসেফ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ভূকম্প-পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশ জুড়ে ছড়াতে পারে ডায়েরিয়ার মতো নানাবিধ জলবাহিত রোগ। সোয়াইন ফ্লু নিয়েও সতর্ক প্রশাসন। তাই সব ধরনের পশু-পাখির মাংস খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে কাঠমান্ডুতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE