চাই নতুন নেপাল। গণতন্ত্রের সিঁড়ি ভাঙতে এটাই ছিল স্লোগান। প্রায় আড়াইশো বছরের রাজতন্ত্র আর ২০০৬ পর্যন্ত চলে আসা রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের স্মৃতি মুছতে দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে এগিয়ে এসেছিলেন প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ। পরশু ছিল দ্বিতীয় দফার ভোট। আর আজ ব্যালট বাক্স উপুড় করতেই দেখা গেল, ধরাশায়ী নেপালি কংগ্রেস। সরকার গঠনের পথে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে দেশের মধ্যপন্থী কমিউনিস্ট আর মাওবাদীদের জোট।
এখনও পর্যন্ত যে ৪৯টি সংসদীয় আসনের ফল প্রকাশ হয়েছে, তার ৪০টি পেয়েছে বামেরা। দু’টি গিয়েছে নিরপেক্ষ প্রার্থীর ঝুলিতে। আর ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেসকে খুশি থাকতে হচ্ছে মাত্র ছ’টিতেই! নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, আরও যে সব আসনে গণনা চলছে, তার সিংহভাগেই এগিয়ে বামপন্থীরা। তাই বাম-জোটই যে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসছে, তা নিয়ে লেখালিখিও শুরু হয়ে গিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে।
নেপালের তখ্তে কারা আসছে, সে দিকে তাকিয়ে পড়শি রাষ্ট্রনেতারাও। নেপালিরা অবশ্য এখন শুধুই গণতন্ত্রের স্বাদ নিতে মশগুল। আপাতত তাঁরা ভুলে থাকতে চাইছেন রাজনীতির সমীকরণও। পরশু যখন ভোট চলছে, সে দিনও কেঁপে উঠেছিল নেপাল। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা দেখিয়েছিল ৫.২। তবু ভোটের লাইনে তার কোনও প্রভাব পড়েনি। ২০০৮-এর পরে ২০১৩-তেও ভোট দিয়েছিলেন নেপালিরা। তবে সেটা ছিল সাংবিধানিক পরিষদের ভোট। যার ভিত্তিতেই ২০১৫-য় নতুন করে লেখা হয়েছিল ‘ফেডেরাল ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব নেপাল’-এর সংবিধান। এ বার সেই সংবিধান মেনেই ‘নির্বাচিত’ সরকার গঠনের পালা।
প্রধানমন্ত্রী পদে গত ৯ বছরে ১০ বার বদল দেখেছে নেপাল। সর্বাধিক দু’বছরও টেকেনি কারও মসনদ। রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্নীতি। ভুগতে হয়েছে দেশের অর্থনীতিকেও। এ বারের ভোটে তাই সরকারের স্থায়িত্বও চেয়েছিলেন নেপালের মানুষ। কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, আগামী পাঁচ বছরের জন্য সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েই বাজিমাত করতে চলেছে নেপালের বামপন্থী জোট। ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত টানা লড়াই চালিয়ে গিয়েছে নেপালের মাওবাদীরা। পরে রাষ্ট্রপুঞ্জের মধ্যস্থতায় একটি শান্তিচুক্তিতে রাজি হয় তারা। ঢুকে পড়ে রাজনীতির মূলস্রোতে। এদের পিছনে এখনও চিনের সমর্থন রয়েছে বলে দাবি একাংশের। কিন্তু জোটের জোরেই তারা এগোচ্ছে বলে মত কূটনীতিকদের। আর আজ বেলা যত গড়িয়েছে, ততই দিকে-দিকে হেভিওয়েট সব নেপালি কংগ্রেস নেতাদের ভরাডুবির খবর মিলেছে। জনতার রায়ে ‘প্রাক্তন’ তকমা জুটতে চলেছে একাধিক মন্ত্রীর।
নেপালে প্রথম দফার ভোট হয়েছিল ২৬ নভেম্বর। নেপালি পার্লামেন্টের ১২৮টি আসনের পাশাপাশি আজ ভোটগণনা চলছে প্রাদেশিক আইনসভার ২৫৬টি আসনেও। আবার পার্লামেন্টের প্রতিনিধি সভায় যে ২৭৫টি আসন রয়েছে, তার ১৬৫টি আসনের ফল পাওয়া যাবে সরাসরি ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে। বাকি ১১০টি আসনে ফল নির্ধারিত হবে দলগুলির প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত ফল হাতে পেতে দিন দশেক অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy