Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠন নিয়ে বিতর্ক পাক বিচারপতিদের

পাকিস্তান কি কোনও দিন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হতে পারবে— প্রশ্নটা উঠেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। পাক সংবিধানের উচ্চ পর্যায়ের বিচারকদের নিয়োগ সংক্রান্ত ১৮তম সংশোধনী এবং সামরিক আদালতে কট্টরপন্থী জঙ্গিদের বিচার সংক্রান্ত ২১তম সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে সোমবার একটি শুনানির সময় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের প্রশ্নটি তোলেন খোদ প্রধান বিচারপতি নাসির উল মুল্ক। ১৭ জন বিচারপতির গোটা আদালতই এই বিষয়ের শুনানিতে যুক্ত।

সংবাদ সংস্থা
ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৫ ০৩:৪৮
Share: Save:

পাকিস্তান কি কোনও দিন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হতে পারবে— প্রশ্নটা উঠেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। পাক সংবিধানের উচ্চ পর্যায়ের বিচারকদের নিয়োগ সংক্রান্ত ১৮তম সংশোধনী এবং সামরিক আদালতে কট্টরপন্থী জঙ্গিদের বিচার সংক্রান্ত ২১তম সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে সোমবার একটি শুনানির সময় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের প্রশ্নটি তোলেন খোদ প্রধান বিচারপতি নাসির উল মুল্ক। ১৭ জন বিচারপতির গোটা আদালতই এই বিষয়ের শুনানিতে যুক্ত।

মুল্কের প্রশ্ন, সংবিধানে মূলগত পরিবর্তন কি আদৌ করতে পারে দেশের পার্লামেন্ট? তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান’ এই শব্দবন্ধ থেকে ইসলাম কি সরানো সম্ভব, অর্থাৎ ইসলামি রাষ্ট্রের পরিবর্তে পাকিস্তান কি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হতে পারে? সে ক্ষেত্রে সংবিধান পরিবর্তন কী ভাবে হবে? কোনও সংগঠিত বিপ্লবের বদলে জনতার মধ্যে থেকে যদি এই দাবি ওঠে, তা হলেই বা কী ভাবে সংবিধান সংশোধন হবে? প্রধান বিচারপতির আরও প্রশ্ন, সংশোধন কি বর্তমান পার্লামেন্ট করতে পারে, নাকি তার জন্য গণ পরিষদের প্রয়োজন?

আলোচনার সূত্রে বিচারপতি মইন সাকিব নিসার প্রশ্ন করেন, কোনও রাজনৈতিক দল যদি তার ইস্তাহারে ধর্মনিরপেক্ষতাকে সমর্থন জানায় ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তা হলে সেই দল কি সংবিধান পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে? বিচারপতি হামিদ খান উত্তরে বলেন, হলফনামা ছাড়া তা অসম্ভব। সে ক্ষেত্রে গণপরিষদই একমাত্র সংবিধানে পরিবর্তন করতে পারে।

বির্তকের সূত্রপাত হয় বিচারপতি আসিফ সইদ খোসার বক্তব্য থেকে। তিনি বলেছিলেন, ইসলামের নামে ১৯৪৭ তৈরি হয়েছিল পাকিস্তান। তখনই ঘোষণা করা হয়েছিল, দেশের ধর্ম বলতে ইসলামকেই বোঝানো হবে। কিন্তু ইসলামের পক্ষে ছিলেন যাঁরা, পূর্ব পাকিস্তানের সেই জনতার সিংহভাগই স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাওয়ার পরে বাংলাদেশ তৈরি করে সরে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতাকে গুরুত্ব দিয়েই নতুন সংবিধান গড়ে তোলা হয়েছিল।

বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেনারেল হুসেন মহম্মদ এরশাদ সংবিধানের মূলগত চরিত্র বদলে ইসলামে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তিনি সে কাজে সফল হননি। বাধা এসেছিল দেশের সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তাধারা যে পাল্টে যায়, সে কথা বোঝাতেই বিচারপতি খোসার এই অতীতচারণ।

তিনি জানান, রাজতন্ত্র থেকে চিনও ভিন্ন মতাদর্শে পৌঁছেছে। অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পরে তুরস্কেও ইসলামি রীতিনীতি পালন করতে দেওয়া হতো না।

গণপরিষদই যদি সংবিধান সংশোধন করে, তা হলে কী ভাবে গণপরিষদ গঠন করা হবে সেই প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি নিসার। বর্তমান পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে কি সেটা সম্ভব? সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের সব সিদ্ধান্তই কি গণপরিষদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে? যদিও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ইসলামই যে রাষ্ট্রের একমাত্র ধর্ম হবে, তা বরাবরই সর্বসম্মত ভাবে সবাই মেনে এসেছেন। তবে বিচারপতি খান এ কথা বলে জানান, ১৯৪৯ এ অবশ্য গণপরিষদে যখন নিরপেক্ষ প্রস্তাব অনুসরণের কথা বলা হয়েছিল, মুসলিম সদস্যরা তা মেনে নিলেও যাঁরা মুসলিম নন, তাঁরা তীব্র আপত্তি জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE