প্রবল চাপে নওয়াজ শরিফ। —ফাইল চিত্র।
ঘরে-বাইরে চাপের মুখে নওয়াজ শরিফের সরকার। এক দিকে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় বিরুদ্ধে গিয়েছে। ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন আধিকারিক কুলভূষণ যাদবের মৃত্যুদণ্ডে স্থগিতাদেশ জারি হয়েছে। আর অন্য দিকে তার জেরে ঝড় উঠে গিয়েছে পাকিস্তানের অন্দরে। পাক সংবাদমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে বিদেশ মন্ত্রক তথা সরকারের। নওয়াজ শরিফের সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক আদালতের রায় মানতে পাকিস্তান বাধ্য নয়, কারণ জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে রায় দেওয়ার অধিকার আন্তর্জাতিক আদালতের নেই। পাক সংবাদমাধ্যমের প্রশ্ন, কুলভূষণ মামলায় হস্তক্ষেপ করার অধিকারই যখন নেই আন্তর্জাতিক আদালতের, তখন সে মামলায় পাকিস্তান প্রতিনিধি পাঠাল কেন?
পাকিস্তানের প্রায় সব সংবাদমাধ্যমেই সে দেশের সরকারের সমালোচনা শুরু হয়েছে। ভারত কুলভূষণ যাদবের মামলাটিকে আন্তর্জাতিক আদালতে টেনে নিয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তান যতগুলি পদক্ষেপ করেছে, সবই ভুল— বলছেন পাক বিশেষজ্ঞরাই। আন্তর্জাতিক আদালতে পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা জোরদার সওয়ালও করতে পারেননি বলে পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিরাট জয় পেল ভারত, কুলভূষণের ফাঁসি স্থগিত আন্তর্জাতিক আদালতে
প্রখ্যাত পাক সংবাদপত্র ‘ডন’-এর ওয়েবসাইটকে সে দেশের এক অবসরপ্রাপ্ত জজ শইক উসমানি জানিয়েছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক আদালতে হাজির হয়েই পাকিস্তান ভুল করেছে, সেখানে যাওয়াই উচিত হয়নি পাকিস্তানের।’’ উসমানির মন্তব্য, পাকিস্তান নিজের পায়েই কুড়ুল মেরেছে।
আন্তর্জাতিক আদালতের রায় জানার পর উল্লাস ভারতে। ছবি: রয়টার্স।
লন্ডন প্রবাসী পাক আইনজীবী রশিদ আসলাম আবার জানিয়েছেন, পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা আন্তর্জাতিক আদালতে ঠিক মতো সওয়ালই করতে পারেননি। পাক সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তানকে নিজেদের বক্তব্য জানানোর জন্য যে ৯০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল, তা পাকিস্তান কাজে লাগাতে পারেনি। রশিদ আসলামের কথায়, ‘‘পাকিস্তানকে ৯০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল সওয়াল করার জন্য। তার মধ্যে ৪০ মিনিটই পাকিস্তান নষ্ট করেছে। আমি অবাক হয়ে গিয়েছি, এত অল্পেই কেন আমরা আমাদের সওয়াল শেষ করে দিলাম।’’
পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল পিপিপি-র নেত্রী শেরি রহমানও পাক সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছেন। পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা আন্তর্জাতিক আদালতে নিজেদের অবস্থান ঠিক মতো তুলে ধরতেই পারেননি বলে শেরি রহমানের দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা শুধু আদালতের এক্তিয়ার সংক্রান্ত বিষয়েই সওয়াল সীমাবদ্ধ রেখেছিলাম এবং প্রমাণিত হল যে সেই সওয়াল দুর্বল ছিল।’’ কুলভূষণ যাদবের ‘চরবৃত্তি’ সংক্রান্ত তথ্য আরও বেশি করে আন্তর্জাতিক আদালতের সামনে তুলে ধরা উচিত ছিল বলে মত পিপিপি নেত্রীর।
মুখ বাঁচাতে ইসলামাবাদ অবশ্য এখন বলছে, আন্তর্জাতিক আদালতের এই নির্দেশ মানতে তারা বাধ্য নয়। কুলভূষণ যাদবের মামলা পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় এবং এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার এক্তিয়ার আন্তর্জাতিক আদালতের নেই। বক্তব্য পাক সরকারের। এ কথা যদি জানাই ছিল যে কুলভূষণ মামলায় হস্তক্ষেপের কোনও অধিকার আন্তর্জাতিক আদালতের নেই, তা হলে সে মামলায় পাকিস্তান অংশ নিল কেন? প্রশ্ন উঠেছে পাকিস্তানেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy