বিক্ষোভ থামাতে এসে আক্রান্ত পুলিশই। ইসলামাবাদে। ছবি: এ এফ পি
শান্তির দেখা নেই পাকিস্তানে।
ইসলামাবাদের ‘রেড জোনে’ সরকার-বিরোধী আন্দোলনের খবর করতে গিয়ে ক’দিন আগেই বেধড়ক মার খেয়েছিলেন পাক সাংবাদিকেরা। আজ আক্রান্ত হল পাকিস্তানের সরকারি টেলিভিশন ‘পি-টিভি’-র সদর দফতর। অভিযোগের তির দুই বিরোধী নেতা ইমরান খান ও তাহির উল কাদরির সমর্থকদের দিকেই। সেই হামলায় ব্যাপক সম্পত্তিহানি তো হয়েইছে, পাশাপাশি বেশ কিছুক্ষণের জন্য সম্প্রচার বন্ধ করে দিতেও বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। চ্যানেলের কর্মীদের দীর্ঘ সময় বন্দি রাখার অভিযোগ ওঠে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত সেনার হস্তক্ষেপে বিক্ষোভকারীদের চ্যানেলের দফতর থেকে বার করে দেওয়া হয়। বিক্ষোভের নামে ব্যাপক লুঠপাটেরও অভিযোগ উঠেছে।
হামলার অভিযোগ গোড়াতেই অস্বীকার করেন তেহরিক-ই-ইনসাফ শীর্ষ নেতা ইমরান খান। তিনি বলেন, “কারা হামলা চালিয়েছে আমার জানা নেই। আমি অন্তত আমার কর্মী-সমর্থকদের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন কিংবা কোনও দফতরে ঢুকে হামলা চালাতে বলিনি।” কাদরি অবশ্য পরোক্ষে হামলার দায় মেনেছেন। আওয়ামি তেহরিক প্রধানের দাবি, তিনিই তাঁর সমর্থকদের টিভি চ্যানেলের দফতর খালি করার নির্দেশ পাঠান।
চ্যানেলের দফতরে হামলার পাশাপাশি রেড জোনেও জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ অব্যাহত। আজ ফের পার্লামেন্ট ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে এগোতে যান বিক্ষোভকারীরা। ভেঙে ফেলা হয় সচিবালয়ের গেট। লাঠি চালানোর পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। দু’দলের সমর্থকেরাই ইট-পাথর-লাঠি নিয়ে পুলিশকে পাল্টা আক্রমণ করে। সংঘর্ষে গত ৪৮ ঘণ্টায় আহত হয়েছেন অন্তত ৫৫০ জন। ৩ জনের মৃত্যুর খবরও মিলেছে। সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছে ইমরান এবং কাদরির বিরুদ্ধে।
এ দিকে আজ পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সেনাপ্রধান রহিল শরিফের বৈঠক ঘিরে একপ্রস্ত জল্পনা ছড়ায়। সেনাপ্রধান নওয়াজকে ইস্তফা দিতে বলেছেন বলে কয়েকটি পাক সংবাদমাধ্যম প্রচার করতে থাকে। সেই জল্পনা ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেয় সরকার-সেনা দু’পক্ষই। রাজনৈতিক ভাবে শান্তি ফেরানোর কথা আজ ফের বলেন সেনাপ্রধান।
এই পরিস্থিতিতে ইমরানের দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত জাভেদ হাশমি দাবি করেন, গোটা আন্দোলনটাই ‘সাজানো’। ইমরান আসলে সেপ্টেম্বরে কিংবা বছরের শেষে নির্বাচন চাইছেন। এই ‘চক্রান্তে’ সেনা, আইএসআই এমনকী সুপ্রিম কোর্টের কিছু বিচারপতিও আছেন বলে দাবি তাঁর। ইমরান অবশ্য পাশে পেয়েছেন পাক ক্রিকেট টিমে তাঁর প্রাক্তন সতীর্থ জাভেদ মিয়াঁদাদকে। ব্যক্তি ইমরানের পাশাপাশি তাঁর আন্দোলনকেও আজ সমর্থন করেছেন মিয়াঁদাদ।
রাজনৈতিক সঙ্কট কাটাতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে পাক সুপ্রিম কোর্টও। আদালতের হস্তক্ষেপ আদৌ তাঁরা চাইছেন কি না, বিক্ষোভে সামিল দু’পক্ষের কাছেই আজ তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আদালত সূত্রের খবর, সদুত্তর মেলেনি তেহরিক-ই-ইনসাফের তরফে। আওয়ামি তেহরিকের তরফেও কোর্টে কোনও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।
পাক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর আজ বলেন, “বিদেশ মন্ত্রক প্রতিটি খুঁটিনাটির দিকে নজর রাখছে।” সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধান চাইছে অপর পড়শি চিনও। একই দিনে হিংসা থেকে সরকার ও বিরোধী, উভয় পক্ষকেই বিরত থাকার আর্জি জানিয়েছে আমেরিকা এবং ব্রিটেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy