‘ইসলামি সন্ত্রাস’ নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে বেজিং-এর, জিনজিয়াং-এ বাড়ছে চিনা সশস্ত্র বাহিনীর তৎপরতা। — প্রতীকী ছবি।
আমেরিকার পর চিনও— সন্ত্রাসের আশঙ্কা বাড়তেই ইসলামের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করল বেজিং। চিনা কমিউনিস্ট পার্টির একের পর এক শীর্ষস্থানীয় নেতা সে দেশে আইএস এবং আল কায়দার নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি নিয়ে বেজিংকে সতর্ক করতে শুরু করেছেন। পশ্চিম চিনের মুসলিম প্রধান অঞ্চল জিনজিয়াং-এর শীর্ষ কমিউনিস্ট নেতারা বেশ কিছু দিন আগে থেকেই সতর্কবার্তা দিচ্ছিলেন। সশস্ত্র বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে জিনজিয়াং অঞ্চলে সন্ত্রাস বিরোধী পদযাত্রাও করেছে কমিউনিস্ট পার্টি। আর এক মুসলিম প্রধান অঞ্চল নিংজিয়া এখনও পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ। কিন্তু সেখানকার পার্টি পদাধিকারীরাও এ বার ইসলামি সন্ত্রাস সম্পর্কে সরকারকে সতর্কবার্তা দিতে শুরু করেছেন।
চিনের জিনজিয়াং অঞ্চলেই নাশকতামূলক কার্যকলাপ সবচেয়ে বেশি। কিরঘিজস্তান এবং তাজিকিস্তান লাগোয়া জিনজিয়াং-এ গত কয়েক বছরে একের পর এক বিস্ফোরণ এবং সন্ত্রাসবাদী হানায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। উইগুর মুসলিমরা জিনজিয়াং-এর পুরনো বাসিন্দা। কিন্তু পরবর্তী কালে চিনের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও বহু মানুষ জিনজিয়াং-এ গিয়ে থাকতে শুরু করেন। জিনজিয়াং-এর জনসংখ্যায় উইগুরদের ভাগ কমতে থাকে। এই পরিস্থিতি সঙ্ঘাতের একটি কারণ। কমিউনিস্ট চিনে স্বাধীন ধর্মাচরণের অধিকার পুরোপুরি না থাকা সঙ্ঘাতের আর এক কারণ। মূলত এই দু’টি কারণেই জিনজিংয়া-এ জঙ্গি কার্যকলাপের সূত্রপাত। চিনা প্রশাসনের হাত থেকে বাঁচতে এই জঙ্গিরা বিস্ফোরণ বা নাশকতা ঘটিয়ে লাগোয়া কিরঘিজস্তান বা তাজিকিস্তানে পালিয়ে যেতে অভ্যস্ত। বহু বছর ধরে জঙ্গি দমন অভিযান চলছে উইগুর প্রধান অঞ্চলগুলিতে। কিন্তু সন্ত্রাস নির্মূল করা যায়নি। বরং নাশকতার আশঙ্কা সম্প্রতি আরও বেড়ে গিয়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে আইএস-এর তরফে একটি ভিডিও প্রকাশ করে চিনকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। সেই ভিডিওয় উইগুর মুসলিমদেরও দেখা গিয়েছে। উইগুরদের হয়ে প্রতিশোধ নিতে আইএস এ বার চিনে হামলা চালাবে, ‘চিনের নদীতে এ বার রক্তের স্রোত বইবে’— এমনই হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই ভিডিও বেজিং-এর রক্তচাপ আরও বাড়িয়েছে বলে খবর।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মুসলিম প্রধান দেশগুলির বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন, তার প্রতি এখন সমর্থনের সুর কোনও কোনও চিনা নেতার গলায়। — প্রতীকী ছবি
ইসলামি সন্ত্রাস গোটা বিশ্বেই উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে চিনা নেতারা মনে করছেন। এরই মাঝে মধ্য এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই এখন তীব্র। ইরাক, সিরিয়া এবং আফগানিস্তানে জমি হারিয়ে আইএস এখন নতুন আশ্রয়ের খোঁজে। চিন মনে করছে, উইগুর আবেগকে কাজে লাগিয়ে জিনজিয়াং অঞ্চলকে এ বার নিজেদের অন্যতম আশ্রয়স্থল করে তুলতে চাইছে আইএস। চিনকে হুমকি দিয়ে প্রকাশিত আইএস ভিডিও তারই প্রমাণ, বলছেন চিনা নেতারা।
ইসলামি সন্ত্রাস নিয়ে চিনা নেতাদের সাম্প্রতিকতম মন্তব্যটি শোনা গিয়েছে রবিবার। এ দিন মুসলিম প্রধান জিনজিয়াং অঞ্চলের অন্যতম শীর্ষ কমিউনিস্ট নেতা শরহত আহান দেশের সরকারকে সতর্ক করেছেন। তাঁর বার্তা, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস-বিরোধী যুদ্ধের পরিস্থিতি এখন যেমন, তাতে চিনের স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে। শরহত আহান এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘জনযুদ্ধ’ শুরু করার ডাকও দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ইস্তফায় নারাজ ভারারাকে বরখাস্ত করল ট্রাম্প প্রশাসন
শুধু জিনজিয়াং অঞ্চলেই কিন্তু সীমাবদ্ধ নেই আতঙ্ক। নিংজিয়া অঞ্চলেও তার ছাপ দেখা যাচ্ছে। চিনের এই অঞ্চলে হুই জনগোষ্ঠীর বাস। তাঁদের অধিকাংশই ইসলাম অনুসারী। কিন্তু নিংজিয়ার হুই স্বশাসিত অঞ্চলে নাশকতার সমস্যা কখনও দেখা যায়নি। হুই মুসলিমদের মধ্যে ধর্মীয় কট্টরবাদও সে ভাবে নেই। তা সত্ত্বেও নিংজিয়া অঞ্চলের নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন বলে খবর। ওই অঞ্চলে কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ পদাধিকারী লি জিয়াংগুয়ো সম্প্রতি এক ধর্মীয় সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘ইসলামিক স্টেট ও কট্টরবাদীরা যাতে ইন্ধন দেয়, তা হল জিহাদ, সন্ত্রাস এবং হিংসা।’’ এর পরই লি-এর ব্যাখ্যা, ‘‘এই কারণেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর নিষেধাজ্ঞায় মুসলিমদের নিশানা বানিয়েছেন। এতে আমেরিকার কোনও স্বার্থসিদ্ধি হবে, নাকি আমেরিকার স্থিতিশীলতা বাড়বে, সেটা কিন্তু বড় কথা নয়। বড় কথা হল, এর ফলে মার্কিন সংস্কৃতিতে ধর্মীয় কট্টরবাদের অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে।’’ নিংজিয়ার আর এক প্রাক্তন সরকারি কর্তা উ শিমিনের পরামর্শ, হুই এলাকায় কমিউনিস্ট ভাবধারার প্রচারে নতুন করে জোর দিতে হবে।
প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং ক্ষমতায় আসার পর থেকে উইগুর এবং হুই মুসলিমদের আরও বেশি করে মূল স্রোতে সামিল করার নীতি নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে জিনজিয়াং-এর বিভিন্ন এলাকায় মুসলিমদের আগের চেয়েও বেশি সন্দেহের চোখে দেখছে প্রশাসন। জঙ্গি বিরোধী অভিযান, তল্লাশি, ধরপাকড় আগের চেয়েও বেড়ে গিয়েছে চিনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy