Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
উত্তর দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট

বন্দুককে ঘেন্না করি, ট্রাম্পকে চিঠি খুদের

চিঠি এসেছে আট বছরের মেয়ে এভার নামে। প্রেরক যে খোদ প্রেসিডেন্টডোনাল্ড ট্রাম্প, বুঝতে দেরি হয়নি টাউনভিলের বাসিন্দা মেরির।

এভা অলসেন

এভা অলসেন

সংবাদ সংস্থা
টাউনভিল শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:০০
Share: Save:

লেটারবক্সটা খুলে চমকে গিয়েছিলেন মেরি অলসেন। একটা খাম। বাঁ দিকের কোনটায় লেখা তিনটে শব্দ— ‘দ্য হোয়াইট হাউস’।

চিঠি এসেছে আট বছরের মেয়ে এভার নামে। প্রেরক যে খোদ প্রেসিডেন্টডোনাল্ড ট্রাম্প, বুঝতে দেরি হয়নি টাউনভিলের বাসিন্দা মেরির। তবু খুদেকে দেওয়ার আগে নিজে একবার চোখ বুলিয়ে নেন চিঠিতে। তাঁর ছোট্ট মেয়েটা যে ভাল নেই। সেই কথাই সে কিছু দিন আগে চিঠি লিখে জানিয়েছিল প্রেসিডেন্টকে। তারই জবাব এসেছে হোয়াইট হাউস থেকে— ‘‘প্রিয় এভা, তোমার চিঠির জন্য অনেক ধন্যবাদ। তুমি খুব সাহসী। তোমার বন্ধু জেকবকে হারানোর কথা শুনে আমি ও মিসেস ট্রাম্প খুব কষ্ট পেয়েছি।’’

জেকবের কথাই লিখেছিল এভা। ভারী কাচের চশমা পরা সাড়ে তিন ফুটের হাসিখুশি বন্ধুটিকে খুব ভাল লাগত তার। জেকবকেই শুধু চুমু খেয়েছিল সে। ঠিক করেছিল, বড় হলে জেকবকেই বিয়ে করবে। কিন্তু ১৫ মাস আগে এক বিকেলে তছনছ হয়ে যায় ছোট্ট এভার ছোট ছোট স্বপ্ন।

সাউথ ক্যারোলাইনার টাউনভিল শহরের এলিমেন্টরি স্কুলে পড়ে এভা। সে দিন স্কুলে টিফিনের সময় হয়েছে। এভা বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে-খেলতে স্কুলের মাঠে গিয়েছিল। হঠাৎই বছর চোদ্দোর এক পড়ুয়া গাড়ি নিয়ে মাঠে ঢুকে পড়ে। তার পর পিস্তল বার করে পরপর তিনটে গুলি। একটি গুলি গিয়ে লাগে এভার ফার্স্ট গ্রেডের শিক্ষিকার কাঁধে। আর একটি লাগে সহপাঠীর পায়ে। তৃতীয় গুলিটি লেগেছিল ফুঁড়ে দেয় ছ’বছরের জেকব হলকে। তিন দিন পরে মারা যায় এভার প্রিয় বন্ধু।

মর্মস্পর্শী: বন্ধু জেকবের (ডান দিকে) মৃত্যুর কথা জানিয়ে এভার সেই চিঠি। উত্তর পাঠিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (মাঝখানে)। ছবি: ফেসবুক

সবটাই চোখের সামনে ঘটতে দেখেছিল খুদে। আতঙ্কে শিউরে উঠেছিল। তার পর থেকে আর স্কুল যেতে পারেনি এভা। মা-বাবা তাকে মনোবিদের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। আপাতত কিছু দিন বাড়িতেই পড়াশোনা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু তাতেও ভয় কাটছিল না এভার। এক বিকেলে রান্নাঘরের টেবিলে খাতা-পেন্সিল নিয়ে চিঠি লিখতে বসে সে। —‘‘প্রিয় মিস্টার প্রেসিডেন্ট...,’’ গোটা গোটা হরফে লিখেছিল, ‘‘আমি সবটা শুনেছি, সব কিছু দেখেছি। আমার সব চেয়ে প্রিয় বন্ধুর গায়ে গুলি লেগেছিল। ও মারা গিয়েছে। আমার খুব মন খারাপ। আমি ওকে খুব ভালবাসতাম। বন্দুক দেখলে আমার খুব ঘেন্না হয়।’’ স্কুলে-স্কুলে বন্দুকবাজ হামলা থেকে কী ভাবে বাচ্চাদের বাঁচানো যায়, চিঠিতে সে প্রশ্নও তুলেছিল খুদে।

অভিযুক্ত পড়ুয়া জেস অসবোর্নের বিচার চলছে। নাবালক আইনে বিচার হবে, নাকি বড়দের মতো করেই বিষয়টাকে দেখা হবে, এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তদন্তে জানা গিয়েছে, স্কুলের বন্ধুরা জেসকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করত। সেই রাগেই বাবার বন্দুক নিয়ে স্কুলে গিয়ে হামলা করেছিল সে।

এভার জন্য দুঃখপ্রকাশ করলেও বন্দুক-আইন নিয়ে আলাদা করে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি ট্রাম্প। বরং তাঁর জবাবে অনেকেই মনে করছেন, দেশবাসীর নিরাপত্তার উপরে জোর দিলেও বন্দুক আইন বদলাতে নারাজ তিনি। যদিও ছোট্ট এভার কাতর আর্জি— ‘‘প্রেসিডেন্ট, দয়া করে বন্দুক থেকে ছোটদের বাঁচান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE