সন্ত্রাস দমনের নামে পাকিস্তানের ‘প্রতারণা’কে সামনে নিয়ে এলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার বছরের প্রথম টুইটেই ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে তাঁর অভিযোগ, ‘‘জঙ্গি দমনের নামে ১৫ বছর ধরে পাকিস্তান আমাদের থেকে ৩৩০০ কোটি ডলার নিয়ে গিয়েছে। অথচ বিনিময়ে ঝুড়ি-ঝুড়ি মিথ্যে বলা ছাড়া কিছুই করেনি।’’
হোয়াইট হাউসের সূত্র বলছে, প্রেসিডেন্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, আগামী দিনে হয়তো জঙ্গি-দমন খাতে আমেরিকার থেকে একটি ডলারও পাবে না পাকিস্তান! ট্রাম্পের টুইটেও এমনই ইঙ্গিত— ‘‘আর নয়। ওরা কি আমাদের বোকা ভাবে? আফগানিস্তানে একার চেষ্টায় জঙ্গিদের মারছি, অথচ এদেরই স্বর্গরাজ্য পাকিস্তানে। এটা চলতে পারে না।’’ কূটনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, ট্রাম্পকে এর আগে এতখানি রুষ্ট মনে হয়নি। শোনা যাচ্ছে, ইসলামাবাদের জন্য বরাদ্দ এক লপ্তে প্রায় সাড়ে ২৫ কোটি ডলারও আটকে দিতে চলেছে ওয়াশিংটন।
ট্রাম্পের ঝাঁঝালো টুইটের পর-পরই মুখ খোলেন পাক বিদেশমন্ত্রী খাজা মহম্মদ আসিফ। বলেন, ‘‘ট্রাম্পের হুমকিতে আমাদের কিছু যায় আসে না। কাবুলে আমরা যে আর কিছু করতে পারব না, সেটা আগেই আমেরিকাকে জানিয়ে দিয়েছি। এ সব হুমকি আসলে আফগানিস্তানে হেরে যাওয়ার হতাশা।’’ তবে এ দিনই লস্কর, জামাতের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর পাশাপাশি কিছু ধর্মীয় সংগঠনের তহবিল সংগ্রহের কাজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ট্রাম্পের কড়া মনোভাব দেখেই এমন পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ।
আরও পড়ুন: আর বরদাস্ত নয় পাক মিথ্যাচার: চরম বার্তা ট্রাম্পের
পাকিস্তানকে চাপের পাশাপাশি আফগানিস্তানে তালিবানের বিরুদ্ধে হামলাকেও এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে আমেরিকা। নয়া আফগান-পাক নীতি ঘোষণা করে তালিবান নিকেশ করার ডাক দিয়েছিলেন ট্রাম্প। যেমন কথা, তেমন কাজ। রবিবারই হেলমন্দ প্রদেশে বিমান হানায় ২১ জন তালিবান জঙ্গিকে মেরে মার্কিন বাহিনী বুঝিয়ে দিয়েছে, আফগান মুলুকে তাদের হামলা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।
প্রায় কোণঠাসা তালিবানও বাস্তবটা ভালই টের পাচ্ছে। রবিবার দু’ডজন যোদ্ধা খোওয়ানোর পরে তালিবান আজ বিশ্ব নেতৃত্বের উদ্দেশে প্রস্তাব দিয়েছে, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী সরিয়ে নিতে ট্রাম্পকে চাপ দেওয়া হোক। এমনকী তালিবান মুখপাত্র জাবিহুল্লা মুজাহিদের ইঙ্গিত, তেমন পরিস্থিতি এলে, কোন সময়ে আমেরিকা বাহিনী তুলতে পারে, তা নিয়েও আলোচনায় রাজি তালিবান।
বেশ কিছু দিন ধরেই আফগানিস্তান রক্তাক্ত হচ্ছে জঙ্গি হামলায়। একের পর এক হামলার দায় নিচ্ছে আইএস। এই সময়ে তালিবান মুখপাত্রের বক্তব্য তাৎপর্যের। সম্প্রতি বেজিংয়ে আফগান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও চিনের বিদেশমন্ত্রীরা। পরে একটি বিবৃতি জারি করে তিন দেশ তালিবান নেতৃত্বকে দ্রুত শান্তি প্রক্রিয়ায় সামিল হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। তার পরেই অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে তালিবান।
পাকিস্তান, চিনের নেতৃত্ব কাবুলে শান্তি ফেরাতে আদৌ কতটা আগ্রহী, তা নিয়ে ভারতীয় কূটনীতিকদের প্রশ্ন রয়েছে। তবে তালিবান মুখপাত্রও শান্তির প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। তার বক্তব্য, আমেরিকাই যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব মার্কিন বাহিনীর আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়া জরুরি। তার পরেই মিটমাটের প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy