বড়দিনের মুখে আইএস হামলা চালাল ভিড়ে ঠাসা গির্জায়। মারা গিয়েছেন ৯ জন। আহতের সংখ্যা অন্তত ৫০। পুলিশ ও নিরপত্তারক্ষীদের তৎপরতায় আজ দ্রুত জঙ্গিমুক্ত করা হয় বালুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটার ওই গির্জাটি। তাদের হাতে খতম হয়েছে দুই জঙ্গি।
‘বেথেল মেমোরিয়াল’ গির্জায় এ দিন সকাল থেকেই ছিল নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন। ‘সানডে স্কুল ক্রিসমাস প্রোগ্রাম’ শুরু হয়েছে সবে। আচমকা গির্জার দরজা দিয়ে পড়ার চেষ্টা করে দু’জন। দু’জনের হাতেই আগ্নেয়াস্ত্র। এক জনকে গির্জার মূল ফটকেই গুলি করে খতম করে নিরাপত্তারক্ষীরা। অন্য জন কোনও ভাবে ভিতরে ঢুকে হল ঘরের সামনে নিজেকে উড়িয়ে দেয়। দু’জনের পোশাকেই লুকোনো ছিল আত্মঘাতী জ্যাকেট। এক জনের বয়স বড় জোর ষোলো। অন্য জন কুড়ির কোঠায়। আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করলেও, এর সমর্থনে কোনও প্রমাণ দেয়নি। কোয়েটা পুলিশ জানিয়েছে, জঙ্গিদের দলে আরও অন্তত দু’জন ছিল। তাদের খোঁজে বালুচিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চলছে ।
স্থানীয় সদর হাসপাতালের মুখপাত্র চিকিৎসক ওয়াসিম বেগ জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে ন’জনের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। বড়দিন উপলক্ষে প্রতি ডিসেম্বরেই নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন ‘বেথেল মেমোরিয়াল’ গির্জা কর্তৃপক্ষ। আজ রবিবারের বিশেষ প্রার্থনা থাকায় গির্জায় কমপক্ষে ৪০০ জন ছিলেন। বালুচিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফাজ বুগতি জানিয়েছেন, গির্জায় ঢুকে উপস্থিত সকলকে পণবন্দি করার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। কিন্তু তৎপর পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের সফল হতে দেয়নি। মাত্র ষোলো মিনিটের অভিযানে গির্জা চত্বর জঙ্গিমুক্ত করা গিয়েছে। না হলে হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি হতো। এই সূত্রে জঙ্গি দমন অভিযানে পাক পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
একই সুর প্রত্যক্ষদর্শীদেরও। তাঁদের এক জন বললেন, ‘‘গির্জার ভিতরে ঢুকতে পারেনি ওরা। বাইরে থেকেই এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ছিল। হল ঘরের কাচ ভেঙে পড়ে। গুলির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন কেউ কেউ। তবে দ্রুত খবর যায় অ্যাম্বুল্যান্সে।’’
বালুচিস্তান পুলিশের আইজি-র কাছে গোটা ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সানাউল্লাহ জেহরি। দেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপর এই হামলার কড়া নিন্দা করেছেন পাক সেনাপ্রধান কমর জাভেদ বাজওয়া। সেই সঙ্গেই নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন তিনি। হামলার নিন্দায় সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন পাকিস্তান তেহরিক-এ-ইনসাফ প্রধান ইমরান খান। টুইটারে লেখেন, ‘‘বড়দিন আসছে। সরকারের এখন উচিত দেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।’’ হামলার সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও।
পাকিস্তানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপরে জঙ্গি হামলা এই প্রথম নয়। দু’বছর আগে লাহৌরের এক গির্জায় তালিবানি আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ১৫ জনের। আহত হন ৭০ জনেরও বেশি। ২০১৩ সালে পেশোয়ারে একটি গির্জায় জোড়া বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ৮০ জনের। আহত হন শতাধিক মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy